আতঙ্ক নয়, সুস্থ থাকতে দরকার সতর্কতা অবলম্বন

 

কলেরায় এক সময় গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করেছে। কলেরার সে যুগ বহু আগেই গত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিজ্ঞান শুধু কলেরাই নয়, যক্ষ্মা-ক্যানসারসহ জটিল বহু রোগেরই সুচিকিৎসা নিশ্চিত করেছে। একই সাথে কোন কোন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, কেন ডায়রিয়া মহামারি আকারে ছড়ায় তার কারণগুলোও শনাক্ত করেছে। মহামারি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখন আর আগের মতো নড়বড়ে নয়। ফলে আতঙ্ক নয়, বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনই সুস্থ থাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কয়েকটি মহল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ আকারে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড়শ। হাসপাতালে উপচেপড়া রোগীর ভিড় সামলাতেই হিমসিম অবস্থা। চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও সেবিকাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও চিকিৎসক ও সেবিকাদের তলব করা হয়েছে। জেলার পদস্থ কর্মকর্তারাও হাসপাতাল পরিদর্শন করে চিকিৎসার খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালটির নাম আধুনিক হাসপাতাল হলেও মাত্র দেড়-দুশো ডায়রিয়া রোগীর চাপেই তেরাহি অবস্থা ফুটে উঠেছে। যদিও আশার বাণী হলো, ডায়রিয়া রোগীদের জীবনরক্ষা স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপথ্য পর্যাপ্ত রয়েছে। সংকট রোগী রাখার জায়গা আর লোকবল। হাসপাতালটি এক সময় ৫১ শয্যা বিশিষ্ট ছিলো। ১শ শয্যায় উন্নীত হলেও প্রয়োজনীয় লোকবল দেয়া হয়নি। অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার পাশাপাশি লোকবলের চাহিদা পূরণ সময়ের দাবি। অবাক হলেও সত্য যে, জেলা সদরের একটি হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পদ নেই। ছিলো। এক সময় তা বিলুপ্ত করার পর পুনরায় তা আর সৃষ্টি করা হয়নি। ফলে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারদেরই পালাক্রমে জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার পাশাপাশি কয়েকটি মহল্লায় ব্যাপকভাবে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় অনেকেই অভিযোগ তুলে বলেছেন, পৌর সরবরাহকৃত পানি দুর্গন্ধযুক্ত। এ পানি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষারও উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অবশ্য পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পৌর সরবরাহকৃত পানিতে সমস্যা নেই। থাকলে পৌর পানি সরবরাহকৃত সকল এলাকায় একই সমস্যা দেখা দিতো। কারণ, পৌরসভার পানি সরবরাহ লাইন জালের মতো সকল এলাকায় সংযুক্ত। এরপরও পৌর কর্তৃপক্ষ পানির পাম্প ও রিজার্ভ ট্যাঙ্ক পরিষ্কারসহ পানি বিশুদ্ধকরণের ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছে। একই সাথে পানি ফুটিয়ে বা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করে পান করার আহ্বান জানিয়ে বাসিপচা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। এ ছাড়াও বাড়তি সকর্তকতা হিসেবে খাওয়ার আগে ও মল ত্যাগের পরে দু হাত ভালোভাবে সাবান অথবা ছাই দিয়ে ধুয়ে নিতে বলেছেন। নিজ নিজ পানির রিজার্ভ ট্যাঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার করতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, পানির লাইন লিকেজ থাকলে সাথে সাথে পৌর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন। খাবার সবসময় ঢেকে রাখুন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখুন।

যেহেতু ডায়রিয়া পানি ও খাবারবাহী রোগ। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি সতর্কতাই যথেষ্ট। এরপরও পাতলা পায়খানা আর বমি শুরু হলে দ্রুত খাবার স্যালাইনসহ তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হয়। এক মুষ্ঠি গুড় আর এক চিমটি লবণ দিয়েই খাবার স্যালাইন তৈরি করা যায়। খাবার স্যালাইনসহ তরল খাবার খেয়েও অবস্থার উন্নতি না হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। কালবিলম্ব মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তা ছাড়া ডায়রিয়া রোগীদের জন্য হাসপাতালে ভর্তি ফি যেমন ফ্রি তেমনই স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধপথ্যও নিখরচায় সরবরাহ করা হয়। হচ্ছে। ফলে আতঙ্ক নয়, সুস্থ থাকতে সতর্ক হোন।