গাংনীর ছেউটিয়া নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার :দেশীয় মাছের বংশবৃদ্ধি হুমকির মুখে

 

 

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর গাংনীর ছেউটিয়া নদীতে অবৈধ বাঁধ দিয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ শিকার করা হচ্ছে। প্রজনন মরসুমে অবাধে এসব সুস্বাদু মাছ শিকারের ফলে দেশীয় জাতের মাছের বংশবিস্তার হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে প্রজননকালীন মাছ শিকার নিষিদ্ধ হলেও ব্যাপকভাবে নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করেই চলেছে এলাকার অনেকেই। মৎস্য অধিদফতর মাছ শিকার বন্ধে মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও তাতে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

জানা গেছে, পাঁচ-ছয় বছর পর এবার বর্ষার শুরুতে মেহেরপুরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে এলাকার খাল-বিল ও নদী-নালা পানিতে ভরে উঠেছে। এ সুযোগে কিছু অসাধু মাছ শিকারি নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে অবাধে মৎস্য নিধন করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর সবচেয়ে বেশি বাঁধ দেয়া হয়েছে ছেউটিয়া নদীতে। নদীটি গাংনী উপজেলার কাষ্টদষ্ট বিল থেকে শুরু হয়ে হাড়িয়াদহ, মহিষাখোলা, ভাটপাড়া, কষবা, খড়মপুর, কচুইখালী, জুগিন্দা ও সদর উপজেলার বর্শিবাড়িয়া ও রাজনগর গ্রাম পার হয়ে ভৈরব নদীর সাথে মিলেছে। ওই সীমানার মধ্যে প্রায় শতাধিক বাঁধ রয়েছে। প্রতিটি বাঁধ আড়াআড়ি স্থাপন করা হয়েছে। বাঁধের সাথে কারেন্ট জাল ও স্থানীয়ভাবে তৈরি মাছ ধরার উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কোনোভাবেই মাছ চলাচল সম্ভব নয়। ফলে দেশীয় মাছের বংশবিস্তার চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একসময় মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও খাল-বিলে প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। এরই মধ্যে কিছু প্রজাতি হারিয়ে গেলেও এখনো নদ-নদীতে কৈ, শিং, মাগুর, টেংরা, পুঁটি, বাইম, মেনি, গচি, পাকাল, টাকি, শোল, গজার, বোয়াল, পাবদা, চিংড়ি মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছ এলাকার মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটায়। এছাড়া মাছ শিকার ও বিক্রির সাথে এখনো অনেক জেলে জড়িত। নদীতে বাঁধ দেয়ায় এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

মহিষাখোলা গ্রামের খবির উদ্দীন জানান, খেপলা জাল দিয়ে তিনি মাছ ধরে বিক্রি করেন। কিন্তু যত্রযত্র বাঁধ দেয়ায় এবার তাদের কপাল পুড়েছে। নদীতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারি একজন জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই মাছ শিকার করে আসছি। তাই এবারো শুরু করেছি।’

অন্যদিকে দেশীয় প্রজাতির মাছ নিধন ও বংশবৃদ্ধির অন্তরায়ের বিষয়ে ১৯৯০ সালের মৎস্য সংরক্ষণ আইনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আইনটি কয়েকবার সংশোধন হলেও নিধন এবং বংশবৃদ্ধিতে বাধার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিধন বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করে বিশেষজ্ঞরা।জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ মেছবাহুল হক জানান, ২৬০ প্রজাতির দেশীয় মাছের প্রজনন মরসুম চলছে। বিশেষ করে ছোট মাছগুলো প্রজনন মরসুম শুরু হয় বর্ষায়। এ সময় মাছ শিকার বন্ধ করা গেলে দেশের নদ-নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যেত।

ধানখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরেই মহিষাখোলা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছেউটিয়া নদীতে বাঁধ দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক জানান, এটি বন্ধ করতে ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এলাকায় মাইকিং করে বাঁধ অপসারণ করতে বলা হয়েছে।

গাংনী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, বর্ষার শুরু হলেই এলাকার কিছু মানুষ নদীতে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করতে থাকে। এ সময় মাছ শিকার নিষিদ্ধ সত্ত্বেও তারা একই কাজ করে যাচ্ছে। মাইকিং করে নিষেধ করা হয়েছে।গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শিগগিরই এসব বাঁধ অপসারণ করা হবে। নদীতে বাঁধ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।