কোনটি মেছোবাঘ, কোনটি বাগডাশা তা নিয়ে বিতর্কের চেয়ে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী নিধন রোধে সোচ্চার হওয়াই শ্রেয়। এ সময়ের দাবিও বটে। যে ধরিত্রীতে আছি তা যদি রক্ষা করতে না পারি তা হলে অস্তিত্ব বিলীন অনিবার্য। ধরিত্রী যদি মানুষের জন্যই হয় তা হলে মানুষের জন্যই বন্যপ্রাণী, পরিবেশ। আর তার ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারার কুফল মানুষকেই বহন করতে হবে। ইতোমধ্যেই মানুষ তার খেসারত দিচ্ছেও। ঘুরে ফিরে বৈরী আবহাওয়া খেসারতেরই অংশ।
যেদিন সভ্যতার শুরু, সেদিনই পরিবেশ বিপন্নের সূত্রপাত। মানুষ মানুষের জন্যই পরিবেশের ভারসাম্য গ্রাস করেছে। করছে। অথচ সচেতন সমাজ জানে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারলে মানুষের অস্তিত্ব থাকবে না। জানার পরও কেন পরিবেশ বিপন্নের পথে হাঁটা? কেন বন্যপ্রাণী নিধন? কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে সবুজ বিপ্লবে বাংলাদেশ অনন্য উদাহরণ। তা হলে বন্যপ্রাণী নিধন রোধে দায়িত্বশীলতা নয় কেন? কারণ; সচেতনতার অভাব। এ জন্য বন্যপ্রাণী নিধন রোধে দেশে প্রচালিত আইনের যথাযথ প্রয়োগে অবহেলাও অনেকটা দায়ী। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী আটক এবং হত্যার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। প্রাণীটা বাগডাশা নাকি মেছোবাঘ তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। মেছোবাঘকে বাগডাশা বলা হয়েছে বলে কেউ কেউ দাবি করে বলতেই পারেন, ওর গোঁফ ছিলো না, মুখটাও মাছ খাওয়ার মতো। এ বিতর্কে কি বিরলপ্রজাতির বন্যপ্রাণী নিধন রোধ করা যাবে? বিতর্ক এড়িয়ে দেশের প্রাণিসম্পদ রক্ষায় আন্তরিক হওয়া জরুরি। এ জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও বন বিভাগকে ঢেলে সাজানো দরকার। অপরদিকে দেশে মাংসের চাহিদা পূরণে ঘরে ঘরে গবাদি পশুপালনে উদ্বুদ্ধ করতে প্রাণিসম্পদ বিভাগকে জবাবদিহিতার মধ্যে নেয়ার যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন বনবিভাগে কর্মরতদের কুম্ভঘুম ভাঙিয়ে দায়িত্বশীল করা। ঘুরে ফিরেই প্রাণিসম্পদ বিভাগের অজুহাত খাড়া হয় অপ্রতুলতা। বন বিভাগের অজুহাতও অভিন্ন। অপ্রতুলতা দূর করে তাদের ওপরই বন্যপ্রাণী হত্যারোধ এবং প্রাণিসম্পদ বিভাগের গবাদিপশুর মৃত্যু ঠেকানোর দায়িত্ব দিয়ে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ দায়িত্ব সরকারেরই।
শুধু বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী নয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে বন্যপ্রাণী নিধন-হত্যা শূন্যের কোঠায় নিতে হবে। এ জন্য শহরে ও গ্রামে সমানভাবে আইনপ্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। তাছাড়া বিরলপ্রজাতির প্রাণী বন্দী বা হত্যার মধ্যে বাহাদুরি নেই তাও দামাল ছেলেদের বোঝাতে হবে। কৌতূহলী হওয়া ভালো, হুজুগে-গুজবে মেতে নিজেদের ক্ষতি নিজেদের কি করা উচিত? ভাবতে হবে, ভাবাতে হবে। বাসযোগ্য রাখতে হবে প্রিয় পৃথিবী।