বেগমপুর প্রতিনিধি: সকল রোগেরই চিকিৎসা জানেন বলে প্রকাশ্যেই প্রতারণার দোকান খুলে বসেছেন সকিনা বেগম। তিনি জিন পরীর দোহায় দিয়ে হারিয়ে যাওয়া বা চুরি যাওয়া যেকোনো কিছুর সন্ধান, অবাধ্যকে বাধ্য করা, পরস্ত্রী ও প্রেমিক-প্রেমিকাকে বসে আনা, টিউমার, ক্যান্সারসহ সকল প্রকারের জটির কুটিল রোগই সেরে দেবেন বলে প্রচার-প্রচরণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মহা চিকিৎসক সেজে বসা সকিনা বেগমের অপচিকিৎসায় এলাকার সরল-সোজা অনেকে শুধু অর্থই হারাচ্ছে না, দাওয়ায় খয়ে জটিল রোগে আক্রান্তের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তেল ও পানিতে ফুঁক এবং আগাছা দিয়ে খাওয়ার ওষুধসহ তাবিজ বানিয়ে এলাকার সহজ-সরল মানুষকে দিচ্ছে ধোকা। প্রতিবাদ করলে জিন দিয়ে ঘাড় মটকে দেয়ার হুমকিতো আছেই। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের আকন্দবাড়িয়া নতুনপাড়ার সাত্তকের স্ত্রী সকিনা বেগম ওরফে বুড়ি নিজ বাড়িতে প্রতারণার ফাঁদ পেতে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রচুর পরিমাণ টাকা। তার পাতা প্রতারণার ফাঁদে পড়ছে এলাকার সহজ-সরল নারী-পুরুষ। দীর্ঘদিন থেকে সালেহা দম্ভের সাথে জিন-ভূত ও তার পোষা গুন্ডাপাণ্ডার ভয় দেখিয়ে প্রতারণা করলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
বৃহস্প্রতিবার বিকেলে সরেজমিনে সকিনার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অভিনব কৌশলে নানা অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে ভণ্ড কবিরাজ সকিনা ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। সাথে রয়েছে তার পোষ্য হাফেজের ছেলে তফিজ দালাল। বাড়ির চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলো সকিনার বেশ কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ। সেখানে গিয়ে যেকোনো কাজের জন্য প্রথমে তার সামনে ১০ টাকা ফেলতে বলেন, কিছুক্ষণ নানা অঙ্গভঙ্গি দেখানোর পর বললেন, সমাধানের জন্য বেশ কিছু টাকা খরচ হবে তারপর পেয়ে যাবেন বা সেরে যাবে রোগ। তবে চুরি যাওয়া মাল কে চুরি করেছে বা নিয়েছে তার নাম বলা যাবেনা। বললে গোলযোগের সৃষ্টি হবে। হারিয়ে যাওয়া বা চুরি যাওয়া জিনিস পেতে এখনই দিতে হবে টাকা। তা না হলে বিক্রি হয়ে গেলে আর পাওয়া যাবে না। আর যদি বিক্রি হয়েই যায় তা হলে টাকা বেশি লাগবে। কারণ জিন দিয়ে আনতে খরচ একটু বেশি পড়বে। টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর কাজ না হলে জিনের ভয় দেখিয়ে বিদায় করা হয় ভুক্তভোগীদের। সকিনা দেখানজিনের ভয় ও আর ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের তফিজ দেখায় পেশিশক্তি। সংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সেদিন আসরে বসতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন সকিনা। উপস্থিত রোগীরা সকিনার ধোঁকাবাজি বুঝতে পেয়ে শুরু করে কানাঘোষা।
বেশ কয়েকজন রোগীর ও গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রামে বুড়ি নামে পরিচিত সকিনা দীর্ঘদিন থেকেই কবিরাজ সেজে এলাকার সহজ-সরল মানুষকে ধোকা দিয়ে আসছে। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করতে গেলেই জিন-ভূত দিয়ে ক্ষতির ভয় দেখিয়ে আসছেন। এছাড়া তফিজের লোকজনতো আছেই। সকিনা তার বাড়িতে একটি ঘরে নিজের আস্তানা তৈরি করেছেন। আসরে বসার আগে ওজু করে পবিত্র হয়ে আসনে বসেন। সেখানে পানি, তেল ও মাটি পড়া, মাদুলি, ফুক সহ গাছ-গাছলা দিয়ে ওষুধ তৈরি করে মানব দেহের সব রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এ ক্ষেত্রে তার আস্তানায় জানান ফি ১০ টাকার বাইরে ওষুধ, মাদুলি, পানি পড়া ইত্যাদির জন্য বিশেষ কায়দায় ৫শ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। পাশাপাশি পরস্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকাকে বস করার জন্য বিশেষ ফি দিতে হয়। জনস্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর সকিনার নিজে হাতে তৈরি গাছ-গাছালির ওষুধ খেয়ে অনেকেই বড় ধরনের সমস্যা ভুগছে বলেও রয়েছে অভিযোগ। তবে সকিনার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছুই দিই না, সবকিছুতো জিনের কাজ। আমার কাছে ৭টি জিন আছে। ওরাই রোগ বুঝে ওষুধ দেয় কিংবা আমার মাধ্যমে সব জানিয়ে দেয়। সকিনার মা বলেন, ছোট বেলা থেকে আমার মেয়ের কাছেজিন আছে। সে নিজে কিছু করেনা সবকিছু জিনে করে। সকিনার স্বামী সাত্তক বলেন, আমি পাকা বাড়ি করছি লোকে ভাবছে কবিরাজির টাকা। আমার ১০/১১ বিঘা জমি আছে। আমার পরিশ্রমের টাকার বাড়ি বানাচ্ছি।
তবে এ মুহূর্তে সকিনা ও তার দালাল তফিজকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন বলে দাবি তুলেছে ভুক্তভোগী মহল। সকিনার প্রতারণার ফাঁদ থেকে এলাকার সহজ সরল মানুষকে ফিরাতে স্থানীয় পুলিশ প্রসাশনের পাশাপাশি সচতেনমহলকে এগিয়ে আসার দাবি তুলেছে ভুক্তভোগীরা।