বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রায় শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিদ্যালয়টিতে অদ্যাবধি লাগেনি কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া। শ্রেণিকক্ষের অভাবে চলে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান। বিদ্যালয়ে নেই কোনো বিদ্যুত ব্যবস্থা। ফাঁকা মাঠের মধ্যে বিদ্যালয়টি নির্মিত হলেও এখনও নির্মাণ হয়নি সীমানা পাঁচিল। এতো সব সমস্যার মধ্য দিয়েও অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে সবকিছু যেনো হারমেনে চলেছে। ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নানা সমস্যাকে মোকাবেলা করে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের সুনিপুন পাঠদানে প্রতিবছর ছাত্রছাত্রীরা করে চলেছে ভালো ফলাফল। বর্তমানে বর্ষা মরসুম হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে পাঠদানের পরিবর্তে শ্রেণি কক্ষেই অনেকটা গাদাগাদি করে চালাতে হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। ফলে মাঝে মধ্যেই কোমলমতি শিশুরা হয়ে পড়ছে অসুস্থ।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৮২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নানা প্রতিকুলতা কাটিয়ে নেই আর নেই করে অদ্যাবধি পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫১০ জন। ৫১০ জন ছাত্রছাত্রী থাকলেও তাদের জন্য নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ। পুরাতন ভবনে ছোট আকারের ৫টি শ্রেণিকক্ষে কোনোমতে চালানো হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। নেইকোনো বিদ্যুত ব্যবস্থা। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল বাশার, সহসভাপতি ছানোয়ার হোসেন ও সদস্য গোলাম সরোয়ার নান্নু অভিন্ন ভাষায় জানালেন তাদের আকুতির কথা। ইউনিয়নের মোট ১৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী এ বিদ্যালয়ে। ছাত্রছাত্রী অনুপাতে ১২ জন শিক্ষকের স্থলে রয়েছে মাত্র ৮ জন। শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষকরা বছরের বেশিরভাগ সময় কখনও খোলা আকাশের আবার কখনও গাছের নিচে পাঠদান করে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে বর্ষা মরসুম হওয়ায় গাছের নিচে পানি জমে স্যাতসেতে হয়ে যাওয়ায় তাও আর সম্ভব হচ্ছেনা। একটি বেঞ্চে ২ জনের স্থলে ৩-৪ জন ছাত্রছাত্রীকে বসিয়ে অনেকটা গাদাগাদি করে পাঠদান করাতে হচ্ছে।প্রচণ্ড গরমে মাঝে মধ্যেই কোমলমতি শিশুরা ২-৩ কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গতকাল সোমবার ৫ম শ্রেণির ছাত্র খালিদ হাসান রানাসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজা উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্রছাত্রীরা পড়ালেখার প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক। এদের লেখাপড়ার পরিবেশটা একটু ভালো করতে পারলে বিদ্যালয়ের ফলাফল আরও ভালো হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নান্টুরাজ বলেন, বিদ্যালয়টিতে বিদ্যুত ব্যবস্থা না থাকায় ফাঁকা মাঠের মধ্যে একা পাহারা দিতে ভয়ভয় করে। সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকার ভূতুড়ে পরিবেশে গা ছমছম করে ওঠে। মানসম্মত পরিবেশে কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়ার ব্যবস্থার জন্য বিদ্যালয়ে আধুনিক নতুন ভবন নির্মাণের পাশাপাশি বিদ্যুত ব্যবস্থা এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী হলেও তা আজও পূরণ হয়নি। জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়ে আধুনিক নতুন ভবন নির্মাণসহ বিদ্যুত ব্যবস্থার জন্য চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগরের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকার সচেতন অভিভাবকমহল।