মাথাভাঙ্গা মনিটর: ফুটবলের নন্দিত-তর্কিত মহানায়ক দিয়েগো ম্যারাডোনা।তিনি এখন ব্রাজিলেই আছেন। খেলার মাঠে না থেকেও তাকে ঘিরে বিশ্বময় আকর্ষণদুর্নিবার। ব্রাজিল তার ফেভারিট। তবে একেবারেই ষোলো আনা বিশ্বাসী নন। আবারবান্ধবীকে নিয়েও অশান্তিতে আছেন। এবারের বিশ্বকাপ জুড়ে ভেনিজুয়েলার একটিটিভি টকশোর উপস্থাপক হিসেবে দেখা যাবে তাকে। কিন্তু ফুটবল বাদ দিয়ে এমুহূর্তে হুলুস্থূল বাঁধিয়েছেন অন্য কারণে। তিনি তার ২৩ বছর বয়সী বান্ধবীকেচুরির দায়ে পুলিশে ধরিয়ে দিতে চান।
গত ফেব্রুয়ারিতে দিয়েগো ম্যারাডোনাএকটি টিভি অনুষ্ঠানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময় তাকে অবশ্য ‘নিরপেক্ষ’ দেখা যায়নি। তিনি টেলিসুর নামের ভেনিজুয়েলা সরকারের একটি টিভি চ্যানেলেরসঙ্গে বিশ্বকাপের বাসর কাটাতে চুক্তিবদ্ধ। হুগো শাভেজের শিষ্য নিকোলাসমাদুরোর নেতৃত্বাধীন সরকার এখন ভেনিজুয়েলা শাসন করছেন। ম্যারাডোনা বলেন, আমি ভেনিজুয়েলায় বিশ্বাস করি। তার কণ্ঠে ভেনিজুয়েলার জয়গান এতটাই প্রকাশপেয়েছে যে, ওই টিভি কোম্পানি মোহিত।
গত ৯ জুন থেকে ‘জুর্দা থেকে’ নামেরপ্রোগ্রাম সম্প্রচার শুরু হয়। রিওডি জেনেরোর ইন্টারন্যাশনাল ব্রডকাস্টসেন্টার থেকে ভেনিজুয়েলায় সরাসরি লাইভ দেখানো হবে। সরকারি টেলিভিশনপ্রতিদিন ২২ থেকে ২৩ ঘণ্টা টানা সম্প্রচার করবে আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনাএতে বলেন, ‘আমার প্রার্থী ব্রাজিল। তবে সেটা এটা মনে রেখে যে, প্রার্থীরাসব সময় পতন ডেকে আনে।’ ম্যারাডোনা ওই অনুষ্ঠানের প্রথম কয়েক মিনিট আধাকৌতুক, আধা সিরিয়াস মেজাজে দর্শক শ্রোতাদের উদ্দেশে একথা বলেন। তার সঙ্গেএই অনুষ্ঠানে তার যুগল হিসাবে যাকে দেখা যাবে তিনি উরুগুয়ের ব্রডকাস্টারভিক্টর হুগো মোরালেস। ১৯৮১ সাল থেকে আর্জেন্টিনায় বসবাসরত মোরালেস ইতিহাসেরসবচেয়ে বিখ্যাত ফুটবল ভাষ্যকারীদের অন্যতম। তার ধারাবিবরণীর বিখ্যাত গল্পহচ্ছে ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যারাডোনার দ্বিতীয় গোলটি। আরম্যারাডোনার ভাষ্যে ফুটবল, রাজনীতি, প্রতিপক্ষকে আক্রমণ আর পুরনো গল্প বলাপ্রত্যাশিত।
ফিফা বিশ্বকাপ থেকে চার বিলিয়ন ডলার নিয়েছে। ম্যারাডোনাকাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল ‘কেলেঙ্কারি’র জন্য ফিফার সভাপতি যোশেপ ব্লাটারেরসমালোচনায় উচ্চকিত। ওই টিভি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আপনি ব্লাটার সাহেবমাইক্রোসফটের মালিক বিল গেটসের মতো ধনী হচ্ছেন অথচ আপনি কোন কাজই করছেন না।আশা করা হচ্ছে যে, ম্যারাডোনা যে টকশোটি উপস্থাপনা করবেন, তাতেরাজনৈতিক ঝাঁঝ তীব্রই হবে। অনুষ্ঠানের নামকরণ থেকেই বুঝা যায়। ‘ফ্রমজুর্দা’ কথাটির মানে হলো ‘বাঁ-হাতি’। এই সাবেক ফুটবল তারকা মহানায়কেরবামপন্থা হচ্ছে আদর্শ। ম্যারাডোনা টিভি টকশোর প্রথম কয়েক মিনিটের মধ্যেইতার কমান্ডারের উদ্দেশ্যে চুমু পাঠান। তার এই কমান্ডার কিউবার বিশ্বখ্যাতনেতা ফিদেল কাস্ট্রো। ‘আমি কিউবায় বিশ্বকাপ দেখাবো।’ ম্যারাডোনারউচ্চারণ। এটা লক্ষণীয় যে, ম্যারাডোনা ও মোরালেস উভয়ে গত সোমবার বিশ্বকাপেকিউবার একমাত্র বিজয়ের বার্ষিকী স্মরণ করেছেন। কিউবার বিশ্বকাপ জয়ের গৌরববিশ্ববাসী ভুলতে বসেছে। পারতপক্ষে এ কথা কেউ স্মরণ করে না। ১৯৩৮ সালেরোমানিয়ার বিরুদ্ধে কিউবা ২-১ গোলে বিশ্বকাপ জিতেছিলো। অবশ্য এবারে বিশ্বকাপএলেও কিউবা নেই।
ম্যারাডোনা নিজের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৯০ সালের প্রতিযোগিতায় তিনি ইটালিতে এসেছিলেন, পায়ের আঙুলে ক্ষত নিয়ে।আর খেলতে এসে হাতের আঙুলের জখম পেয়েছিলেন। আর এরকমের পরিস্থিতিতে কোয়ার্টারফাইনালে তিনি ব্রাজিলের মুখোমুখি হন এবং তার জাতীয় দলকে বিজয়ের শিরোপা এনেদেন। ১৯৮২ সালের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ওই বছরটিতে আমি বাজপাখিধরাশায়ী করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হই। আর তাতে প্রচুর হৈচৈ ঘটে।তিনি ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ঈশ্বরের হাত প্রসঙ্গ না তুলেও স্মরণ করেন যে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় পেতে তাকে কত বেগ পেতে হয়েছে।
ম্যারাডোনা মনেকরেন চলতি বছরের বিশ্বকাপের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ফিফা। ম্যারাডোনার কথায় ‘আমার কোনো সন্দেহ নেই যে, ব্রাজিল একটি মহান বিশ্বকাপের জন্ম দেবে। কিন্তুফিফার লোকজনদের যেন আমরা ভুলে না যাই। তাদের ক্ষমতার কত খায়েশ। ক্ষমতা কতকুৎসিত! অপ্রিয় সত্য হচ্ছে তাদের জন্য বিশ্বের কোন শ্রদ্ধা নেই। দিলমানামটি নিয়ে আমি আনন্দ প্রকাশ করি ঠিকই। কিন্তু এই খেলাকে কেন্দ্র করে কিছুবাজে লোক জড়ো হয়েছে।’
টিভি টকশোতে এটাই ম্যারাডোনার প্রথম অভিজ্ঞতা নয়।স্পেনের ফোর স্ট্রিং টিভির জন্য ২০০৬ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপেরভাষ্যকার হয়েছিলেন। এক বছর আগেই ‘দ্য নাইট অব ট্রেন’ নামে একটিআর্জেন্টিনীয় টিভি ধারাবাহিকে যুগ্ম উপস্থাপকের ভূমিকায় ছিলেন। ওইঅনুষ্ঠানে তিনি পেলে, মাইক টাইসন ও ফিদেল কাস্ট্রো’র সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।