আলমডাঙ্গায় কবিরাজের বিরুদ্ধে দরিদ্রের সন্তান বিক্রি ব্যবসার অভিযোগ

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো আলমডাঙ্গার ভোদুয়া গ্রামের গোলাম কবিরাজের বিরুদ্ধে কবিরাজী করার অন্তরালে প্রলোভন দেখিয়ে দরিদ্রের সন্তান বিক্রি ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। পার্শ্ববর্তী মাজু গ্রামের হতদরিদ্র নজুকে ৭টি শাড়ি, ৩ কেজি মিষ্টি ও ১০ হাজার টাকা দিয়ে তার মাত্র ৭ দিনের শিশুসন্তানকে হাতিয়ে নিয়ে ঢাকা টঙ্গীর এক নিঃসন্তান দম্পতির নিকট ২ লাখ টাকায় বিক্রি করে। বিক্রিত শিশুকে টঙ্গী পৌঁছাতে গেলে এলাকার মানুষ গোলাম কবিরাজকে আটক করে। পরে সংবাদ পাঠিয়ে মাজু গ্রামের নজুকে ডেকে নিয়ে শিশুসন্তানটিকে ফেরত দেয়া হয়েছে।

জানাগেছে,আলমডাঙ্গার ভোদুয়া গ্রামের মৃত পিয়ার আলির ছেলে গোলাম এক সময় বিভিন্ন সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। সে সময় মাঝে মধ্যে তাকে পালিয়ে বেড়াতে হতো। এরই এক পর্যায়ে সে ঢাকা টঙ্গীর এক নিঃসন্তান দম্পতির বাড়ির নিচতলায় ছোট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতো। সেই সূত্রে ওই দম্পতির সাথে তার অন্তরঙ্গতা। কয়েক বছর সেখানে কাটিয়ে এলাকায় ফিরে এলেও ওই দম্পতির সাথে যোগাযোগ অব্যাহত ছিলো। বাড়িতে ফিরে আরও নানান অঘটনের শেষে গোলাম বনে যায় কবিরাজে।শুরু করে বাড়িতেই কবিরাজী। হেন রোগ নেই, যার চিকিৎসা তার অজানা। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে তার কাছে রোগী ছুটে আসে। এরই মাঝে এলাকায় রটে যায় সে শিশু বিক্রি ব্যবসার সাথে জড়িত।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা টঙ্গীর ওই নিঃসন্তান দম্পতির সাথে গোলাম কবিরাজ ২ লাখ টাকায় চুক্তি করে একটি শিশু কিনে দেয়ার। চুক্তি মোতাবেক সে নিঃসন্তান দম্পতির নিকট থেকে ২ লাখ টাকাও হাতিয়ে নেয়। অন্যদিকে, দালাল নিয়োগ করে কেউ শিশু বিক্রি করতে চায় কি-না। এরই মাঝে মিলেও যায় মওকা। পার্শ্ববর্তী মাজু গ্রামের আবুল কাশেমের মাধ্যমে সে ওই গ্রামের ছামেদ আলির হতদরিদ্র ছেলে নজুকে তার সদ্যজাত ৬নং শিশুসন্তানকে বিক্রি করতে রাজি করায়। তবে বিক্রি নয়, পোষাণি দিতে। নজুর ২ স্ত্রীর আরও ৫ সন্তান রয়েছে। তাদের ঠিকমতো দুবেলা খাওয়াতে পারেনা দিনমজুর নজু। বউ একটু ক্যান ক্যান করা সত্বেও সে রাজি হয়ে যায়। কাশেম আর গোলাম কবিরাজ তাকে বলেছে,তার সন্তান তো ভালোই থাকবে ধনীর সংসারে। ধনী ব্যক্তির সমস্ত সম্পত্তি তার ছেলের হবে।তার ওপর নগদ ১০ হাজার টাকা, ৭টি শাড়ি ও ৩ কেজি মিষ্টি পেয়ে সে আর না করেনি। মাত্র ৭ দিন বয়সী শিশুপুত্রকে তুলে দেয় গোলাম কবিরাজের হাতে। গত ৫ দিন পূর্বের এ ঘটনা। গোলাম ওই দিনই শিশুটিকে নিয়ে টঙ্গী ছুটে যায় নিঃসন্তান দম্পতির হাতে বুঝিয়ে দিতে। ওই সময় বাঁধে বিপত্তি। নিঃসন্তান দম্পতির অন্যান্য ভাইয়ের ছেলেরা ওই শিশুসন্তান গ্রহণ করতে দেয়নি। তারা গোলাম কবিরাজকে শিশু পাচারকারী বলে অভিযোগ তুলে আটকে রাখে। গোলাম কবিরাজ সে সময় জানিয়ে দেয় যে শিশুটি সে কম দামে কিনে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করতে এসেছে। এক পর্যায়ে সে শিশুটির ঠিকানা বলে দিলে তারা তা বিশ্বাস করেনি। শেষে শিশুটির পিতা নজুকে সংবাদ পাঠিয়ে টঙ্গীতে নিয়ে যাওয়া হয়। নজুর হাতে শিশুটি ফেরত দেয়ার পর মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরে গোলাম কবিরাজ।বর্তমানে ওই বিষয়টি এলাকায় সমালোচনার ঝড় তুলেছে।