স্টাফ রিপোর্টার: আজ দিবাগত রাত-পরম কাঙ্ক্ষিতমহিমাময় রজনী, পবিত্র লাইলাতুল বরাত। শবে বরাত। মহিমান্বিত ভাগ্যরজনী। পাপথেকে সর্বান্তকরণে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিষ্কৃতি লাভের অপার সৌভাগ্যেররাত। বর্ণিত আছে যে, সূর্য অস্তমিত হওয়ার পরক্ষণ থেকে আল্লাহ রাব্বুলআলামিনের নূরের তাজাল্লি পৃথিবীর নিকট আসমানে প্রকাশ পায়। তখন আল্লাহপাকবলতে থাকেন-আছে কি কেউ ক্ষমাপ্রার্থী?যাকে আমি ক্ষমা করবো?আছে কি কেউরিজিক প্রার্থী?যাকে আমি রিজিক প্রদান করব?আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত?যাকেআমি বিপদমুক্ত করবো?আল্লাহপাকের মহান দরবার থেকে প্রদত্ত এ আহ্বান অব্যাহতথাকে ফজর অবধি। বস্তুত শবে বরাত হলো আল্লাহপাকের মহান দরবারে ক্ষমাপ্রার্থনার বিশেষ সময়। আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের এক দুর্লভ সুযোগএনে দেয় এ রাত। এ রজনীর গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, পরবর্তী বছরের হায়াত, মউত, রিজিক, দৌলত, আমল প্রভৃতি যাবতীয় আদেশ-নিষেধ এরাতেই ফয়সালা করা হয়। অতএব, প্রতিটি কল্যাণকামী মানুষের প্রধানতম কর্তব্যহলো এ সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা। মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে পূর্ণরাত অতিবাহিত করা। তাত্পর্যপূর্ণ এই রাতে বিশেষ বরকত হাসিলের মানসে মুসলিমসম্প্রদায় রাত জেগে নফল নামাজ আদায় ও কোরআন তেলাওয়াত, ইবাদত-বন্দেগি, ইস্তেগফার, জিকির-আসকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়ায় মশগুল থাকেন।
লাইলাতুএকটি আরবি শব্দ, আর শবশব্দটি ফারসি। দুটি শব্দের অর্থই হলো রাত।অপরপক্ষে বারাআত শব্দের অর্থ হলো- নাজাত, নিষ্কৃতি বা মুক্তি। এ রাতেবান্দারা মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট থেকে মার্জনা লাভ করে থাকেন। এ কারণে এরাতকে লাইলাতুল বারাআতবা শবে বরাত বলা হয়। শাবান মাসের মধ্যর্তী রাতেপবিত্র শবে বরাত পালিত হয়। এ ব্যাপারে কুরআন শরীফে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নাথাকলেও হাদীস শরীফে এটাকে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রাত্রিনামে অভিহিত করা হয়েছে। এর পক্ষকাল পরেই আসবে রহমত বরকত নাজাতের মাহেরমজান। এ কারণে এটাকে বলা হয় রমজানের মুয়াজ্জিন।লাইলাতুল বারাআতমাসব্যাপী প্রশিক্ষণের পূর্বপ্রস্তুতি স্বরূপ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃকপ্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, ইরান ও ভারতীয়উপমহাদেশে এ মাসের একটি রজনীকে শব-ই-বরাতবলা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ারকোনো কোনো দেশের কোনো কোনো এলাকায় শবে বরাত ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত।আরববাসীরা এ রাতকে লাইলাতুন নিসফে মিন শাবানবলেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। মুআয ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, নবীকরীম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা এই রাতে সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টিদেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। আটজনসাহাবীর সূত্রে বিভিন্ন সনদে এই হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। শবে বরাত বিষয়ে এটিইএকমাত্র সহীহ হাদীস বলে মুহাদ্দিসগণ মনে করেন। তবে ক্ষমা পাওয়ার শর্ত হলোশিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকা।এ রাতে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে নফলনামাজ পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে এটাই কাম্য। নফলনামাজের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দু রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব হয় পড়তে থাকা।নিজের জন্য, নিজের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি,আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী ও সব মুসলমানের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা, তাওবা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা। সম্ভব হলে পুরুষের জন্য কবরস্থানে গিয়ে কবর জিয়ারত করা, কবরবাসীদের জন্য দোয়া করাও সওয়াবের কাজ।
এ রাতের নফল আমলসমূহবিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরয নামাজ জামায়াতের সাথে অবশ্যইমসজিদে আদায় করতে হবে। তবে নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ারকোনো প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন-তাবে তাবেঈনদেরযুগেও এর রেওয়াজ ছিলো না। তবে এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায়, তাহলেপ্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলের ব্যাঘাত সৃষ্টিকরবেন না।
এই রাতেই পরবর্তী বছর মৃত্যুবরণকারী মানুষ এবং পরবর্তীবছর জন্মগ্রহণকারী শিশুদের তালিকা করা হয়। এই রাতে শুদ্ধ মনে তওবা করার পরনিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে এবং ইসলামী বিধান মেনে চলতে হবে। আর এ রাতেহালুয়া-রুটি, ফিন্নী-পায়েশ, খিচুড়ি, বিরিয়ানি প্রভৃতি বিতরণ বাধ্যতামূলকনয়। আলোকসজ্জা, হালুয়া-রুটি আর আতশবাজির মেলা এ রাতের পবিত্রতায় আঘাতহানে। কারণ উত্সব নয়, কেবল প্রার্থনার রাত শবে বরাত।
যথাযথ মর্যাদায়ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে আজ পবিত্র শবে বরাত উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষেরাজধানীসহ দেশের প্রতিটি মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, জিকির-আজকারের আয়োজন করাহয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন আলোচনা এবং মিলাদ মাহফিলেরআয়োজন করেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আজ রাতভরওয়াজ মাহফিল, জিকির-আজকারের ব্যবস্থা করেছে। বাদ এশা থেকে বিশিষ্ট ওলামায়েকেরামগণ ওয়াজ করবেন। ফজরের নামাজ শেষে ভোরে মোনাজাত পরিচালনা করা হবে।
শবেবরাত উপলক্ষে কাল সরকারি ছুটি। এ রাতের তাত্পর্য তুলে ধরে রেডিও-টেলিভিশনেবিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। সংবাদপত্র প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।এউপলক্ষে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণীতে পবিত্র শবে বরাতেরশিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবার প্রতি মানব কল্যাণে ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগকরার আহ্বান জানান।