কটুক্তি শুনে মহিলা রোগীর কান্না : ডা. লতিফের ওপর ক্ষুব্ধ জনতার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা

 

দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস কক্ষে দরজা দিয়ে রক্ষা : ঘটনার জন্য ওষুধ দোকানি শাহিনসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা

দামুড়হুদা অফিস:মাথায় রক্তাক্ত জখম রোগীকে কটুক্তি করায় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল লতিফকে মারতে গিয়ে না পেরে ভাঙচুর করেছে স্থানীয় ক্ষুব্ধ জনতা। ডা. আব্দুল লতিফ নিজ অফিস কামরায় দরজা বন্ধ করে বসে রক্ষা পেয়েছেন। গতকাল বুধবার বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ডা. আব্দুল লতিফ অবশ্য এ ঘটনার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের ফার্মেসি মালিক শাহিনকে দোষারোপ করে বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে শাহিন তার লোকজনকে সাথে নিয়ে হামলা চালিয়ে সরকারি সম্পদ ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনাকে স্থানীয়দের অনেকেই দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহির্প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন। বিএমএ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীসহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, দর্শনা জয়নগরের ববিতা নামের (২৫) এক রোগী গতপরশু রাতে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সে তথা চিৎলা হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল বুধবার সকালে ডা. আ. লতিফ মহিলা ওয়ার্ড ভিজিটে গেলে ববিতার মাথায় ব্যান্ডেজ থেকে জানতে চান কী হয়েছে? ববিতা ডা. আ. লতিফকে বলেন,প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাতে মাথাফেটে গেছে। ক্ষতস্থানে৬টি সেলাই হয়েছে। একথা শুনে ডা. আব্দুল লতিফ বলেন,তোমার মাথা থেকে অনেক ঘেনু বের হয়ে গেছে, নিশ্চয় থানায় মামলা করবা তাই না? এ কথা শুনে রোগী মাথা নিচু করে। ডাক্তার ডা. আ. লতিফ স্থান ত্যাগ করেন। ববিতা ক্ষুব্ধ হয়ে ওয়ার্ডে থেকে নেমে কাঁদতে কাঁদতে কমপ্লেক্সের গেটের বাইরে যায়। হাসপাতাল গেটের লোকজন ববিতার নিকট বর্ণণা শুনে সংগঠিত হতে থাকে।প্রায় ৩০/৪০ জন ক্ষুব্ধ জনতা এসময় বাশ-কাঠ আর লাঠি নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ ডা. লতিফকে খুঁজতে থাকে। ডা. লতিফ বিষয়টি বুঝে তার অফিস রুমে ঢুকে দরজায় তালা লাগিয়ে নিরাপদে বসেন। পুলিশে খবর দেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা আফিসের ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। কেউ কেউ হাত দিয়ে ঘুসি মেরে জানালার কাঁচ ভাঙতে থাকে। তাতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ,স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ও আরএমও কর্মকর্তা ও সাধারণ আফিস কয়েকটি চেয়ার ও জানালার কাচ ভাঙচুর তছনছ হয়।

হামলাকারীরা হাসপাতাল প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। চিৎলা কদমতলার ফজলুল হকের ছেলে হিমেল (২২) রক্তাক্ত হয়। তার ডান হাত কাঁচে কেটে যায়। দামুড়হুদা থানা পুলিশ খবর পেয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত হয়। কিছুক্ষণ পর দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিকদার মশিউর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছান। উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু ঘটনাস্থলে পৌঁছুলে ডা. আ. লতিফ হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. আব্দুল লতিফ জানান, হাসপাতালের সামনে অবস্থিত ওষুধ বিক্রেতা শাহিন বেশ কিছুদিন ধরে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে। সমাজের চোখে আমাকে খাটো করার জন্য হাসপাতালের বাইরে থেকে আমার অফিস সহকারী খাবার পানি আনতে গেলে তাকে চড় থাপ্পড় দিয়ে মারধর করে। আজ সকালে শাহিন তার সাঙ্গোপাঙ্গো নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হাসপাতালে প্রবেশ করে আমাকে মারতে আসে। আমি আমার অফিসরুমে চলে গেলে ওরা হাসপাতালের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস ভেঙে তছনছ করে।

অপরদিকে ঘটনায় আহত হিমেল ও শাহীন জানান, দামুড়হুদা উপোজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডা. আ. লতিফ যোগদানের পর থেকে তিনি রোগীদের সাথে অসদ আচরণ করতে থাকে। রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। তিনি এখানে বসে গাদাগাদা কমিশন খান চুয়াডাঙ্গার আতিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। এসময় চুয়াডাঙ্গার আতিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার জন্য ডা. লতিফের লিখে দেয়া দুটি টোকেন সাংবাদিকদের সামনে মেলে ধরেন।

দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিকদার মশিউর রহমান এ বিষয়ে জানান, একজনের নাম উল্লেখ করে ২০/২২ জনের অজ্ঞাতনামায় একটি মামলা হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু জানান, বিষয়টি ন্যাক্কারজনক। সরকারি কর্মকর্তা বা ভবন/প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা মানে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করা। আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. আ. লতিফের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

এদিকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চুয়াডাঙ্গা শাখার সভাপতি ডা. মার্টিন হিরক চৌধূরী এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, বুধবার দুপুর ১২টার সময় জনৈক শাহীনের নেতৃত্বে আনুমানক ২০/২৫ জন উশৃঙ্খল ব্যক্তি লাঠিসোঁটা নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিসকক্ষে হামলা চলায়। তারা এ সময় জরুরি বিভাগ, অফিস কক্ষ, ডাক্তারের চেম্বার ভাঙচুর করে। এতে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ওই সকল লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করতে উদ্যত হয়। এব তার কক্ষ ভাঙচুরের চেষ্টা করে। এ ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চুয়াডাঙ্গা শাখা গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। একই সাথে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হচ্ছে।