দামুড়হুদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভোকেশনাল শিক্ষক রফিকের নৈতিক চরিত্রের স্খলন

 

প্রাক্তন ছাত্রীকে ২য় বিয়ে : শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক (ভোকেশনাল) রফিক উদ্দিন সম্প্রতি ওই স্কুলের সীমা নামের এক প্রাক্তন ছাত্রীর সাথে গোপনে ২য় বিয়ের পর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া মস্তান বাহিনী দিয়ে ওই মেয়েকে এলাকাত্যাগ করানোসহ তাকে খুন-গুমের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি জানার সাথে সাথে ম্যানেজিং কমিটির জরুরি বৈঠকে অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সাথে সাথে গঠন করা হয়েছে ৫ সদস্যের একটি তদন্তকমিটি। তাৎক্ষণিকভাবে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ম্যানেজিং কমিটিকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকার ক্ষুব্ধ অভিভাবক মহল। গত সোমবার দুপুরে এঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বাঘাডাঙ্গা গ্রামের সাইদুর রহমানের মেয়ে সীমা দামুড়হুদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোকেশনাল বিভাগে পড়ালেখা করতো। বছরখানেক আগে সে একই স্কুলের ভোকেশনাল শিক্ষক ৩ সন্তানের জনক রফিক উদ্দিনের বাড়িতে থেকে পড়ালেখা চালাতে থাকে। সে সুবাদে শিক্ষক রফিকের সাথে ওই ছাত্রীর অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছাত্রী সীমা চলতি ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করে নিজ বাড়িতে চলে যায়। ওই ছাত্রী নিজ বাড়িতে চলে গেলেও থেমে থাকেনি তাদের অনৈতিক কার্যকলাপ। প্রাক্তন ছাত্রী সীমা গত ১৫ দিন আগে ওই শিক্ষককে মোবাইলফোনে কার্পাসডাঙ্গায় যেতে বললে লম্পট শিক্ষক রফিক ছুটে যায় কার্পাসডাঙ্গায়। তারপরই ঘটে আরেকটি অঘটন। মেয়েটি কৌশলে তাকে বিয়ের পিড়িতে বসতে বাধ্য করে। ১ লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়েও হয়। কিন্তু মেয়ের বয়স সনদ অনুযায়ী ১৮ বছর পূর্ণ হতে ৮ মাস বাকি থাকায় ওই কাজী বিয়েটি রেজিস্ট্রি করাননি। সাদাকাগজে লিখে কালমা পড়িয়ে সম্পন্ন করা হয় তাদের বিয়ের কাজ। বিয়ের পর ওই ধূর্তবাজ লম্পট শিক্ষক বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য নানা পথ খুঁজতে থাকে। মেয়েটির সাথে বন্ধ করে দেয় যোগাযোগ। মেয়েটি কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে শেষমেশ গত সোমবার সকালে তার পূর্ব পরিচিত দশমীপাড়ার আশরাফুলের বাড়িতে আসে এবং ওই শিক্ষকের সাথে তার বিয়ের বিষয়টি খুলে বলে। জনৈক আশরাফুল বিষয়টি দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ওরফে টুপি শহিদুলকে জানায়। শহিদুল ওই শিক্ষক ও মেয়েকে ডেকে নেন তার নিজ বাড়িতে। শিক্ষকের কাছে দাবি করা হয় ৭ লাখ টাকা। শেষমেশ আড়াই লাখ টাকা পাওয়ার পর শিক্ষককে ছেড়ে দেয়া হয়। মেয়ের হাতে দেনমোহরের ১ লাখ টাকা দেয়া হলেও পরে সেখান থেকে ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মেয়েকে জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়। হুমকি দিয়ে বলে শিক্ষক রফিকের সাথে বিয়ের বিষয়টি আর কাউকেই জানাবিনে। আর তোকে যেনো আর কোনোদিন এএলাকায় না দেখি। তুই যদি ওই শিক্ষকের কোনো ডিসটার্ব করিস তোকে গুম করে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে মর্মে শহিদুলের প্রতি অভিযোগ তুলেছেন ওই মেয়ের পিতা সাইদুর রহমান।

বিষয়টি গতকাল মঙ্গলবার সকালে জানাজানি হয়ে পড়লে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে এক জরুরি সভার আহবান করে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই জরুরি সভায় দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, অধ্যক্ষ নূর জাহান খাতুন, বাজার বণিক সমিতির সভাপতি হেদায়েতুল ইসলাম, সেক্রেটারি শফিউল কবীর ইউসুফসহ এলাকার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন ।

ম্যানেজিং কমিটির জরুরি বৈঠকে অভিযুক্ত শিক্ষককে তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ম্যানেজিং কমিটিকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকার ক্ষুব্ধ অভিভাবক মহল।

দামুড়হুদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নূর জাহান খাতুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ম্যানেজিং কমিটির সভায় উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতেই ওই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য স্থানীয় অভিভাবকদের দাবির প্রেক্ষিতে তদন্ত কাজ শেষ হলেই প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নেয়া হবে। এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি যদি আড়াই লাখ টাকা নিয়ে থাকি তা প্রমাণ করা হোক।

এদিকে এঘটনার পর থেকে ওই মেয়েকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন মেয়ের পিতা সাইদুর রহমান।