স্টাফ রিপোর্টার: আজ ১০ জুন। দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দু যুগে পদার্পণ। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মাথাভাঙ্গা পরিবার। প্রতিদিন সকাল হতে না হতেই যে সংবাদপত্রটি চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ার একাংশের পাঠককূলের কড়া নাড়িয়ে ঘুম ভাঙায়। অসংখ্য সংবাদ দিয়ে জাগিয়ে তোলে, দূর করে কুসংস্কারের অন্ধকার, সেই মাথাভাঙ্গার জন্মদিনে খুশি সকল পাঠকও।
অনেকেই জানেন, অনেকেই জানেন না, মাথাভাঙ্গার আত্মপ্রকাশের গল্প। আর প্রতিদিন কীভাবে কাদের ছোঁয়ায় পত্রিকাটির ভোরের আলো ফোটায় তাও অজানা থেকে যায় সকলের। মাথাভাঙ্গার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অজানা কিছু তথ্য নিয়েই এই প্রতিবেদন। ১৯৯১ সালে চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের তুখোড় উদীয়মান ৪ যুবকই চুয়াডাঙ্গা থেকে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের স্বপ্ন দেখেন। ২৬ মার্চ প্রস্তাবিত সংখ্যা পৌঁছায় পাঠকদের হাতে। চমকে ওঠেন অনেকে। পত্রিকা প্রকাশের ছাড়পত্র পাওয়ার পর ১০ জুন থেকে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক যাত্রা। চলছে। সমাজের কুসংস্কার, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদকের মাথাভাঙ্গার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রকাশিত পত্রিকার প্রস্তাবিত সংখ্যারও প্রকাশক ছিলেন সরদার আল আমিন, সম্পাদক ছিলেন হামিদুল হক মুন্সী। তাকে সম্পাদক করে পত্রিকা প্রকাশের ছাড়পত্রে আপত্তিতে সম্পাদক হন এমন এক মানুষ যিনি গণমানুষের কল্যাণে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। তিনি সাইফুল ইসলাম পিনু। তাকে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবার প্রধান সম্পাদক হিসেবে এখনও রেখেছে। বিধিবিধানের কারণে প্রশাসনের আপত্তিতে তার নামটি প্রিন্টার্স লাইনে রাখা না হলেও তিনি আছেন, তিনি থাকবেন। সাইফুল ইসলাম পিনু দৈনিক মাথাভাঙ্গার সম্পাদক হিসেবে ২০০১ সাল পর্যন্ত থাকলেও ১৯৯৭ থেকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন প্রকাশক সরদার আল আমিন। আর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০০১ সালে। তিনিই দৈনিক মাথাভাঙ্গার কর্ণধার তথা প্রকাশক ও মুদ্রাকর। সরদার আল আমিন পত্রিকাটিকে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করিয়ে নিজেও ইতিহাসের পাতায় কনিষ্ঠ প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে সারাদেশে উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। দৈনিক মাথাভাঙ্গা প্রতিষ্ঠাকালে সরদার আল আমিনের সাথে যে ৪ জন ছিলেন তারা হলেন- আলী কদর পলাশ, রিচার্ড রহমান ও পাঞ্জু। এরপর সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন অনেকে। তাদের কেউ এখনও সরাসরি দায়িত্ব পালন করেন, কেউ কেউ দূরে থাকলেও সেখান থেকেই দৈনিক মাথাভাঙ্গার অগ্রযাত্রার পথকে তরান্বিত করে চলেছেন।
আর দৈনিক মাথাভাঙ্গা প্রকাশিত হয় কীভাবে? পত্রিকার কলেবর যতোটুকুই হোক, আয়োজন অনেক বড়। রয়েছে বার্তা বিভাগ। এ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাড. রফিকুল ইসলাম। তিনি চিপ রিপোর্টার। আহাদ আলী মোল্লা। যিনি প্রথম সংখ্যা থেকে টিপ্পনী নামের খোঁচা মারা ছড়া লিখে ইতিহাসের পাতায় নিজেকে ঠাঁই করে নিয়েছেন। তিনিই বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার সাথে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে রয়েছেন ইসলাম রকিব, রাজন রাশেদ, নাসির জোয়ার্দ্দার, হোসেন জাকির, খাইরুজ্জামান সেতু, আলম আশরাফ, সাইফ জাহান, শাহাবুদ্দিন রিংকু, উজ্জ্বল মাসুদ, মাহমুদ কামরান, মারুফ হোসেন, রঞ্জুসহ অনেকে। সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে ফাইজার চৌধুরী তো তুলনাহীন। একই দায়িত্ব পালন করেছেন অথচ একটু দূরে তাদের নাম লিখতে গেলে চুয়াডাঙ্গার প্রায় সকল সাংবাদিকেরই নাম উঠে আসে। চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকদের কারো নাম বাদ দেয়া প্রায় অসম্ভব। বিশেষ করে যারা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আরিফ জামান। তিনি সিঙ্গাপুর প্রাবাসী। আর আহাম্মদ শরীফ মীম। তিনি তো দীর্ঘদিন ধরেই ক্রীড়াপাতার দায়িত্ব পালন করেছেন। এক সময় তিনি বার্তা সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন। আর প্রতিবেদক হিসেবে রাজীব আহমেদ, বকুল আহমেদ, নাজমুল লিখনসহ অনেকেই রয়েছেন দূরে। যেখানেই যখন থাকেন মাথাভাঙ্গা পরিবারভুক্ত হয়েই রয়েছেন। আলমডাঙ্গা উপজেলার মূল দায়িত্ব রহমান মুকুলের। তার সাথে রয়েছেন হাফিজ মাস্টার ও মামুন কাইরুলসহ বেশ কয়েকজন। হাটবোয়ালিয়ার কলিন, ডাউকির জামিরুল। জামজামির কে.এ মান্নানের দায়িত্ব পালন অন্যদের কাছে শিক্ষনীয়। দামুড়হুদার অফিস প্রধান সাহাবুদ্দিনের নিরলস সাংবাদিকতা অক্ষুণ্ণ রয়েছে। তার পাশে আছেন ফটো সাংবাদিক তাছির আহমেদ। প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বখতিয়ার হোসেন বকুল। দর্শনার দায়িত্ব? ছড়াকার সাঈদুল্লাহ আল শাহেদের মৃত্যুর পর হারুন রাজু নিষ্ঠার সাথেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সাথে রয়েছেন হানিফ মণ্ডলসহ বেশ কয়েকজন। জীবননগরের ব্যুরো প্রধান এম আর বাবু। তিনি মাথাভাঙ্গার জন্মলগ্ন থেকেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে অভিভাবকের মতোই হয়ে উঠেছেন তিনি। উথলীতে রোজিনা খাতুন হলেও তার কর্তা সালাউদ্দীন কাজলকে পাশে রেখেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আন্দুলবাড়িয়াতেও প্রবীণ সাংবাদিক নারায়ণ ভৌমিক নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে নিজেকে মাথাভাঙ্গা পরিবারের কর্তাদের কাতারে শামিল করেছেন। কালীগঞ্জের শিপলু, কোটচাঁদপুরের ফারুকের দায়িত্ব পালনে যেমন গাফিলতি নেই, তেমনই মহেশপুরের রুহুল আমিনের তুলনা হয় না। ঝিনাইদহে মূল দায়িত্বে রায়হান উদ্দীন থাকলেও বর্তমানে সে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন শাহনেওয়াজ সুমন। চুয়াডাঙ্গা বদরগঞ্জের কবির দুখু মিয়া, সরোজগঞ্জের জিয়াউর রহমান, ডিঙ্গেদহের ইলিয়াস হোসেন, বেগমপুরের নজরুল ইসলাম, পদ্মবিলার সুজন মাহমুদ, ঝিনাইদহ ডাকবাংলার গিয়াস উদ্দীন সেতু দায়িত্ব পালন করে আসছেন। চুয়াডাঙ্গা মোমিনপুরের সদরুল নিপুল তো নৃশংসতার শিকার হয়ে এখন স্মৃতি। মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি অনিক সাইফুল, সহকারী নূর আলী মোল্লা, ঘোলদাড়ির জাহাঙ্গীর, ভালাইপুরের সাইদুর রহমান, আলুকদিয়ার মনির মুহাম্মাদ, মেহেরপুরের মহাসিন আলী, গাংনীর মানিকের সংবাদ পরিবেশনের তুলনা নেই। অবশ্য এক সময় আবু হোসেন মাস্টার নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে মানিকের সাথে আছেন মাহবুব। আমঝুপিতে সাদ আহাম্মদ, বাড়াদীতে আবু সুফিয়ান, মুজিবনগরের শফি, কার্পাসডাঙ্গার কচি, রতন, আটকবরের মাহাবুব, নতিপোতা প্রতিনিধি তৌহিদ তুহিন, কুড়ুলগাছির জামান তারিক ও হাসেম রেজা দায়িত্ব পালনে কমতি রাখেন না। দৌলতপুরের জহুরুল, বাজারগোপালপুরের মঞ্জুরসহ অনেকেই রয়েছেন যারা সংবাদ পরিবেশন করে মাথাভাঙ্গার পাতা ভরাতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। আসমানখালীর জুলহাস কবীর সুজনসহ অনেকেই সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করেছেন আগে। সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় সাংবাদিকতা কঠিন। একটি কলমই সাংবাদিকের বড় অস্ত্র। সেই অস্ত্রকে বলিষ্ঠ করে এলাকার অগণিত পাঠক।
এ তো গেলো সংবাদ সংগ্রহ এবং বার্তা সম্পাদকের নিকট পাঠানোর সৈনিক। এসব ঠিক ঠাক করে ছাপার উপযোগী করতে কাজ করেন অনেকে। অনেকেই বিগত দিনে এ দায়িত্ব পালন করে পত্রিকার শ্রীবৃদ্ধিই শুধু করেননি, তাদের কাজের নৈপূণ্যে পাঠকদের কাছে টানতে সহায়ক হয়েছে। এদের মধ্যে ফটো সাংবাদিক জাকির হোসেন ও মিরাজুল আলম দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নেপথ্য সহযোগিতার অন্যতম মনির হোসেন। তিনি এখনও মাথাভাঙ্গা পরিবারের জন্য নিবেদিত। অবশ্য বর্তমানে তিনি অন্য পেশায়। আলো আর লিটন? এরাও অন্য পেশায়। ক’দিন আগেও ছিলেন আশাদুল। এর আগে শাহীন, শাহজানসহ অনেকেই দায়িত্ব পালন করেছেন। যাদের নামের তালিকা অনেক লম্বা। বর্তমানে মাহবুব হোসেন, রিপন, আনিছ পত্রিকা সাজানোর দায়িত্ব পালন করছেন। এরা কম্পোজ করে টেসিঙে প্রিন্ট দেয়। বানান এবং অংশ বিশেষে সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন ফারুক হোসেন। ট্রেসিং কেটেছেঁটে ছাপাখানায় নেয়ার মতো করে তোলেন লিল্টন। যাকে বলা হয় পেস্টার। ছোটখাটো মানুষটা শুধু ঘুমোয়। পেস্টিঙের কাজে সহযোগিতায় থাকে বখতিয়ার। ছাপাখানায় নেয়ার পর তা মেশিনে তুলে হরদম ছাপতে থাকেন মানিক। সহযোগিতায় সুজন ও হাসান। এরপর তা নিয়ে গুনে গেথে পাঠকদের হাতে তুলে দেয়ার মূল দায়িত্ব পালন করেন সার্কুলেশন ম্যানেজার রানা মাসুদ। সহযোগিতায় থাকে আনোয়ারসহ কয়েকজন। এরপর পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন তাদের সংখ্যা দু শ’রও বেশি। এদের মধ্যে শাহাবুদ্দিন ও কালু প্রবীণ। শাহাবুদ্দিন বর্তমানে অসুস্থ। তার জন্য মাথাভাঙ্গার জন্মদিনে আমাদের দোয়া।
এতো সব মানুষের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি মানেই মাথাভাঙ্গার ত্রুটি। মাথাভাঙ্গার পাঠকের সংখ্যা বর্তমানে ২৯ হাজার ৭ শ’র কিছু বেশি। সকল পাঠকের সন্তুষ্টি মাথাভাঙ্গা পরিবারের সফলতা। দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উৎসবের আয়োজন নেই। কারণ এবার সৃষ্টি সুখের উল্লাস প্রধান সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিনু ও সদ্য নৃশংসতার শিকার সদরুল নিপুলের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গিত। গত ২১ মে সদরুল নিপুলকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। আর সাইফুল ইসলাম পিনু আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন ২০১২ সালের ৯ নভেম্বর। আমরা তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।