চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা

 

চলছে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ভক্তদের লড়াই

স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্বকাপের উন্মাদনা ছড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে। যেখানে পিছিয়ে নেই চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ওঝিনাইদহবাসী। বিশ্বকাপ ফুটবলের বাকি আর মাত্র ৩ দিন। তার আগেই ঝিনাইদহে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা লড়াই শুরু হয়ে গেছে। এটা মাঠের লড়াই নয়। মাঠের বাইরে ভক্তদের লড়াই। বিশ্বকাপে ৩২ দল অংশ নিলেও ঝিনাইদহে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সমর্থকদের উন্মাদনাই বেশি। পছন্দের দলের জার্সি,পতাকা কেনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে ফুটবল ভক্তরা। বাসা-বাড়ি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও উড়ছে তাদের প্রিয় দলের পতাকা।

সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পতাকার সমারোহ। সবার সবার মনেই এখন ফুটবল ভাবনা। যানবাহন গুলোতেও পছন্দের দলের পতাকা লাগিয়ে উন্মাদনায় মেতেছেন ফুটবল প্রেমীরা। পতাকার চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয় দর্জিরা। রাতদিন তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন দোকানে এবং ফেরি করেও বিক্রি করা হচ্ছে এসব পতাকা। প্রতিটি শহরে আকাশের দিকে তাকালে শুধু দেখা যাচ্ছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, ইংল্যান্ড, পর্তুগাল ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের পতাকা।বিশ্বকাপের আমেজে ভাসছে এখন সারাদেশ। তার আচর লেগেছে মেহেরপুরেও। ফুটবল ভক্তরা তাদের পছন্দের দেশগুলোর পতাকা কিনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি এক পতাকাবিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছেন,মরসুমি পতাকা বিক্রেতারা নানা দেশের পতাকা বিক্রি করে ভালো অর্থ আয় করছেন। শহরের কলাবাগান এলাকার কলেজছাত্র ছাত্র রফাত ইবনে আলী হিমেল জানান,২০১০ বিশ্বকাপের সময় ৭শ টাকা দিয়ে ব্রাজিলের পতাকা কিনে ছিলাম। সেই পতাকা চার বছর যত্নকরে তুলে রেখেছি। সপ্তাখানেক আগে সেই পতাকা বাড়ির ছাদে উড়িয়েছি। ব্রাজিল আমার ফেভারিট দল। বিশ্বকাপ ব্রাজিল নেবে। রিপন আরও জানান, আব্বু আর্জেন্টিনার সমর্থক। আম্মু অবশ্য কোনো দলের সমর্থক নয়। আর্জেন্টিনার সমর্থক আরাপপুর এলাকার বাসিন্দা জাফর উদ্দীন বলেন, আমরা আর্জেন্টিনার বড় পতাকা বাড়ির ছাদে উড়িয়েছি। আর বাড়ির পাশের মোড়ে বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা হবে। সেখানেই সবাই মিলে খেলা উপভোগ করব। শহরের ব্যাপারীপাড়া এলাকার ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, প্রতিবার মেসের সবাই মিলে পতাকা কিনে ওড়াই। এবারও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা ওড়ানো হবে। মেসে সবাই মিলে টিভিতে খেলা দেখব। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ঝিনাইদহ শহরের খেলার সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলো পরিণত হয়েছে মেলায়। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের পতাকা এবং জার্সি থেকে শুরু করে সবকিছু। ফুটবল ভক্তরা তাদের নিজ নিজ সমর্থক দলের পতাকা আর জার্সি কেনায় এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের সমর্থক বেশি হওয়ায় এই দুই দেশের পতাকাই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে, জার্মানী, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি এবং ইংল্যান্ডের সমর্থকও রয়েছে। ফুটবল ভক্তরা নিজেদের পছন্দের পতাকা কিনে পছন্দের জায়গায় টাঙাচ্ছেন। আর জার্সি গায়ে খেলা দেখার জন্য বিভিন্ন দেশের জার্সিও কিনছেন অনেকেই। বিশ্বকাপে ৩২টি দল অংশ নিলেও ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পতাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ঝিনাইদহ খেলাঘরের পতাকা বিক্রেতা মাসুদ হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে একশ থেকে দেড়শটি পতাকা বিক্রি হয়। পতাকা ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড়দের জার্সি দেশি ২শ-৩শ ৫০টাকায়, বিদেশি ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। বাচ্চাদের জার্সি ১শ ৫০ থেকে ৬শ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে। সামনের ৩ দিন বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি। ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মধ্যে বড় পতাকা টানানোর প্রতিযোগিতা। শহরের স্বর্ণপট্টিতে একটি বাড়ির ছাদে ব্রাজিলের পতাকা টাঙিয়েছেন কয়েক জন সমর্থক। তারপাশেই ব্রাজিলের পতাকার প্রায় দ্বিগুণ দৈর্ঘ্যরে পতাকা টাঙিয়েছেন আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। এ যেন ফুটবল নয়, বড় পতাকা টাঙানোর প্রতিযোগিতা।

অপরদিকে পাড়া-মহলা ও গ্রামে গ্রামে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকরা দলে বিভক্ত হয়ে প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করছে। দু দলের সমর্থকরা মাঠে গিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা করছে। সবকিছু মিলিয়ে ঝিনাইদহে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার লড়াই চলছে। এ লড়াই চলবে পুরো মাস ধরে।