কেন্দ্রীয় মহাসচিবের নিকট অভিযোগপত্র পেশ করতে গিয়ে আলমডাঙ্গার মীর মহিউদ্দীন ও শহিদুল কাওনাইন টিলুর বিরোধ নিষ্পত্তি
স্টাফ রিপোর্টার:চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহবায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসেরবিরুদ্ধে কমিটি জালিয়াতি, গঠনতন্ত্র ও সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে জেলা আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের নিকট অভিযোগপত্রটি গতরাতে পেশ করা হয়। অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন ও কমিটি বাতিলের দাবি জানাতে গিয়ে আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র মীর মহিউদ্দীন ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শহিদুল কাওনাইন টিলুর দীর্ঘদিনের বিরোধেরও নিষ্পত্তি হয়েছে। আলমডাঙ্গা বিএনপিকে শক্তিশালী করতেই বিরোধের নিষ্পত্তি বলে জানিয়েছেন এ দু নেতা।
আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র মীর মহিউদ্দীন, উপজেরা বিএনপির সাবেক সভাপতি শহিদুল কাওনাইন টিলু ছাড়াও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন কমিটির সদস্য দর্শনা পৌর মেয়র মহিদুল ইসলাম, জীবননগর পৌর মেয়র হাজী নওয়াব আলী, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মনি, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাড. আব্দুল ওহাব মল্লিক, পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুস সালেহীন লিটন, লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু, সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি পদ থেকে সদ্য পদত্যাগী অ্যাড. শামীম রেজা ডালিম, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী শাহ, সাবেক সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খাজা আবুল হাসনাত, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মণ্টু, জেলা বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক এসকে সাদী, আনজুমান আরা, জেলা হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ ঐক্যপরিষদের সভাপতি সুশিল কুমার দাস, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, দর্শনা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজি শওকত আলী, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাফর মণ্টু মাস্টার, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম মুকুট, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহরুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইস্রাফ হাসেন প্রমুখ।
অভিযোগপত্রের প্রথমেই স্বাক্ষর করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। অভিযোগ উত্থাপন বিষয়ে ওয়াহেদুজ্জামান বুলার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের নিকট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের অনুরোধ জানানোর কথা স্বীকার করে বলেছেন, অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি যখন কেন্দ্রীয়ভাবে গঠন করে দেয়া হয়, তখন আমরা সকলেই জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে চুয়াডাঙ্গা বিএনপিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কিছুদিনের মাথায় অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস একনায়কতন্ত্র কায়েম করে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ও গণতন্ত্র না মেনে তিনি ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই করতে শুরু করলেন। কমিটি বাণিজ্য করে বিএনপিকে ধ্বংস করতে শুরু করেছে। এ কারণেই চুয়াডাঙ্গা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির প্রবীণ সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে চুয়াডাঙ্গা বিএনপির স্বার্থে কেন্দ্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করে প্রতিকার প্রার্থনা করেছি। আমরা বিএনপি করি, বিএনপিই করবো। কাউকে নেতা মানতে আমার এবং আমাদের আপত্তি নেই। তাই বলে স্বেচ্ছাচারী, পকেট কমিটি গঠনকারী এবং কমিটি বাণিজ্যকারীর অনিয়ম তো আমরা মানতে পারি না!
অভিযোগপত্রে বিএনপি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক মুহাঃ অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের কমিটি জালিয়াতি, গঠনতন্ত্র ও সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কারণে জেলা আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, গত ২৭ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন প্রদান করা হয়। ২৯ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর আমরা জানতে পারি। অনুমোদিত জেলা আহ্বায়ক কমিটির দুজন সদস্যের নাম পরিবর্তন করেছেন অহিদুল ইসলাম। যা কেন্ত্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে প্রতারণার সামিল। অভিযোগপত্রে যে দুজনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে তাদের ক্রমিক নম্বরও অভিযোগপত্রে উত্থাপন করে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কমিটির সদস্যদের নাম জাল জালিয়াতি করতে পারে তার নেতৃত্বে বিএনপিকে সুসংগঠিত করা সম্ভব নয়। এছাড়া চুয়াডাঙ্গার ৪টি উপজেলা কমিটি গঠন ও সুপার ফাইভের নাম অগঠনতান্ত্রিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। অনুমোদন ছাড়াই গাংনী বাজারকে সাংগঠনিক থানা করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘরে বসে কমিটি গঠন করে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাদের মতামত উপেক্ষা ও একনায়কতন্ত্র কায়েম করে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। কমিটি বাণিজ্য, একগুয়েমি ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার লক্ষ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের অপমান অপদস্থ-ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
অভিযোগপত্রের একাংশে বলা হয়েছে, জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা শাখাটি বরাবরই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। আন্দোলন সংগ্রামসহ সকল কর্মকাণ্ডে এমনকি জেলা সদরের যে কোনো কর্মসূচিতে এ উপজেলার অংশগ্রহণ ও ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনিকভাবে এ উপজেলাটি একক ইউনিট এ উপজেলার অভ্যন্তরে কোনো পুলিশি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস কমিটি বাণিজ্য নামক অপকর্মের অংশ হিসেবে আলমডাঙ্গা উপজেলা দুভাগে বিভক্ত করে গাংনী সাংগঠনিক থানা নামে একটি তথাকথিত সুপার ফাইভ কমিটির নাম ঘোষণা করেন। যা তার এখতিয়ার বহির্ভূত সাংগঠনিক ঐক্য বিনাশী ও সংগঠনের গঠনতন্ত্র বিরোধী। তিনি একইভাবে বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং পৌর সভার ওয়ার্ডসমূহকে একাধিক ভাগে বিভক্ত করে পকেট কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংগঠনের স্তরগুলোকে দুর্বল করে দেবে এবং জটিলতা সৃষ্টি করবে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আহ্বায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস ও ১ম যুগ্মআহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু কর্তৃক অবৈধভাবে গঠিত ৪টি উপজেলা ৪টি পৌর সভার তথাকথিত সুপার ফাইভ নামক কমিটি বাতিল এবং আলমডাঙ্গার কথিত গাংনী সাংগঠনিক থানা কমিটি গঠন অবৈধ ঘোষণা পূর্বক তা বিলুপ্তকরণ এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের স্বাক্ষরিত কমিটি জালিয়াতির সাথে জড়িত মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকে অপসারণ পূর্বক বর্তমান জেলা আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তি করে জেলার নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে একটি নতুন জেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার জন্যজোর দাবি জানাচ্ছি।