দরপত্র আহ্বান ছাড়াই প্রায় ৫ লাখ টাকার রাস্তার কাজ করছে মহেশপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ
ঝিনাইদহ অফিস: খোয়া বিছানো রাস্তাটি খুড়ে ফেলা হয়েছে। এরপর পুরাতন খোয়ার ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে নামমাত্র কিছু নতুন খোয়া। পরে রোলার দিয়ে সমান করার কাজ চলছে। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে কাজ করা হচ্ছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা শহরের একটি রাস্তার।
খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, কোনো প্রকার দরপত্র আহ্বান ছাড়াই প্রায় ৫ লাখ টাকার এ কাজটি করছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নিজেরাই। যে কারণে কাজটির মান দেখার কেউ নেই। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও কর্তৃপক্ষ কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাদের খেয়াল খুশিমতো কাজ অব্যাহত রয়েছে। অবশ্য পৌরসভার প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, কাজটি তারা কোটেশনের মাধ্যমে করছেন। যদিও নিয়মানুযায়ী কোটেশনের মাধ্যমে দু লাখ টাকার ওপর কাজ করার কোনো নিয়ম নেই।
সরেজমিনে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, মহেশপুর শহরের পশুহাসপাতালের সামনে থেকে হামিদপুর সড়ক পর্যন্ত একটি রাস্তার কাজ চলছে। আনুমানিক ৫-৬শ মিটারের এ কাজ করছেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। কাজের সাইডে গেলে কথা হয় মিস্ত্রিদের সর্দ্দার নূর ইসলামের সাথে। তিনি জানান, পৌরসভার প্রকৌশলী তাকে কাজটি করার জন্য বলেছেন। সেভাবে কাজটি করছেন। তিনি জানান, প্রথমে পুরাতন রাস্তা খুঁড়ে নিয়েছেন। এরপর নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন কিছু খোয়া ছিটিয়ে রোলার করবেন। এর বেশি তিনি কিছু বলতে পারেন না।
মহেশপুর পৌরসভার প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, কাজটি তারা কোটেশনের মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচন করে করছেন। রুহুল আমিন নামের একজন ঠিকাদার কাজটি করছেন। মোট বরাদ্দ আছে ৪ লাখ ৬০ হাজারের মতো। এতো টাকার কাজ কোটেশনের মাধ্যমে করার নিয়ম আছে কি-না জানতে চাইলে জরুরি প্রয়োজনের কিছু কাজ করা যেতে পারে। কাজটি নিম্নমানের হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সঠিক নিয়মে করার ব্যবস্থা করবেন। অবশ্য কথিত ওই ঠিকাদার রুহুল আমিনের সাথে কথা বললে তিনি কাজটি সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেননি। কতো টাকার কাজ, কতো মিটার, কতো ইঞ্চি খোয়া বিছানোর কথা, কাজটি কতোটুকু সম্পন্ন হয়েছে, কোন মিস্ত্রি কাজটি করছে কিছুই তিনি বলতে পারেননি। তবে তিনি দাবি করেছেন কাজটি তিনি করছেন।
কাজটির বিষয়ে স্থানীয় একজন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ কাজটি হবার কথা প্রথমে খুঁড়ে ফেলে খোয়া সরিয়ে ফেলতে হবে। এরপর বালি বিছিয়ে তার ওপর নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ৬ ইঞ্চি পুরু খোয়া বিছাতে হবে। রোলার দিয়ে সমান করার পর ৪ ইঞ্চি থাকবে। কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তার কোনো কিছুই না করে জোড়াতালি দিয়ে রাস্তাটি পুরোনো মালামাল দিয়ে সমান করে দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, তারা প্রতিবাদ করেছেন কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। পৌরসভা কাজটি টেন্ডারের মাধ্যমে কোনো ঠিকাদারকে দিলে কাজটি বুঝে নিতে পারতেন। কিন্তু নিজেরা করাই বুঝে নেয়ার কোনো লোক নেই। তিনি বলেন, এভাবে টেন্ডার ছাড়াই নিম্নমানের কাজ করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
এ ব্যাপারে পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হজ্জেল হক জানান, এ জাতীয় কোনো রাস্তার কাজ করার জন্য পৌরসভার কোনো সভায় অনুমোদন নেয়া হয়নি। আর পৌরসভার মেয়র আমিরুল ইসলাম খাঁন জানান, রাস্তাটি জরুরি মেরামত করার প্রয়োজন ছিলো। তাই কোটেশনের মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচন করে করা হচ্ছে। কাজটি যাতে ভালো হয় সে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে দাবি করেন।