স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপিকে ফরমালিন দিয়ে তাজা রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না গিয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) পচেছেন। এখন আমরা বিএনপিকে ফরমালিন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি। গতকাল শনিবার বিকেলে গণভবনে চারদিনের জাপান সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে সরকারকেপচতে সময় দেয়া প্রসঙ্গে করা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথাবলেন।
জাপানে সফর সফল হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানের সম্রাট এবংপ্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এসফরে বাংলাদেশেরআর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) মার্কিন ডলার সহায়তারপ্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাপান সরকার।যুদ্ধাপরাধের বিচার ও সরকারের বৈধতা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনাবলেন, যাদের সরকারের বৈধতা ছিলো না, তারাই বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যারাবৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তাদের বৈধতা ছিলো কিনা, সে প্রশ্ন তোলেনপ্রধানমন্ত্রী।জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীবলেন, অস্ত্র ঠেকিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন জিয়াউর রহমান। মানুষএকদিন দেখে তিনি রাষ্ট্রপতি হলেন। যাদের অবৈধভাবে ক্ষমতার যাত্রা শুরু, তারাই অন্যের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরা ক্ষমতায় এলে প্রথমেরাজনীতিবিদদের ধোলাই দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশে প্রতি রাতেই কারফিউ ছিলো।যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে তারা অন্য দলকে অবৈধ বলে কী করে। তারানির্বাচন না করলে এর দায় কে নেবে?এর দায়জাতি কেনো নেবে?তারা নির্বাচনেনা এসে মানুষ খুন করলো, রেললাইন ওপড়ে ফেলল, ৫৫ জন ড্রাইভার ও হেলপারকে হত্যাকরলো। কেউ এগুলো নিয়ে কথা বললো না। যারা মানুষ হত্যা করে নির্বাচন ঠেকাতেচেয়েছে, তারা নির্বাচন ঠেকিয়ে কী আনত, মিলিটারি ডিকটেটর। যারা বৈধতারপ্রশ্ন তোলে তাদের জন্মই অবৈধ।সবাই সরকারের সাথে ছিলো বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারাঅগণতান্ত্রিক কাউকে ক্ষমতায় আনতে কাজ করেছে। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে একটাসরকার দেখান, যাদের সাথে অ্যাডমিনিস্ট্রেটরসহ সবাই সরকারের সাথে ছিলো।যুদ্ধাপরাধের মামলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিচার কে বন্ধ করেছিলোজিয়াউর রহমান। তিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেন। এখন কাজ যেটাশুরু হয়েছে, সেটা শেষ করবেন। তার পিতামাতাকে হত্যা করা হয়েছে। বিচার শুরুহতে ২১ বছর লেগেছে, তিনি ক্ষমতায় এসে বিচার শুরু করেন।কেরি-মুন ফোন করেছেনশেখ হাসিনা বলেন, কাদের মোল্লার ফাঁসি না দেয়ার জন্য মার্কিনপররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ফোন করেছেন।কিন্তু রায় বাস্তবায়ন হয়েছে। বাংলাদেশে কেউ আছে যে এমন সাহস দেখাতে পারে?বঙ্গবন্ধুর কন্যা পেরেছে। তিনি জীবনের মায়া করেন না, জাতিকে কলঙ্কমুক্তকরতে তিনি কাজ করবেন। জিয়া ও এরশাদ খুনিদের পুনর্বাসন করেছেন। যারা খুনিদেরপার্লামেন্টে বসায়, তারা কীভাবে এসব নিয়ে কথা বলে?তিনি উপস্থিতসাংবাদিকদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে, আমার ওপর ভরসারাখেন।আইনগতভাবে সঠিকজামায়াতে ইসলামীর বিচার নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলেপ্রধানমন্ত্রী বলেন, জামায়াতের বিচার নিয়ে একটি কেস হাইকোর্টে পেন্ডিং আছে, একটা চলমান থাকতে অন্যটা চলতে পারে না। আইনমন্ত্রী যেটা বলেছেন সেটাআইনগতভাবে সঠিক, এ নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিভারতের মোদি সরকারের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে করা এক প্রশ্নের জবাবে শেখহাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ এ সময়ে তিনিসরকারের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে কংগ্রেস, বিজেপি, জনতা দলের সরকারসহপাঁচ দলের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কাজ করেছেন। তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায়রেখে কাজ করেছেন। পানি চুক্তি করেছেন। ল্যান্ড বাউন্ডারির বিষয়ে কথাবলেছেন। খালেদা-এরশাদ তো এ বিষয়ে কথা বলার সাহস পাননি। তারা কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি নিয়ে অনেক সমালোচনা দেশে হয়েছে।দেশ ভারতের হয়ে গেলো বলেও নানা সমালোচনা হয়েছে। এখন আবার সবাই বলছেন, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ভারতসফরে গিয়ে গঙ্গা-পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যা চাইতে ভুলে গেছেন।দায় ভারতের ওপর বর্তায়শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে যে আলোচনা চলছে, সেটা চলবে, এরদায় ভারতের ওপর বর্তায়। তিনি বলেন, আমার পানি চাই। আমরা কিছু কাজ করছি, নদী ড্রেজিং করছি। ভাটির দেশ হিসেবে আমার নদীতে পানি আসবেই। আমরা পানি ধরেরাখার ব্যবস্থা করছি।র্যাব একটি বাস্তবতা
নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর ঘটনায় সরকার বিব্রত কিনা এবং র্যাব বাতিলের যে কথাসম্প্রতি উঠেছে তা বিবেচনা করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীবলেন, ‘র্যাব একটা বাস্তবতা। বিএনপির সময়ে অপারেশন ক্লিন হার্ট দিয়ে মানুষহত্যা করা হয়েছে। মানুষ মেরে কুলাতে না পেরে র্যাব করা হয়েছে।রক্ষীবাহিনী নিয়ে এতো সমালোচনা, অথচ ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের পর এক হাজার লোকমারা হলো। তখন তো সমালোচনা হয়নি। র্যাব দীর্ঘদিন চলতে চলতে একটাপ্রতিষ্ঠানে দাঁড়াচ্ছে। তখন যদি আমার পরামর্শ শুনতেন, তাহলে তো এমন হতো না।র্যাব কিছু ভালো কাজ যে করে নাই, তা তো নয়।