চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে মুষলধারে বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত
মাথাভাঙ্গা ডেক্স:দেশেরছয় জেলায় বজ্রপাতে ৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো 6০ জন। গতকাল শনিবারমুষলধারে বৃষ্টির সাথে বজ্রপাতের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, চাপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ ও গাইবান্ধা জেলায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।চুয়াডাঙ্গারজীবননগর ও দামুড়হুদা উপজেলার পৃথক স্থানে বজ্রপাতের ঘটনায় এক কলেজছাত্রসহতিনজন নিহত ও অন্তত ২৯ আহত হয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জেরশিবগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন-শ্যামপুরইউনিয়নের আজগবি গ্রামে আনিসুর রহমান(৫৫), এবং বুরোরশিয়া গ্রামের মনিরুল (৩৫)। এসময় আরো ১১জন আহত হয়েছেন।ঝিনাইদহ জেলার কোটচাদপুরে বজ্রপাতেআরেকজন মারা গেছেন। নিহত জয়নাল কাগমারী গ্রামের কালু মোল্লার ছেলে। এদিকেজেলার মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চারজন বজ্রপাতে আহত হয়েছেন।বাগেরহাটেরচিতলমারী উপজেলায় বজ্রপাতে আকরাম শেখ (৪৫) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন।শনিবার বেলা ১২টার দিকে মাঠে কাজ করার বজ্রপাতের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই তারমৃত্যু হয়। নিহত আকরাম শেখ চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বারাশিয়া গ্রামেরসাখাওয়াত শেখের ছেলে।গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী গ্রামেবজ্রপাতে স্মৃতি সাহা (৩৮) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালসাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের গৌরাঙ্গ সাহার স্ত্রীছিলেন।গাইবান্ধায় সদর উপজেলায় বজ্রপাতে আমেনা বেগম (৪০) নামের একগৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের দক্ষিণ গিদারীঠাকুরের ভিটা গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আমেনা বেগম ওই গ্রামের আব্দুররশিদের স্ত্রী।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে বজ্রপাতে কলেজছাত্রসহ দুজন নিহত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন। মানুষের পাশাপাশি মারা গেছে হালের বলদ ও ছাগল। আহতদের মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় ১৬ জনকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোর থেকে ৪ ঘণ্টাব্যাপি মুষলধারে বৃষ্টিসহ মুহুর্মুহু বজ্রপাতের ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসূত্রে জানা যায়, বজ্রপাতে মারাত্মক আহত অবস্থায় উপজেলার চোরপোতা তেঁতুলিয়া গ্রামের আবুল হাশেমের ছেলে কলেজছাত্র ছাদের আলী (২২) ও মহেশপুর উপজেলার কুশাডাঙ্গা গ্রামের আলী কদরের ছেলে সাইদুর রহমানকে (২৩) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পাঁচজন মহিলাসহ ৩০ জন গুরুতর আহতহয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
জীবননগরউপজেলার পৃথক স্থানে বজ্রপাতে তেঁতুলিয়া গ্রামের হাসেম আলীর ছেলে সাদেক আলী, আবুল হোসেনের ছেলে নজরুল ইসলাম (২৫), আব্দুল মান্নানের ছেলে বশির আলী (২৪), বক্সের ছেলে আব্দুল হান্নান (২৮), হাশেম আলীর স্ত্রী রেহেনা খাতুন (৩২), রহিম উদ্দীনের ছেলে আবু বকর (৪৬), খয়েরহুদা গ্রামের মহিরদ্দীনের বানুখাতুন (৩৫), গোপালনগর গ্রামের ইব্রাহীমের ছেলে শহিদুল, সাদেক আলীর ছেলেশাহীন (২২), যাদবপুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে সোহেল (৪৫), আবুল হাশেমেরছেলে রোকন (২২), কাটাপোল গ্রামের আব্দুস সামাদের স্ত্রী বীনা খাতুন (৩০), তার মেয়ে হাজেরা (১৫), কুশডাঙ্গা গ্রামের আলী কদরের ছেলে সাইদুল ইসলাম (২৪),মৃত রতন আলীর ছেলে লোকমান (৬৫), ইছাহাকের ছেলে বাহাদুর (৩০), হাবিবেরস্ত্রী মনিকা খাতুনসহ (৩৫) কমপক্ষে ৩০ জন গুরুতর আহত হয়।আহতদের উদ্ধার করে জীবননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাদেক আলী ও সাইদুল ইসলাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। বজ্রপাতে জীবননগরের বকুণ্ডিয়া গ্রামের নিজাম উদ্দিনের একজোড়া হালের বলদ ও আব্দুল হাইয়ের একটি ছাগল মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
অপরদিকে, দামুড়হুদার নাস্তিপুর গ্রামের শওকত আলীর ছেলে মান্দার আলী নিজ টিনেরঘরের বারান্দায় বসে ছিলেন। এ সময় টিনের চালে বজ্রপাত ঘটলে তিনি ঘটনাস্থলেইনিহত হন। এ ঘটনায় তার দুটি হালের বলদ মারা যায়।অপরদিকে, সকাল পৌনে৮টার দিকে একই উপজেলার দর্শনা শ্যামপুর গ্রামের কামরুজ্জামানের মেয়েনাফিজা খাতুন (১২) বাড়ির উঠোনে বজ্রপাতে আহত হয়।এছাড়া, সকাল ৮টার দিকে উপজেলার কুড়ুলগাছি গ্রামের মজনু মিয়া পার্শ্ববর্তী রাইসার বিলে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। তবে মজনু মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারী গ্রামে বজ্রপাতে আইনাল হোসেন মোল্লা (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বজ্রপাতে হরিণাকুণ্ডু, শৈলকুপা ও মহেশপুর উপজেলায় নারীসহ ১৭ জন আহত হয়েছেন। তাদের মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঝিনাইদহ ও যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে এ হতাহতের ঘটে। নিহত আইনাল হোসেন মোল্লা কোটচাঁদপুরের কাগমারী গ্রামের কালু মোল্লার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকে জেলার ৬ উপজেলায় প্রচণ্ড ঝড় ও বৃষ্টিপাত হয়। সে সময়ে জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারী গ্রামের কৃষক আইনাল হোসেন মোল্লা মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হন। তাকে উদ্ধার করে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহতরা হলেন-মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের লোকমান হোসেন (৩২), মনিরা খাতুন (৩২), বাহাদুর আলী (৪২), রমজান আলী (৪০), একই উপজেলার সামন্তা গ্রামের ফারক হোসেন (২৭), আলেয়া খাতুন (২১), হোসনে আরা খাতুন (৩২), সালমা খাতুন (৩১), শাহবাজপুর গ্রামের ইয়ামিন হোসেন (১০), ইয়ামিনের বাবা সাধন বিশ্বাস (৪২) ও মা শেফা খাতুন (৩৫), ইসমাইল হোসেন (৪৬), বজরাপুর গ্রামের স্বস্তি রানি (৩৭), হাটখালিশপুর গ্রামের সীমা খাতুন (২২), হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দরিবিন্নি গ্রামের হাসিয়া খাতুন (২৭), শৈলকুপা উপজেলার চরগোলকনগর গ্রামের রাজিয়া খাতুন (৩৭) ও কাজীপাড়া গ্রামের তামান্না খাতুন (৩৫)।ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন নাসরিন সুলতানা জানান, বৃষ্টির সময় বাইরে কাজ করার সময় বজ্রপাত হলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
আমঝুপি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার সকাল ৮টার দিকে বৃষ্টির সময় বজ্রপাত ঘটায় টুনু (৪৫) খাতুন নামে এক গৃহবধূ আহত হয়েছেন। তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকাসূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের আলাউদ্দিনের স্ত্রী টুনু খাতুন সকালে রান্না করছিলেন। এ সময় রান্নাঘরের পাশে বজ্রপাত ঘটলে বজ্রপাতের আগুনে তার সমস্ত শরীর ঝলসে যায়।সাথে সাথে বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাতপাতালে ভর্তি করে।
কুড়ুলগাছি প্রতিনিধি জানিয়েছে,দামুড়হুদা কুড়ুলগাছির চণ্ডিপুর খামারীপাড়ায় বজ্রপাতে ৪ জন আহত হয়েছে।এসময় ১টি হালের বলদ মারা যায়। গতকালশনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গতকালশনিবার সকালে দামুড়হুদার চণ্ডিপুর খামারীপাড়ার মৃত নজু শেখের ছেলে মজনু (৪৫) কৃষি কাজ করার জন্য পার্শ্ববর্তী রায়সার বিলে যান।এ সময় বজ্রপাত ঘটে। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়। অপর দিকে একই পাড়ায় ৮টার দিকে টিনের চালের ওপর বজ্রপাতের আঘাতে ১টি হালের গরু ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং ৪জন আহত হন।আহতরা হলেন- সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী(৪৩), বিলাত আলীশেখের ছেলে রুনাল শেখ ওরাজ্জাকশেখের স্ত্রীছালেহারবেগম।তাদেরকে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। মজনু মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক।তিনি বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।