দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিল গঠন

 

সড়কদুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিতে কল্যাণ তহবিল বোর্ড গঠনে আইনেরখসড়াপ্রস্তুত করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগ। এটি একটি শুভ উদ্যোগসন্দেহ নেই। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার অত্যাধিক। প্রতিবছর দুর্ঘটনায় নিহত, আহতও চিরতরে পঙ্গু হয় বিপুলসংখ্যক মানুষ। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২ হাজারমানুষ প্রাণ হারায় এবং আহত হয় প্রায় ৩৫ হাজার। কাজেই সড়ক দুর্ঘটনায়ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাও অনেক। নিহত বা পঙ্গু ব্যক্তি যদি পরিবারেরএকমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হয়, তাহলে সেই পরিবারে নেমে আসে অবর্ণনীয়দুর্ভোগ। দেশে বিদ্যমান ব্যবস্থায় তাদের জন্য তেমন ক্ষতিপূরণেরও নিশ্চয়তানেই। ফলে প্রতিটি দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বিশাল। সড়ক দুর্ঘটনায়ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও পরিবারের ভরণ-পোষণে সহায়তা করতেপারে এমন একটি কল্যাণ তহবিল।

এখন দেখার বিষয় কল্যাণ তহবিলে কীভাবেঅর্থের সংস্থান করা হবে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্তপ্রতিবেদনে জানা যায়, এ তহবিলে অর্থের সংস্থান করা হবে মোটরযান থেকে ফিআদায় এবং বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে। তহবিল বোর্ড তাদেরনির্ধারিত পদ্ধতিতে সব ধরনের যানবাহনের মালিকের কাছ থেকে বার্ষিক কল্যাণ ফিআদায় করবে। কল্যাণ তহবিল বোর্ড আইনের খসড়া অনুযায়ী,কেউ কল্যাণ ফি দিতেঅস্বীকৃতি জানালে তার ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা পর্যন্তঅর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। সেক্ষেত্রে সব গাড়ির মালিকেরজন্য ঢালাও বা বাধ্যতামূলকভাবে এ ফি নির্ধারণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

আমরা মনে করি,এ ধরনের তহবিল গঠনের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গাড়িরমালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিধান রাখাই হবে অধিকতর যুক্তিযুক্ত।অন্যথায় কল্যাণ ফি আদায়ের নামে এটি গাড়ির মালিকদের হয়রানি করার আরেকটিউপলক্ষে পরিণত হতে পারে। এমনিতেই গাড়ির মালিকরা বিআরটিএ অফিসে প্রায়প্রতিটি ক্ষেত্রে এ সংস্থার কর্মচারী ও দালালদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়। এবাস্তবতায় কল্যাণ তহবিলের নামে তাদের হয়রানির আরেকটি পথ তৈরি হোক, এটিমোটেই কাম্য নয়। গাড়ির ওপর নিত্যনতুন ফি ধার্য করার আগে বিআরটিএকেদুর্নীতিমুক্ত করা জরুরি।

কল্যাণ তহবিল থেকে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থপ্রাপ্তির পদ্ধতিটি যথাসম্ভব সহজ ও জটিলতামুক্ত হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রেভোগান্তি হলে এ তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। বলা হচ্ছে,দুর্ঘটনার পরকল্যাণ বোর্ড থেকে মৃত ব্যক্তির সৎকার ও আহত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য দ্রুতপদক্ষেপ নেয়া হবে। চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হবে। এটিও ভালো উদ্যোগ এবং এরযথাযথ বাস্তবায়নে দৃষ্টি দিতে হবে। তবে সবকিছুর আগে যেদিকে দৃষ্টি দেয়াদরকার তা হলো,সড়ক দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধইউত্তম।