বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বহু অমীমাংসিতসমস্যা রয়ে গেছে। তার মধ্যে যে দুটি সমস্যা দীর্ঘ আলোচনার পরও অমীমাংসিতআছে,তা হলো- তিস্তার পানি বণ্টন ও সীমান্ত সমস্যা।কারণ তিস্তা থেকে ভারতেরএকতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল আজ মরতে বসেছে।সেখানে এরই মধ্যে মরুকরণ প্রক্রিয়া স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ভারতেরঅভ্যন্তরে বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় পাঁচ লাখ বাসিন্দা যুগের পর যুগমানবেতর জীবনযাপন করছে। ভারতের পূর্ববর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহনসিঙের বাংলাদেশ সফরকালে তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরহওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। আর ভারতের লোকসভায় সীমান্ত সংক্রান্তবিল পাস না হওয়ায় সীমান্ত সমস্যার সমাধানও ঝুলে আছে। ভারতে বিগত নির্বাচনেবিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ক্ষমতায় এসেছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদি শপথও নিয়েছেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগদানকারী বাংলাদেশের স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরীর সাথে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যে বৈঠকহয়েছে,তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার হচ্ছে।নরেন্দ্র মোদি এ দুটি সমস্যার দ্রুত সমাধানসহ দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো দূরকরার ক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জানা গেছে। বৈঠকের পর ভারতেরপররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশদ্বিপক্ষীয় সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মোদি অত্যন্ত আগ্রহী। দুদেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান হবে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিস্বাক্ষর ও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবেনতুন সরকার। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও অনুরূপ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।একই সাথে আমরাও আশাবাদী হতে চাই,দ্রুত বাংলাদেশের এ জ্বলন্ত সমস্যাদুটির সমাধান হোক।
প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্ক উভয় দেশের জন্যইকল্যাণকর। তদুপরি বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের সাথে বাংলাদেশেরকমবেশি সুসম্পর্ক বিদ্যমান। এ সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে দু দেশই আগ্রহী।কিন্তু সমস্যা জিইয়ে রেখে কোনো সম্পর্কই গতিশীলতা অর্জন করতে পারে না।তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন এমন একটি সমস্যা,যা বাংলাদেশেমানুষকে প্রতিনিয়ত দুর্দশাগ্রস্ত করছে। প্রতিদিন বাংলাদেশের মানুষকে এসমস্যার ঘাত সহ্য করতে হচ্ছে। তাই দু দেশের মধ্যকার সুসম্পর্কের স্বার্থেইএসব সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন। সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন প্রায়চার দশক ধরে আটকে আছে। দু দেশের মধ্যকার বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলাকরাও অত্যন্ত জরুরি। সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি হত্যা, চোরাচালান, মানবপাচার, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক পরিবহন ইত্যাদি দু দেশেরই সামাজিক ওঅর্থনৈতিক স্থিতিতে নানাভাবে আঘাত করছে। পাশাপাশি সন্ত্রাসী,জঙ্গিবাদী ওউগ্রপন্থী কর্মকাণ্ড দু দেশেরই নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দেখাদিচ্ছে। তাই এগুলোকে যৌথভাবে মোকাবেলা করা প্রয়োজন। আমরা আশা করি,প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু দেশের মধ্যকার বিদ্যমান সুসম্পর্ককে আরোকার্যকরভাবে এগিয়ে নেবেন।