আলমডাঙ্গায় জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতবিরোধ

 

হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা চিঠি দিয়ে মৃত্যু ভয়ের কারণ দেখিয়ে টাকা পরিশোধ বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় জাতীয়করণকৃত ৪৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে ২০১৩ সালের বকেয়া তিনমাসের ৪৯ লাখ টাকার বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ৩৩ জন প্রধান শিক্ষকসহ মোট ১৮৯ জন শিক্ষক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে টাকা না পেয়ে শিক্ষকরা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হেলাল উদ্দিনের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন।

এদিকেবেতন-ভাতা’র টাকা পরিশোধের বিষয়ে সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে অবগত করার পরও মৃত্যুভয়ের কারণ দেখিয়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পরবর্তীতে চিঠি দিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছেন।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেন। ওই সময় থেকে আলমডাঙ্গা উপজেলার ৪৮টি বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয়। এ সকল বিদ্যালয়ে ৩৩ জন প্রধান শিক্ষক ও ১৫৬ জন সহকারী শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। এসব শিক্ষক ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা পেলেও ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে।উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে গুরুত্বের সাথে বিষয়টিকে দেখার অনুরোধ জানান শিক্ষকরা। শেষমেশ শিক্ষা অফিস থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ডিসেম্বর তিনমাসের ৪৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকার বেতন বিল পাঠানো হয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে। প্রতিবিলের বিপরীতে এক হাজার করে টাকা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে। ফলে, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বিল স্বাক্ষর করে ২৭মে সন্ধ্যায় আলমডাঙ্গা সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু পরদিন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুজিৎ কুমার বিশ্বাস মৃত্যুভয়ে এবং সংগঠিত দায় হতে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে খুলনা বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে চিঠি প্রেরণ করেছেন এবং আলমডাঙ্গার অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। ওই চিঠিতে ২৭মে বিকেলে ১০-১৫ জন শিক্ষক জোর করে তার কাছ থেকে বিলে স্বাক্ষর আদায় করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন এবং ব্যাংক ম্যানেজারকে টাকা পরিশোধ না করতে অনুরোধ করেছেন ।

এদিকে, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার এ অনৈতিক দাবির কারণে শিক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। একপক্ষ টাকা দিয়ে বেতন-ভাতা নিতে রাজি হলেও অপর পক্ষ অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে টাকা পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

এব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (অ.দা.) সুজিৎ কুমার বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মোবাইলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।এব্যাপারে জানতে চাইলে আলমডাঙ্গা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার সহিদুল ইসলাম জানান, সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা’র বিলের কাগজপত্র ২৭ মে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সোনালী ব্যাংকে পাঠানো হয়। তবে, ওইরাতেই হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বিলের টাকা পরিশোধ না করতে অনুরোধ জানান। এছাড়াপরদিন ২৮ মে একটি লিখিত কাগজও পাঠান। এসব কারণে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদান করা সম্ভব হয়নি।