স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জেরপ্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত অপহরণ-খুন এবং ফেনীর ফুলগাজী উপজেলাচেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যাকাণ্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যশামীম ওসমান ও নিজাম হাজারী। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে মদদ দেয়ার পাশাপাশিখুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পালিয়ে যেতে সহায়তা করার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণতথ্য প্রমাণ এরই মধ্যে পুলিশের হাতে এসেছে। যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই তাআদালতে উপস্থাপন করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও এ দু সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধেআরো বেশকিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার সুনির্দিষ্ট উপাত্ত হাজিরকরার চেষ্টা চলছে।
তদন্তে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন হিসেবে খ্যাত শামীমওসমান ও নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে এতোদিন কোনো অভিযোগ উত্থাপনের সাহস কারো নাথাকলেও এবার তাদের বিপক্ষে আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার মতো বেশ ক’জন দৃঢ়চেতাসাক্ষী পাওয়া গেছে। এলিট ফোর্স র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তাও শামীম-নিজামেরঅপকর্মের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত নিয়ে আদালতে হাজির হতে পারেন।এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া গ্রেফতারকৃত খুনিরা এদুটি ঘটনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত যেসব তথ্য পুলিশকে দিয়েছে, তাসঠিকভাবে আদালতে উপস্থাপন করা হলে শামীম ওসমান এবং নিজাম হাজারীর পক্ষেআইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না বলে মনে করছেন তদন্তেসংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনেশুধু র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ তিন কর্মকর্তাই ফেঁসে যাননি, এ ঘটনা গোটা বাহিনীকে কলঙ্কিত করেছে। তাদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।তাই সেদুর্নাম ঘোচাতে র্যাব মরিয়া। আর এরই ধারাবাহিকতায় তারা এখননারায়ণগঞ্জের সাত অপহরণ-খুনের ঘটনায় শামীম ওসমানের জড়িত থাকার অভিযোগপ্রমাণে সচেষ্ট। এর কারণ শামীম ওসমানই প্রথম র্যাবের দিকে অভিযোগের আঙুলতোলেন। তাই তাকে সাত খুনের মদদদাতা হিসেবে আদালতে চিহ্নিত করা গেলের্যাবের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কিছুটা হলেও ফিরবে।র্যাবের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, তাদের কাছে সাত খুনের মূলহোতা নূর হোসেন ও শামীম ওসমানের ফোনালাপ রেকর্ডিং ছাড়াও আরো কিছুগুরুত্বপূর্ণ ভিডিও ক্লিপ, খুনিদের সাথে গোপন চুক্তি ও অর্থ লেনদেনসংক্রান্ত উপাত্তসহ বেশকিছু আলামত রয়েছে। যা শামীম ওসমানের বিরুদ্ধেউত্থাপিত হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমাণে সহায়ক হবে। তবে এসবঅ্যাভিডেন্সপুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে র্যাব সরাসরি আদালতে উপস্থাপনকরার চিন্তা-ভাবনা করছে।
সাত খুনের দায় ঘাড়ে এসে পড়ার বিষয়টি শামীম ওসমান নিজেও টের পেয়েছেন। তাই গতকয়েকদিন ধরে তিনি সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলে ষড়যন্ত্র তত্ত্বেরপ্রচারণাচালাচ্ছেন। কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুলইসলামকে। যার ধারাবাহিকতায় তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে শামীম ওসমানকে নির্দোষপ্রমাণের চেষ্টা করছেন। এমনকি মূল খুনি নূর হোসেনের সাথে শামীম ওসমানেরগোপন টেলিফোন সংলাপের সময় শহীদুল ইসলাম ছেলেমেয়েসহ শামীম ওসমানের সামনেছিলেন এমন তথ্যও প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন।এদিকে একরামুল হক হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর সম্পৃক্ততার বেশকিছু তথ্যপ্রমাণও জোগাড় করেছে র্যাব। এ ছাড়াও হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলের আশপাশেইপৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিবলু, একরামের সাবেক দেহরক্ষী জাহিদচৌধুরী, নিজাম হাজারীর ক্যাডার বাহিনীর প্রধান যুবলীগ নেতা জিয়াউল আলমমিস্টার থাকার প্রমাণ মিলেছে। একরামকে প্রথমে গুলি করেন নিজাম হাজারীরমামাতো ভাই আবিদ। অথচ একরামকে খুনের পর তারা আত্মগোপন না করে প্রকাশ্যেফেনী শহরে ঘুরে বেড়ায়। একরাম হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবারকে সমবেদনা জানাতেএমপি নিজাম হাজারী ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে দুপুরে ফেনীতে পৌঁছুলে একরামখুনে মূল পরিকল্পনাকারী জিহাদ চৌধুরী, কাউন্সিলর শিবলু, এমপির বডিগার্ডমিস্টার এবং কিলিং মিশনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকজন দিনভর তার সাথেকাটান। নিজাম হাজারী একরামের লাশ দেখতে তার বাসায় যাওয়ার সময় ওই খুনি গ্রুপসঙ্গী হয়। পরে গভীর রাত পর্যন্ত তারা নিজাম হাজারীর সাথে ছিলো এমন প্রমাণওর্যাবের হাতে এসেছে। এসব ঘটনার যোগসূত্র টেনে র্যাব এরই মধ্যে নিজামহাজারীকে জালে আটকানোর সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে।
এদিকে একরাম কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয়া গ্রেফতারকৃত সাতজনও র্যাবকে এসংক্রান্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তারা স্বীকার করেছে, খুনেরপরিকল্পনার কথা নিজাম হাজারী আগে থেকেই জানতেন। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের ভিডিওফুটেজ, কিলিং মিশনের মূল পরিকল্পনাকারীদের মোবাইলফোন কল রেকর্ডিংসহবেশকিছু তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে নিজাম হাজারীর সংশ্লিষ্টতাপ্রমাণ করা কঠিন হবে না বলে দাবি করেন একজন দায়িত্বশীল গোয়েন্দা কর্মকর্তা।তবে নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, দলীয় নেতা হত্যাকাণ্ডে এদু সংসদ সদস্য ফেঁসে গেলে ক্ষমতাসীন সরকারকে চরম খেসারত দিতে হবে এ বিষয়টি মাথায়রেখে তদন্তের শুরু থেকেই তাদের রক্ষার চেষ্টা চলছে। র্যাব-পুলিশসহ তদন্তেসংশ্লিষ্ট সব সংস্থার ওপর নানাভাবে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করা হচ্ছে। এমনকিপ্রশাসনের ব্যানারে মামলার বাদী ও সাক্ষীদের হুমকি-ধমকি দেয়ারও বিস্তরঅভিযোগ রয়েছে।