স্টাফ রিপোর্টার: নিরাপদমাতৃত্বকে নারীর অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে মা ও নবজাতকের মৃত্যুহারকমিয়ে আনার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৮ মে পালিত হচ্ছেনিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। আসুন নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করিপ্রতিপাদ্য নিয়েআজ দেশব্যাপি দিবসটি পালিত হচ্ছে।
একজন নারীর পূর্ণতা আসে মাতৃত্বে। বংশানুক্রম ধারা টিকিয়ে রাখার দায়িত্বপ্রাকৃতিকভাবেই নারীর ওপর তার মাতৃত্বের মধ্যদিয়ে বর্তেছে। নিরাপদমাতৃত্বের অধিকার একটি মানবাধিকার। তেমনি নিরাপদ প্রসবের সব ধরনের সুযোগপাওয়াও একজন মায়ের অধিকার। একজন নাগরিক হিসেবে তিনি সে অধিকার ভোগ করারক্ষমতা রাখেন।মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক দূরএগিয়ে গেছে। এ গতিতে এগোতে থাকলে সবার আগে মাতৃস্বাস্থ্য এবং শিশুরমৃত্যুহার কমানোর দিক দিয়ে বাংলাদেশ এমডিজি গোল অর্জন করবে। সবার সম্মিলিতপ্রচেষ্টা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে সেই সফলতার দ্বারপ্রান্তে। কিছু কিছুক্ষেত্রে এখনো সচেতনতার অভাব থাকা সত্ত্বেও সঠিক পথেই বাংলাদেশ এগোচ্ছে বলেমনে করেন বিশেষজ্ঞরা।এনজিও হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্টের চিফ অব পার্টি ড. হালিদা আক্তারবলেন, মাতৃস্বাস্থ্য এবং নবজাতকের মৃত্যুহার কমিয়ে আনা এমডিজি গোলের অন্যতমএকটি অংশ। এমডিজি গোল অর্জনে বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়ে গেছে।
২০০৫ সালেমাতৃমৃত্যুর হার ছিলো প্রতি লাখে ২৩৩ জন, ২০১৪ সালে সে হার এখন ১৯৪। লক্ষ্য২০১৫ সালের মধ্যে ১৪৩-এ নামিয়ে আনা। তবে গর্ভকালীন কিছু জটিলতার কারণে এখনোমাতৃমৃত্যুর হার আশানুরূপ হারে কমানো সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্যহলো-এক্লামশিয়া, প্রসবপরবর্তী সময়ে রক্তক্ষরণ, খিচুনি এবং মায়ের আয়রনেরঅভাব। একজন মায়ের সুস্বাস্থ্য অনেকখানি নির্ভর করে তার সঠিক সময়ে বিয়ে এবংসন্তানধারণ করার সময়ের ওপর। আমাদের দেশে এখনো ৭৮ শতাংশ কিশোরীর ১৮ বছরেরআগেই বিয়ে হয়ে যায় এবং ১৯ বছর বয়সের আগেই সন্তানধারণ করে। এতে করে অনেকজটিলতার সৃষ্টি হয়।অবকাঠামোগত বিষয়গুলো এ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে।
স্টেপস টুয়ার্ডসডেভেলপমেন্টের তথ্যানুযায়ী, দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোসমস্যার কারণে হাসাপাতালে যেতে পারে না অসংখ্য নারী। অনেক সেবাগ্রহীতাহাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছুলেও চিকিৎসকের অভাবে মিলছে না উপযুক্ত সেবা। আবারঅনেকে পুরুষ ডাক্তারের হাতে প্রসব করাতে রাজিও হন না। গ্রামীণ, পাহাড়ি জনপদও চরাঞ্চলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র দুর্লভ এবং সেখানে সহজে চিকিৎসকরা থাকতে চাননা। ফলে এসব এলাকায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় ওঝা, ফকির কিংবা হাতুড়েডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়। এসব কারণে নিরাপদ মাতৃত্ব হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ।ফলে বেড়ে চলে মা-শিশুর মৃত্যুর হার। নগরকেন্দ্রিক স্বাস্থ্যসেবা বাজারমুখী, ব্যবসাকেন্দ্রিক ও মুনাফাসর্বস্ব হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা কিনতে হয় চড়াদামেরবিনিময়ে। মুনাফার লোভে অনেক সময় প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থাই নিরাপদ মাতৃত্বেরবিষয়টিকে আরো জটিল করে তোলে।
পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে শতকরা ৬৮ ভাগ গর্ভবতী নারী একটিপ্রসবপূর্ব (এএসসি) সেবা এবং ২৬ ভাগ নারী চারটি প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণ করেথাকেন। গর্ভকালীন শতকরা ১৫ জন নারীই নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ জটিলতায় ভোগেন, যামাতৃমৃত্যুর জন্য দায়ী। এসব মোকাবেলা করতে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালছাড়াও ৫৯টি জেলা হাসপাতাল, ৬৮টি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র এবং ১৩২টি উপজেলাস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসব জরুরি প্রসূতি সেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করারলক্ষ্যে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।৬৫তম জাতিসংঘ সাধারণ সভার ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৫ সাল নাগাদ দক্ষ প্রসবসেবাদানকারী কর্তৃক প্রসব করানোর হার বৃদ্ধিকল্পে তিন হাজার জন মিডওয়াইফতৈরির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ৫৯৬ জন নার্সকে ৬ মাসব্যাপি পোস্ট বেসিকধাত্রী বিদ্যালয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৯৪ জন নার্স বর্তমানেমিডওয়াইফ কোর্সে এবং ৪৩০ জনকে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে প্রশিক্ষণদেয়া হচ্ছে। আরেকটি বিশেষ কর্মসূচি নিরাপদ মাতৃত্বকে ঘিরে পরিচালিত হচ্ছে।মাতৃমৃত্যু হার কমানোর লক্ষ্যে এবং প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের জন্য ডিমান্ডসাইড ফাইন্যান্সিংশীর্ষক মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম চালু করা হয়েছে।বর্তমানে এ কার্যক্রম ৪১টি জেলার ৫৩টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। চলমানসেক্টর কর্মসূচিতে (২০১১-১৬) প্রতি বছর ২০টি করে মোট ১০০টি নতুন উপজেলায় একার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।