মহাসিন আলী: কলমিশাক এখন আর অবহেলার নয়। রীতিমতো মাঠে চাষ হচ্ছে এ শাক। লালশাকের সাথে পাল্লা দিয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। বিভিন্ন বীজ কোম্পানির সহায়তায় বিগত কয়েক বছর ধরে মেহেরপুরের চাষিরা মাঠে কলমিশাকের বীজ উৎপন্ন করে বিক্রি করছেন। বর্তমানে মেহেরপুরের মাঠে শাক খাওয়ার জন্য চাষ হচ্ছে কলমি।
খাল-বিল, পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয়ে অযত্নআর অবহেলায় কলমিশাক উৎপন্ন হয়। দরিদ্র শ্রেণির মানুষ জলাশয় থেকে কলমিশাকের ডগা ছিঁড়ে এনে রান্না করে খায়। সেই কলমিশাক এখন আর দরিদ্র শ্রেণির মানুষের খাবার নয়। মেহেরপুরের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কলমিশাক। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এর পুষ্টিগুণ জেনে বর্তমানে বাজার থেকে কলমিশাক কিনে বাড়িতে নিয়ে রান্না করে খাচ্ছেন। নানা পুষ্টিগুণে ভরা কলমিশাক একটি সুস্বাদু খাবার।
মেহেরপুর সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার কাজল এলাকার মাঠে কলমিশাকের বীজ উৎপন্ন হতে দেখেন। তিনি ভাবলেন বিভিন্ন বীজ কোম্পানি কলমি বীজ কেনেন। তিনি গেলো চৈত্রের শেষে ১৫ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে কলমিচাষ শুরু করেছেন। তিনি এতে সফলতা পেয়েছেন। তার কলমিক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষেত যেন সবুজের চাদরে ঢাকা।
কাজল জানান, চাষ দেয়ার পর তার ওই জমিতে তিনি ৪ কেজি বীজ বুনেছেন। যার দাম মাত্র ৪শ’ টাকা। ক্ষেতে মাঝে মাঝে পানি দিতে হচ্ছে। গাছের গোড়ায় রস থাকলে ক্ষেতে সেচ দিতে হয়না। এবারের আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় বারবার সেচ দিতে হচ্ছে। গত দেড় মাসে ওই জমিতে তার মোট খরচ হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। এর মধ্যে দু বার ক্ষেত থেকে কলমি কেটে বিক্রি করেছেন। খরচ বাদ দিয়ে লাভ এসেছে ১৫ হাজার টাকা। একটু যত্ননিয়ে আরো দুবার ক্ষেত থেকে কলমি কাটা যাবে। প্রতি আঁটি (এক কেজি) কলমি বাজারে পাইকারি বিক্রি করছি ১০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা প্রতি অঁটি বিক্রি করছেন ১৫ টাকায়। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সফলতা পাওয়ায় তিনি সামনের বার আরো বেশি জমিতে কলমিশাকের চাষ করবেন।
যাদবপুর গ্রামের লাভলু, মনিরুল, আনারুল, চাঁদ আলীসহ বেশ কয়েকজন চাষি বিভিন্ন বীজ কোম্পানির সহযোগিতায় কলমিশাকের চাষ করেন। তারা শাকের জন্য চাষ করেন না। বীজের জন্য চাষ করেন।
কলমি বীজচাষি লাবলু বলেন, ৮-১০ বছর ধরে বিএডিসি, লাল তীর, মেটাল সীড, গ্যাটকো সীডসহ বিভিন্ন কোম্পানির সহযোগিতায় এলাকার বেশ কিছু চাষি কলমিশাক চাষ করে বীজ উৎপাদান করছেন। ওই বীজ ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা মণ দরে কোম্পানি কিনে নিয়েছে। বর্তমান বাজারে এ বীজের দাম কিছুটা কমে গেছে। তিনি আরো বলেন, কলমি বীজ উৎপাদনের জন্য ভাদ্র মাসে ইরি-বোরো ধানের মতো ক্ষেত তৈরি করে ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা চারা প্রস্তুতকৃত ক্ষেতে রোপণ করতে হয়। এর আগে ধানের মত বীজতলা তৈরি করে নিতে হয়। কলমী ক্ষেতে সব সময় পানি থাকতে হয়। ৪ মাসের এ ফসলে ফুল থেকে বীজ তৈরি হলে ক্ষেত থেকে বীজ কেটে রৌদ্রে শুকাতে হয়। পরে প্রস্তুতকৃত বীজ বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়। তিনি আরো বলেন, এক একর জমির কলমির বীজ তৈরি করতে চাষ, সেচ, সার ও লেবার খরচ বাবদ প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ওই জমির উৎপাদিত বীজ গেলো বার ৭৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে কলমিশাকের বীজ উৎপাদনকারী অনেক চাষি বললেন, বীজ তৈরির চেয়ে কলমিশাকচাষে খরচ কম এবং লাভ অনেক বেশি। বিধায় তাদের অনেকে সামনের মরসুমে বীজচাষের পরিবর্তে কলমিশাক চাষ করবেন।