ছেলেকে ফিরে পেতে সারাজীবন রোজা রাখার প্রতিজ্ঞা
বাজারগোপালপুর প্রতিনিধি:হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে ফিরে পেলে সারাজীবন রোজা রাখবেন।মসজিদে হাত রেখে শপথ করলেন ঝিনাইদহের বাজারগোপালপুরের ভেজিরন নেছা। বাড়ি এসে দেখলেন তার ছেলে শহিদুল ইসলাম পাড়ার অন্য ছেলেদের সাথে খেলা করছেন। আর সেই পণকে রক্ষা করতেই দীর্ঘ ৪১ বছর রোজা করছেন তিনি। শুধু ইসলামের বিধিমোতাবেক বছরে ৫টি রোজা ছাড়া দীর্ঘদিন তিনি এ রোজা করে আসছেন। ভেজিরন নেছার ছেলেমেয়ে সবাই আছেন। তারপরও শেষ বয়সে তিনি এক মানসিক ভারসাম্য এক মেয়েকে নিয়ে একটি চানাচুর ফ্যাক্টরিতে সপ্তায় তিনদিন ডে হাজিরায় কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
দীর্ঘদিন রোজা রেখেও কেমন চলছে তার সংসার এ বিষয়ে কথা হয় ভেজিরন নেছার সাথে। তিনি জানান, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় শহিদুলের বয়স ৭/৮ বছর। একদিন হঠাৎ করেই শহিদুল হারিয়ে গেলো। নিকটজনদের বাড়িতে অনেকবার খোঁজাখোঁজি করা হলো। এরপর আমার পিতা ছোট ছেলে-মেয়ে, গরিব, ভিক্ষুকদের মাঝে খাদ্য বিতরণের সিদ্ধান্ত ঠিক করলো। শুরু করা হলো বিভিন্ন দরগায় ছোট ছেলে-মেয়ে ও গরিব-ফকিরদের মাঝ খাবার বিতরণ। আমরা ভেবেছিলাম শহিদুল ছোট মানুষ। ক্ষুধার্ত থাকলে হয়তো এসব জায়গায় খানা খেতে আসবে। প্রায় ৪মাস ধরে চলে এমন খোঁজাখুঁজি আর পরিচিত জায়গায় খাদ্য বিতরণ। কোনো লাভ হলোনা। দীর্ঘদিনেও শহিদুলকে পাওয়া গেলো না। সবাই তার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিলো। কিন্তু আমি একা একা বিভিন্ন লোকজনের নিকট খোঁজ নিতে লাগলাম। একদিন গ্রামেরই পুরাতন মসজিদপাড়ায় গেলাম। সেখানে পাড়ার লোকজনের সাথে ছেলের ব্যাপারে কথা হলো। সন্ধ্যার আগে বাড়ির ফিরে যাওয়ার পথে কি যেন মনে হলো,মসজিদের নিকট গেলাম। মসজিদে হাত রেখে ছেলেকে ফিরে পেতে পণ করলাম। যতোদিন বেঁচে থাকি, ততোদিন রোজা করে যাবো। বাড়ি ফিরে দেখি শহিদ অনেক আগেই বাড়ি চলে এসেছে। একথা আমাকে জানানো জন্য লোকজন আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমি দেখলাম পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলা করছে। আমার প্রতিজ্ঞার কথা সবার জানালাম। এ ব্যাপারে কেউ কোনো সিদ্ধান্ত দিলোনা। গেলাম মসজিদের ইমামের কাছে। তিনি জানালেন, বছরে ৫টি রোজা ছাড়া বাকি দিনগুলোতে রোজা রাখার ব্যাপারে ইসলামে বিধান আছে। কিন্তু আমার এ পণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিলোনা। সেই থেকে দীর্ঘদিন যাবত রোজা রাখছি। তবে এ রোজা রাখার জন্য কোনো কষ্ট হয়না। বরং শরীর সুস্থই আছেন বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, তিন ছেলেও দু মেয়ে। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। অন্য মেয়ে মাঝে মধ্যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ছেলেরা গরিব। তারা পরের জমি লিজ নিয়ে চাষ করে। এখান থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে তাদের সংসার চলে। তাদেরও সংসারে ছেলেমেয়ে আছে। সবাই পৃথক সংসার। আর আমি বাড়ি থাকা মেয়েকে নিয়ে আলাদা করে খায়। ছেলেরা কিছু চাল দেয়। আর আমি পাশে একটা চানাচুর ফ্যাক্টরিতে সপ্তায় ৩ দিন, দিনহাজিরায় কাজ করি। আমার খাবারের জন্য কোনো চিন্তা করতে হয়না।রোজা থাকি বলে আনেকেই আমার একটু খাওয়াতে চাই। তবে ছেলেরা তার খোঁজখবর নিলেও তারা যেন সুখে শান্তিতে থাকে এটাই তার প্রত্যাশা।