সাংবাদিক সদরুল নিপুলের ঘাতক শনাক্তে পুলিশের নানামুখি তদন্ত অব্যাহত

 

মোমিনপুর স্টেশনের চিহ্নিত মাদকচক্রের গা ঢাকা

স্টাফ রিপোর্টার: সাংবাদিক সদরুল নিপুলকে হত্যা করা হয়েছে। এ মর্মে অভিযোগ তুলে পোড়াদহ জিআরপি থানায় মামলা দায়ের করা হলেও গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আসামিদের তেমন কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। হত্যার নেপথ্য নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনা চললেও ঘাতকচক্রের ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

সূত্র বলেছে, মোমিনপুর স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে মাদকের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলা চক্রের হোতাসহ তার সাঙ্গাপাঙ্গদের প্রকাশ্যে দেখা মিলছে না। পুলিশ এদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি মোবাইলফোনের কললিস্ট পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। হত্যা কী মোমিনপুর স্টেশন প্লাটফর্মেই করা হয় নাকি কান্তপুর ব্রিজ মোড়ে? এ নিয়েও প্রশ্ন দানা বেধেছে। পুলিশ কান্তপুর ব্রিজ মোড়ের চিহ্নিত ছিনতাইকারীদেরকেও সন্দেহের বাইরে রাখতে রাজি নয়। তবে মোমিনপুর স্টেশনের চিহ্নিত মাদকচক্রকেই সন্দেহের তালিকার শীর্ষে রেখে নানাভাবে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। সাংবাদিক সদরুল নিপুলকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করে ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য রেললাইনের মাঝে ফেলে রাখা হয় বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পেয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের মধ্যেও হত্যা নিয়ে সন্দেহ নেই। যে ইট দিয়ে মাথায় আঘাতের পর আঘাত করা হয়, সেই রক্ত ও মাথার চুল লেগে থাকা ইটটিও স্টেশন প্লাটফর্মের অদূরে পাওয়া গেছে।

সাংবাদিক সদরুল নিপুলের স্ত্রী নিলিমা বাদী হয়ে পোড়াদহ থানায় গতকাল মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার রেলওয়ে পুলিশের পড়লেও চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। পুলিশসূত্র বলেছে, সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যাকাণ্ডকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘাতক যারাই হোক, তাদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতারের সকল প্রকারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। এদিকে পারিবারিক উদ্যোগে আজ বাদ আছর নীলমণিগঞ্জস্থ নিজ বাড়িতে বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া এলাকাবাসীর উদ্যোগে নীলমণিগঞ্জের দুটি জামে মসজিদে আজ বাদ জুম্মা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এ মিলাদ মাহফিলে সকলকে শরিক হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমিনপুর ইউনিয়নের নীলমণিগঞ্জের মরহুম নূর মোহাম্মদের ছেলে সদরুল নিপুল ছিলেন দৈনিক মাথাভাঙ্গার মোমিনপুর প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। তিনি এলাকার সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে যেমন সংবাদ পরিবেশন করেছেন, তেমনই নীলমণিগঞ্জ বাজারের রেলওয়ের জমি জবরদখলদারদের বিরুদ্ধেও স্বোচ্চার ছিলেন। বাড়ির অদূরবর্তী মোমিনপুর স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে মাদকের স্বার্গরাজ্য গড়ে তোলা ও আমগাছ ঠেকানো চক্রসহ রেলয়ের গাছ চুরি রোধেও দায়িত্বপালন করেছেন। এরই মাঝে গত ২০ মে রাতে তিনি নৃশংসতার শিকার হন। তাকে মেরে রেললাইনের মাঝে ফেলে রাখা হয়। ট্রেনে কেটে ক্ষতবিক্ষত হয় নিপুলের নিথর দেহ। পরদিন ২১ মে ভোরে স্থানীয়রা ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে এলাকাবাসীকে জানায়। পরিবারের সদস্যরা লাশ শনাক্ত করেন। জিআরপি’র চুয়াডাঙ্গা ফাঁড়ি ইনচার্জ লাশ উদ্ধার করেন। ওইদিনই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। বাদ আছর গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। গোটা এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ ঘাতকদের শনাক্ত করে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের ঘোষিত কর্মসূচিতে দৈনিক মাথাভাঙ্গার সকল সাংবাদিককে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মাথাভাঙ্গা সম্পাদক সরদার আল আমিন।