আকুতি মিনতিতেও দেখা নেই বৃষ্টির
মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গার তাপমাপা যন্ত্রের পারদ গতকাল বৃহস্পতিবার কিছুটা নামলেও তীব্র খরায় পুড়েছে এলাকার মানুষ। মেহেরপুরের গোভীপুরে একজন হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন। আবহাওয়া অধিদফতর গতকালও চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টির তেমন পূর্বাভাস দিতে পারেনি। গ্রামে গ্রামে শিশু-কিশোরসহ নারী-পুরুষ কাদা মেখে বার করে বৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে এলেও দেখা নেই যেমন বৃষ্টির, তেমনই বিভিন্ন স্থানে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইশতেসকার নামাজও আদায় করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। গতকাল কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে এ নামাজ আদায় করে বৃষ্টির জন্য মোনাজাত করা হয়।
চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রাণিকূল ওষ্ঠাগত। মাঠের ক্ষেত পাট, আখ, কলাসহ সকল প্রকারের আবাদ বিপর্যয়ে কৃষককূল দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। জ্যৈষ্ঠ মাস তথা মধুসাসে বৃষ্টির অভাবে আম, লিচুর ফলন বিপর্যয়ে হতাশাগ্রস্ত বাগানমালিকসহ বাগানের ফল ব্যবসায়ীরা। গতপরশু বুধবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যা ৫৪ বছরের রেকর্ড ছোঁয়ার উপক্রম। গতকাল অবশ্য দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে ৪০ দশমিক ৬ এবং সর্বনিম্ন রংপুরে ২২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫/৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামে হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন দুলাল হোসেন (৬০) নামের এক ব্যক্তি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে নিজ বাড়িতে কাজ করার সময় হঠাত অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রচণ্ড খরতাপে কাজ করার কারণে তিনি হিটস্ট্রোকের শিকার হয়ে মারা গেছেন বলে মন্তব্য করেন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক।দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টির কারণে তীব্র খরা আর দাবদাহে চলতি সপ্তাহে আরো একজন হিটস্ট্রোকে মারা গেছে বলে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন। গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের হাশেম আলী (৫৮) হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন।
আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাসে বলেছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপ উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটা আরোও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী এবং কুষ্টিয়া অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ঢাকা ও রংপুর বিভাগসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্ট অঞ্চলসমূহ এবং রাঙ্গামাটি, কুমিল্ল, চাঁদপুর, মাইজর্দীকোর্ট, ফেনী, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
তীব্র দাবদাহে পুড়ছে কুষ্টিয়া অঞ্চল, জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। প্রচণ্ড খরায় কর্মক্ষম মানুষ ক্লান্ত ও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বুধবার জেলার দৌলতপুরে তাপমাত্রা ছিলো ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় দৌলতপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বৃষ্টি কামনা করে মহান আল্লাহ পাকের দরবারে হাত তুলে দোয়া করছেন কয়েকশ মানুষ।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর জাফরপুর গ্রামের শিশু-কিশোর বৃষ্টির জন্য গর্ত খুঁড়ে কাদা করে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে। তারা শ্লোক বলতে থাকে ‘ও ব্যাঙ তুই প্যাক কর ডেংগা ডুংগা এক কর, কালো মেঘ দুড়ুম দাড়ুম, দুধেমেঘে পানি, মা খাকি জ্বলে মরলো দাও আল্লাহ পানি’ বলে গান গেয়ে বৃষ্টিকে আহ্বান করে।