পুলিশি অভিযানে কচুইখালী গ্রামের আটক ১৪ : গোটা এলাকাজুড়ে টান টান উত্তেজনা অব্যাহত
গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কচুইখালী ও দিঘলকান্দি গ্রামের মানুষের মধ্যে বিবাদমান পরিস্থিতি প্রতিহিংসার রূপ নিয়েছে। ছোটখাটো কয়েকটি ঘটনার মধ্যদিয়ে বিরাজমান বিভেদ আরো তিক্ত সম্পর্কের দিকে ঠেলে দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কচুইখালী গ্রামের মানুষের নগ্ন হামলার শিকার হয়েছে দিঘলকান্দি গুচ্ছগ্রামের নারী-পুরুষ ও ঘড়বাড়ি। অতর্কিত হামলা চালিয়ে ৪টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ৬টি বাড়িতে ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়েছে। তবে পুলিশও কঠোরত অবলম্বন করে হামলার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ১৪ জনকে আটক করেছে। গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে কচুইখালী গ্রাম। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভূক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে ওই দু গ্রামবাসীর মধ্যে গোরস্তানের আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে হয়েছিলো। বিষয়টি পরবর্তীতে মীমাংসা হলেও রেশ কাটেনি। গতকাল বিকেলে দিঘলকান্দি গুচ্ছগ্রামের লাল চাঁদের ছেলের সুন্নতে খাৎনা অনুষ্ঠানে কচুইখালী গ্রামপন্থিদের দাওয়াত না দেয়ায় চাপা উত্তেজনা চলছিলো। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে বিকেলে দিঘলকান্দি গুচ্ছগ্রামের মাঠের ক্ষেতে ছাগলে ঘাস খাওয়া নিয়ে মৃত রবগুল আলীর বিধবা মেয়ে সুফিয়া খাতুনের সাথে একই গ্রামের শকমন আলীর স্ত্রী সাফিয়া খাতুনের চুলোচুলি বাধে। মীমংসায় এগিয়ে আসেন ওই গ্রামের আব্দুল হান্নান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাঠে কর্মরত কচুইখালী গ্রামের পাচু মিয়ার ছেলে আবু তাহের হান্নানের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। শুরু হয় দু গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা। সন্ধ্যায় কচুইখালী গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুস সামাদ, আনারুল ইসলাম, কালু মিয়া ও হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে শতাধিক লোক দিঘলকান্দি গ্রামের লোকজন ও বাড়িঘরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী মর্জিনা খাতুন ও আলী আকবর জানান, লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্রশস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ মানুষ আকস্মিক হামলা চালায়। এতে দিশেহারা দিঘলকান্দি গুচ্ছগ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশুরা গ্রাম ছেড়ে দ্বিগদ্বিগ ছুটতে থাকেন। ভাষান আলী, বাবলু, খোকন, জান্নাত, লাল চাঁদ ও মন্টুর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুরসহ লুটপাট করা হয় শফিকুল ইসলাম, গোলাম হোসেনসহ ৫টি বাড়িতে। চাঁদ আলীর ছেলে সুন্নতে খাৎনা অনুষ্ঠানের খাবার-দাবার বিনষ্টসহ বাড়িঘরেও ভাঙচুর লুটপাট করা হয়। হামলার ঘটনায় গ্রামের ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
এদিকে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসিসহ পুলিশের কয়েকটি দল। পরিস্থিতি শান্ত করার পাশাপাশি আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন পুলিশ সদস্যরা। আগুন নেভানো প্রচেষ্টার মাঝেই পৌঁছে যান মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা। আগুন নেভানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর বাস্তব অবস্থা পর্ববেক্ষণ করা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার শেখ ও সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আব্দুল জলিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরিস্থিতি শান্ত হলে পুলিশের সহযোগিতায় আহতদের কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তমছের আলী (৪৪), মহিদুল ইসলাম (৩৩), মন্টু মিয়া (২৮), আব্দুল হান্নান (৫৩) ও রফেজানকে (৯০) মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে এবং সাফিয়া খাতুনকে (৪০) গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শহিদুল ও মন্টু মিয়াকে রাজশাহী এবং সাফিয়া খাতুনকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। বাকিদের স্থানীভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, গতকালের ঘটনার মূল নায়ক সাফিয়া খাতুন দোষ এড়াতে নিজের ঘরে নিজে আগুন দেয়। নাটক ধরা পড়লে গ্রামবাসী তাকে প্রতিরোধ করে। বিষয়টির সত্যতাও মিলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পরিস্থিতির প্রাথমিক সামাল দিয়ে আটক অভিযান শুরু করে গাংনী থানা পুলিশ। হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে কচুইখালী গ্রামের ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান ওসি রিয়াজুল ইসলাম। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।