চুয়াডাঙ্গার ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের খুলনা জয়
আব্দুস সালাম: চুয়াডাঙ্গার ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা শুধু চুয়াডাঙ্গায় নয়, খুলনা বিভাগীয় পর্যায়েও নিজেদের দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছে। সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ক ও খ বিভাগে যে দুজন প্রথম স্থান অধিকার করেছে এরা দুজনই চুয়াডাঙ্গার সন্তান।
৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি নিয়ে গঠিত ক বিভাগে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী সেজুতি রহমান মণ্ডল ও ৯ম থেকে ১০ শ্রেণি নিয়ে গঠিত খ বিভাগে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র সৌমিক দাস হিরন প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
সেজুতি দর্শনা কেরুজ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। চিনিকলের পাশেই তার বসবাস। চিনি নিয়ে গবেষণায় সে খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। কী করেছিলো সেজুতি রহমান? সহজ পদ্ধতিতে চিনিকে শুষ্ক অবস্থায় রেখে ময়লামুক্ত করার প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছিলো সে। প্রকল্পের নাম ছিলো- চিনি থেকে পরিশ্রাবণ পদ্ধতিতে বিশোধন প্রক্রিয়া। বিচারকদের দৃষ্টি কেড়েছে। প্রথম হয়েছে। সেজুতি রহমান মণ্ডল দর্শনা কেরুজ স্কুলপাড়ার মিজানুর রহমান মণ্ডল ও আক্তার জাহান শিরিনের মেয়ে।
সৌমিক দাস হিরন চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র। কেদারগঞ্জপাড়ার হরিদাস দাস ও পলি দাসের ছেলে। আশপাশে যখন দুর্ঘটনার মহোৎসব। সড়ক যখন মৃত্যুপুরি তখন সৌমিক দাস হিরন দুর্ঘটনা রোধের উপায় খুঁজে চমৎকার এক প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছিলো খুলনায় অয়োজিত বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতার আসরে। সড়কে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালালেই ধরা পড়বে চালক। চিহ্নিত হবে গাড়ি। কীভাবে সম্ভব? তারই সমাধান দিয়ে সৌমিক কেড়েছে বিচারকদের দৃষ্টি। তার প্রকল্পের নাম ছিলো- স্পিড কন্ট্রোলার অ্যান্ড লাইট কন্ট্রোলেটেড সিকিউরিটি সিস্টেম। সৌমিক দোকানে চুরিরোধে চোর ধরারও সিগন্যাল আবিস্কার করে বিচারকদের চমকে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতার আসর বসে। জেলা পর্যায়ে নির্বাচিতরা বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ পায়। গতকাল মঙ্গলবার খুলনার বয়রা মহিলা কলেজে ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের প্রতিযোগিতার আসরে চুয়াডাঙ্গার দুজনের প্রথম স্থান অধিকারকে শিক্ষানুরাগী মহল ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন। অনেকে এরকমই মন্তব্য করে বলেছেন, আগামী ২৮ মে ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হবে। এ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করতে পারলে শুধু এক লাখ টাকাই নয়, ৪টি দেশ সরকারি খরচে ভ্রমণের সুযোগ পাবে।
সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ই নয়, প্রতিযোগিতা ভাষা সাহিত্য, বাংলাদেশ স্টাডিজ, গণিত ও কম্পিউটার বিষয়ও রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছে ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে ক বিভাগ থেকে সরোজগঞ্জ হাইস্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র আসিফ আহমেদ, খ বিভাগ থেকে জীবননগর থানা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আফরিন আঁখি এবং গ বিভাগ থেকে জীবননগর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয়ে প্রথম হয়েছে ক বিভাগ থেকে ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র ফাহিম আসহাব রশীদ, খ বিভাগ থেকে দামুড়হুদা পাইলট হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র নাসিম রেজা এবং গ বিভাগ থেকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছাইমুম শাহরিয়ার।
গণিত ও কম্পিউটার বিষয়ে জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছে ক বিভাগ থেকে নীলমণিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র জুবায়ের হোসেন, খ বিভাগ থেকে ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র রাদ সাহমাত এবং গ বিভাগ থেকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সামিউল সাদিক মুয়িদ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছে গ বিভাগ থেকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র পল্লব দে। জেলা পর্যায়ে ক ও খ বিভাগ থেকে যারা প্রথম হয়েছিলো তারাই বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম হয়েছে। গ বিভাগ থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম হয়েছে যশোর মনিরামপুর হাইস্কুলের শিক্ষার্থী।