বাংলাদেশ রেডক্রসের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. শামসুজ্জোহা কোরাইশী আর নেই

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ রেডক্রসের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি মুজিবনগর সরকারের মেডিকেল অফিসার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. শামসুজ্জোহা কোরাইশী (৮২) আর নেই। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের মাজিলা গ্রামের নিজ বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে….. রাজেউন)।

নিহতের পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে,ডা. শামসুজ্জোহা কোরাইশী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও একমাত্র ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বাদ মাগরিব স্থানীয় মাজিলা ঈদগায় জানাজা শেষে গোরস্তানে দাফন করা হয়। এর আগে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।এসময় রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের পক্ষ থেকে ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. সেলিম উদ্দিন খান শ্রদ্ধা জানান।

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিমউদ্দিন খান ও সেক্রেটারি ফজলুর রহমান,কার্যকরী সদস্য হুমায়ুন কবীর মালিক,অ্যাড. শামসুজ্জোহা ও অ্যাড. রফিকুল ইসলাম শোক প্রকাশ ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

ডা. শামসুজ্জোহা কোরাইশী বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে ডা. শামসুজ্জোহা কোরাইশী এমবিবিএস পাস করেন। তৎকালীন চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর মহাকুমার হেলথ্ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা শহরে ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্কটালিসহ দেশ-বিদেশের সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ রেডক্রসের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে ডা. আসহাব-উল হককে চেয়ারম্যান,ডা. শামসুজ্জোহা কোরাইশীকে মহাসচিব,অ্যাড. ইউনুছ আলী,মির্জা সুলতান রাজা,হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি ও অ্যাড. মো. জাকারিয়াসহ গণমান্য ব্যক্তিগণকে মনোনীত করে কমিটি গঠন করা হয়।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন হওয়ার পর ডা. শামসুজ্জোহা কোরাইশী স্বপরিবারে এবং কমিটির সকল সদস্য ভারতে চলে যান। ভারতে যেয়ে কৃষ্ণনগর কোর্টচত্বর সংলগ্ন এলাকায় বাংলাদেশ রেডক্রস অফিস স্থাপন করা হয়। রেডক্রস কমিটি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. আসহাব-উল হক জনমত গঠন এবং যুদ্ধকালীন ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহের জন্য বিশ্বের ১৮-২০টি দেশে সফর করেন। মহাসচিব ডা. শামসুজ্জোহা কোরাইশী সদস্যগণকে সাথে নিয়ে বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করতেন এবং সেনাক্যাম্প,মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প ও শরণার্থী ক্যাম্পে পাঠাতেন এবং নিয়মিত পরিদর্শন করতেন। দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ রেডক্রস অফিসের আসবাবপত্র ট্রাকযোগে কুষ্টিয়া জেলা ইউনিটে পাঠানো হয়। বর্তমানে আসবাবপত্রগুলো কুষ্টিয়া ইউনিটে রক্ষিত আছে। ১৯৯৩ সালে খুলনা ব্লাড ব্যাংকের মেডিকেল অফিসার হিসেবে ডা. শামসুজ্জোহা কোরাইশী অবসর গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. আসহাব-উল হক ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর তার নিজ বাড়ি চুয়াডাঙ্গা মুক্তিপাড়ায় অসুস্থজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের নেতৃবৃন্দ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের মাজিলা গ্রামের ডা. শামসুজ্জোহা কোরাইশীর নিজ বাড়িতে তার খোঁজখবর নেয়ার জন্য কর্মকর্তারা সেখানে যান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অ্যাড. সেলিম উদ্দীন খাঁন,সেক্রেটারি ফজলুর রহমান,কার্যনির্বাহী সদস্য হুমায়ুন কবীর মালিক ও অ্যাড. রফিকুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত,রেডক্রসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. আসহাব উল হক ও মহাসচিবকে কেন্দ্রীয় রেডক্রিসেন্ট কমিটি আজও স্বীকৃতি দেয়নি। চুয়াডাঙ্গা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট দীর্ঘদিন ধরে ডা. আসহাব-উল হক এবং ডা. শামসুজ্জোহা কোরাইশীকে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মহাসচিব হিসেবে স্বীকৃতি দানের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দাবি করে আসছে।