গ্রেফতারের পর মাসুদ রানাও রিমান্ডে
স্টাফ রিপোর্টার: রিমান্ডে থাকা সামরিক বাহিনীর চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদমাহমুদ ও মেজর আরিফ হোসেন দায়িত্বে অবহেলার জন্য দায়ী করেছেন অপরচাকরিচ্যুত কর্মকর্তা র্যাবের নারায়ণগঞ্জের ক্যাম্প প্রধান লে. কমান্ডার এমএম রানাকে। আর রানা গতকাল রোববার আদালতে বলেছেন, অপহরণের স্থান ও যেখানথেকে লাশ উদ্ধার হয়েছে এর কোনোটিই আমার এলাকা নয়। এ এলাকার দায়িত্বে ছিলেনমেজর আরিফ হোসেন।ফলে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায় কার?তা নিয়ে নিজেদেরমধ্যে ঠেলাঠেলিতে জড়িয়ে পড়েছেন র্যাবের সাবেক এ তিন কর্মকর্তা।
র্যাব-১১’র সাবেক কমান্ডিং অফিসার তারেক সাঈদ মাহমুদ ও আরিফ হোসেনকে গতকাল ৫দিনের রিমান্ডের প্রথমদিন নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা।জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনে হত্যাকাণ্ডের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনোজিজ্ঞাসাবাদই করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন সিনিয়রকর্মকর্তা। তিনি বলেন, প্রথম দিন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতারবিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
রানা ৭ দিনের রিমান্ডে: এদিকের্যাবের সাবেক কর্মকর্তা এমএম রানাকে গতকাল ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছেপুলিশ। গতকাল বিকালে নারায়ণগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেএম মহিউদ্দিনেরআদালতে তুমুল হইচই ও বাইরে আইনজীবীদের চরম বিক্ষোভের মধ্যে এ রিমান্ডশুনানি হয়। একই আদালতে সেভেন মার্ডারের ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে গ্রেফতারকৃতমহিবুল্লাহ রতন নামের একজনকেও ৪ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। রিমান্ড শেষেনেয়ার সময়ে রানাকে লক্ষ্য করে অশালীন গালিগালাজ করেন বিক্ষুব্ধ আইনজীবী ওবিভিন্ন সময়ে অপহৃত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা। তবে এদিন রানাকে আগেথেকেই হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আদালতে আনা হয়।
এর আগে শনিবার রাত দেড়টারদিকে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থেকে রানাকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ জেলাগোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রানাকে গ্রেফতারের পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়েতাকে নারায়ণগঞ্জের মাসদাইরে পুলিশ লাইনে নেয়া হয়। বিকেল পৌনে ৫টার দিকেকঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মাথায় হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে তাকেজুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে জনাকীর্ণ আদালতেরিমান্ড শুনানি হয়। তখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মামুনুররশিদ মণ্ডল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এমএম রানাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরকরেন। বিকেল ৫টায় রানাকে আবারো কঠোর নিরাপত্তায় পুলিশ লাইনে নেয়া হয়।
তারেকসাঈদ মাহমুদ ও আরিফ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদকারী একজন কর্মকর্তা জানান, প্রথমদিন জিজ্ঞাসাবাদে বেশ স্বাভাবিক ছিলেন তারা। মেজর আরিফ তেমন কোনো কথাইবলেননি। তবে লে. কর্নেল তারেক তাদের ব্যর্থতার জন্য দুষছেন লে. কমান্ডাররানাকে। তিনি বলেছেন, এলাকাটি রানার। ওই এলাকার ক্যাম্প কমান্ডার রানা। ফলেব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিলো তার। সে কেন ব্যবস্থা নেয়নি তা সেই ভালো বলতেপারবে। তবে সাবেক কমান্ডিং অফিসারের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রানা। তারদাবি এলাকা তার নয়। এলাকা মেজর আরিফের। আজ হত্যাকাণ্ডের সাথে তাদেরসম্পৃক্ততা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীদেরএকজন।
এদিকে গতকাল আদালতে হাজির করার পর রানা বেশ স্বাভাবিক ছিলেন।অপর দুজনের মতো রানাও নিজেকে একেবারে নির্দোষ দাবি করে নিজের পক্ষেবক্তব্য রাখেন আদালতে। আগে থেকেই নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় আইনজীবীরা ঘোষণাদিয়েছিলো ৭ খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের পক্ষে কোনো আইনি সহায়তা দেবেন না। তাইঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রানাকে আদালতে হাজির করা হলেও শুনানির সময়ে তার পক্ষেকোনো আইনজীবী ছিলেন না।
আদালতে রানা নিজেকে নির্দোষ দাবি করেবলেন, ঘটনাস্থল (যেখান থেকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে) ও যেখান থেকে লাশ উদ্ধারহয়েছে তার কোনোটিই আমার এলাকা নয়। পাশাপাশি ঘটনার দিন আমি নারায়ণগঞ্জেইছিলাম না। তাই এই ঘটনার কিছুই আমি জানি না।তবে তার ১০ দিন রিমান্ডেরপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন আইনজীবীরা। পরে ৭ দিন রিমান্ড দেন আদালত।
গতকালবিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন এক সাংবাদিকসম্মেলনে বলেছেন, মামলাটি সুষ্ঠুভাবেই তদন্ত চলছে। সুষ্ঠু তদন্তের জন্যযাকে প্রয়োজন তাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যেতিনজনকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে হাইকোর্টের আদেশ পালন করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে শোকজ: এদিকেনারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের ঘটনায় র্যাবের সাবেক তিনকর্মকর্তাকে কেন গ্রেফতার দেখানো হয়নি তা জানতে চেয়ে মামলার তদন্তকর্মকর্তাকে শোকজ করেছেন আদালত। আগামী ৪ দিনের মধ্যে এই শোকজের জবাব দিতেবলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কেএম মহিউদ্দিন এ আদেশ দেন বলে জানান আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেনখান।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে একসঙ্গে কাউন্সিলরনজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলেরগাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার গাড়িচালকইব্রাহিম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে৬ জন এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত সবারই হাত-পা বাঁধাছিলো। পেটে ছিল আঘাতের চিহ্ন। প্রতিটি লাশ ইটভর্তি দুটি করে বস্তায় বেঁধেডুবিয়ে দেয়া হয়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাব-১১’র তিন কর্মকর্তারবিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেন নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম। তিনিঅভিযোগ করেন, ৬ কোটি টাকার বিনিময়ে র্যাবকে দিয়ে ওই সাতজনকে হত্যাকরিয়েছেন নূর হোসেন। এরপর থেকে নূর হোসেন পলাতক রয়েছেন।