নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রনজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ ও খুনমামলা
স্টাফ রিপোর্টার:নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় অবশেষে গ্রেফতার হচ্ছেন র্যাবেরসাবেক তিন কর্মকর্তা। তাদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা দূর হয়েছে।পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠির জবাব গতকালবৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাওয়া গেছে। চিঠিতে পুলিশকে কোড অব ক্রিমিনালপ্রসিডিওর (সিআরপিসি) অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অপরদিকে নারায়ণগঞ্জেআলোচিত সাত হত্যার ঘটনায় চাকরিচ্যুত তিন র্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেফতারেআইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।গতকাল বৃহস্পতিবার সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।চিঠিতেবলা হয়েছে, সিআরপিসি অনুযায়ী এই তিন কর্মকর্তাকে এখন থেকে গ্রেফতারে আরকোনো বাধা নেই। এখন থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে যেকোনো সময় যেকোনোজায়গা থেকে গ্রেফতার করতে পারবে।সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়া গেছে। তবে চিঠির বিষয়বস্তু আমিদেখিনি। অফিস থেকে বের হওয়ার সময় চিঠি পাওয়ার কথা আমাকে ফোনে জানানোহয়েছে। যদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পুলিশকে সিআরপিসি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেবলে- তাহলে তাদের গ্রেফতারে আর কোনো আইনগত বাধা নেই।
গত ১১ মেবিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারেরসমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতের্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে অবিলম্বে গ্রেফতারে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজি) নির্দেশ দিয়েছিলেনে। হাইকোর্টের ওই আদেশের পর পাঁচ দিনেও তাকার্যকর হয়নি। হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার পর তা প্রতিপালনের জন্য আইজিপিচিঠিটি পাঠিয়ে দেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকেপ্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয়া হয়। জানা গেছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় চিঠিটি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে পাঠায়। তারপর ওই চিঠি যায় সেনা ওনৌ-বাহিনীর হাতে। সেখান থেকে জবাব পাওয়ার পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়পুলিশের চিঠির জবাব দিয়েছে। ফলে এই পাঁচ দিন চিঠি চালাচালির মধ্যে আইনগতপ্রক্রিয়া চলেছে।
পুলিশ সদর দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এখন সাবেক তিন র্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলানোহবে। যদিও তারা সেনাবাহিনীর লগ এরিয়াতেই আছেন। ফলে তাদের গ্রেফতারের জন্যপুলিশকে তেমন কোনো অভিযান চালাতে হবে না। তাদের গ্রেফতারের পরই নারায়ণগঞ্জনিয়ে যাওয়া হবে।এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলমবলেছেন, অবসরে পাঠানো সশস্ত্র বাহিনীর তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে পুলিশেরআইজিকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হাইকোর্ট আদেশ দিলেও তাদের গ্রেফতারেদেরি হওয়ায় আদালত অবমাননা হবে না। কারণ আদালত কোনো সময় বেধে দেয়নি।
প্রসঙ্গত, নিহতনজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম এ হত্যাকাণ্ডের র্যাব কর্মকর্তাদেরসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করার পর র্যাব-১১’র তত্কালীন কমান্ডিং অফিসার লে.কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এমএম রানাকেনিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর সেনাবাহিনী গত ৫ মে লে. কর্নেল তারেকসাঈদ মাহমুদ ও মেজর আরিফ হোসেনকে অকালীন অবসরে পাঠায়। আর লে. কমান্ডার এমএম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয় নৌবাহিনী।
অপরদিকে ৭ জনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনারপ্রধান অভিযুক্ত নূর হোসেনের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের টেকপাড়ার বাড়িতেমালামাল জব্দ করতে গতকাল বিকেল অভিযান চালায় পুলিশ। দুতলা ভবনের নিচতলারকলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ। অভিযানে জব্দ করামালামাল বাড়ির সামনের উঠোনে এনে জড়ো করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- ৮টি গুলিসহএকটি রিভলবার, শটগানের ৮টি কার্তুজ, দুটি ম্যাকাও পাখি, একটি হরিণের চামড়া, শাড়ি, পাঞ্জাবি, ১২টি ঘড়ি, ৫ টাকা নোটের ২টি বান্ডিল, দলিলপত্র, সিলিংফ্যান ৩টা, ২ সেট সোফা, এলইডি টিভি ৫টা, ২১ ইঞ্চি রঙিন টিভি ১টা, খেলনা ছুরি ২টা, খেলনা পিস্তল ১টা, বক্স খাট ১টা, সিডি প্লেয়ার সাউন্ডসিস্টেমসহ ২টা, ওয়ারড্রোব ২টা, শোকেস ২টা, কার্পেট, কম্বল, হাঁড়ি-পাতিলসহনিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ৫ জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানারওসি আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ৫০ সদস্যের একটি পুলিশ টিম এই ক্রোক অভিযান করেন।পুরো ক্রোক অভিযানের তদারকি করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের এনডিসি আবুলকাশেম শাহীন। এসময় সিআইডি নারায়ণগঞ্জের এএসপি এহসানউদ্দিন চৌধুরী উপস্থিতছিলেন।
এদিকে৭ জনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় র্যাবকে অভিযুক্ত করে বক্তব্য দেয়ার পরথেকে নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নজরুলের শ্বশুরশহীদুল ইসলাম। র্যাব তাকে মেরে ফেলতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।গতকাল তিনি গণশুনানিতে হাজির হয়ে র্যাবের সাবেক ৩ কর্মকর্তাসহ অভিযুক্তদেরসম্পৃক্ততার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আবারো অনুরোধ করেন।
নিহতনজরুলের ভাই আবদুস সালাম গণশুনানিতে গিয়ে তদন্ত কমিটিকে বলেন, এভাবেসার্কিট হাউজে এসে লোকজন সাক্ষ্য দিতে ভয় পায়। কারণ এখানে অনেক মিডিয়াসহলোকজনের নজর থাকায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী থাকলেও কেউ আসেনি। তাই তদন্তকমিটির উচিত ঘটনাস্থলসহ সিদ্ধিরগঞ্জে গিয়ে সাক্ষ্য নেয়া। তার এ বক্তব্যেরপর তদন্ত কমিটি গণশুনানি আরো একদিন বাড়িয়েছে। এবার গণশুনানি হবেসিদ্ধিরগঞ্জে। শুনানি চলাকালে তদন্ত কমিটির প্রধান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরঅতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, আগামী শনিবারসিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার হাউজে গণশুনানি হবে। তিনি জানান, ১২ মে ও ১৫ মে দুদিনসার্কিট হাউজে গণশুনানিতে অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তেরস্বার্থে এসব প্রকাশ করা যাচ্ছে না। গতকাল গণশুনানিতে ৮৭ জনের নামঅন্তর্ভুক্ত থাকলেও সাক্ষ্য দিয়েছেন ৬০ জন। গতকালও সবাই নূর হোসেন ওর্যাবকে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করে বক্তব্য দিয়েছে বলে জানা গেছে।