দিল্লির মসনদে বসার প্রস্তুতি নরেন্দ্র মোদির সুষমা পররাষ্ট্র রাজনাথ প্রতিরক্ষা

মাথাভাঙ্গা মনিটর: দিল্লির মসনদে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন গুজরাটেরমুখ্যমন্ত্রী বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি। গতকালবুধবার গুজরাটে আঞ্চলিক দলগুলোর সাথে মিটিং সেরেছেন। এছাড়াবিজেপির অনেকশীর্ষস্থানীয় নেতা গুজরাটের গান্ধীনগরে গিয়ে মোদির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।আলোচনা করেছেন ভবিষ্যত মন্ত্রিসভাসহ নানা বিষয়ে। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হয়েছে, বারানসী থেকেই বিজয় উৎসব করবেনমোদি। দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর অংশ থেকে১৭ মে কাশী যাওয়ারও প্রস্তুতি রয়েছে মোদির। তবে অনেকটা ভিন্ন চিত্রকংগ্রেসে। গতকাল কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রফুল্ল প্যাটেল সাংবাদিকদেরজানিয়ে দিয়েছেন, তাদের জোটে যে কেউ চাইলেই আসতে পারেন। কোনো বাধা নেই। এমনঅবস্থার মধ্যে নির্বাচন পরবর্তী ফলাফল পর্ব বেশ জমে উঠেছে। ফলাফলের আগেইমন্ত্রিত্ব, শপথসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করে নিয়েছে বিজেপি।

ক্ষমতারভাগাভাগি যেভাবে করতে পারে বিজেপি: রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরসাথে কথা বলে জানা গেছে, পোল এক্সিটে এনডিএ জোট এগিয়ে থাকলেও অতীতে পোলএক্সিটের ফল না  মেলায় এটিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না বিজেপি। তবে দলটি মনেকরছে, তারা জোটগতভাবে ২৫০টি আসন পেতে পারেন। আর বাকি ২২টি আসনের জন্য তাদেরমিত্র খুঁজতে হবে। বিজেপির পক্ষ  থেকে ইতোমধ্যেই যোগাযোগ করা হয়েছে উড়িষ্যারমুখ্যমন্ত্রী নবীন পাটনায়েকের সাথে। কারণ তার দলের সেখানে ২১টি আসনেরমধ্যে ১৩ থেকে ১৫টি আসনে জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। একই সাথে তেলেঙ্গানারাষ্ট্রসমিতির সাথেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। কারণ দলটি সেখানে কংগ্রেসের চেয়েভালো অবস্থানে থাকবে। সেখান থেকে ১০টি আসন পেলেই সরকার গঠনে কোনো সমস্যা হবেনা এনডিএর। এছাড়াবিজেপির পক্ষ থেকে আরও কিছু আঞ্চলিক দলের সাথে ভেতরে  ভেতরে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে ১৬ মে’র ফলের পর যদি দেখা যায়, এনডিএ জোটেরসরকার গঠন করতে আরও বেশি আসনের প্রয়োজন তাহলেই কেবল তৃণমূল কংগ্রেস প্রধানপশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তর প্রদেশের বহুজন সমাজপার্টির (বিএসপি) মায়াবতী এবং তামিলনাড়ুর এডিএমকের প্রধান মুখ্যমন্ত্রীজয়ললিতা জয়ারামের সাথে যোগাযোগ করবে দলটি। এদের সবার সাথেই নির্বাচনেরআগে নরেন্দ্র মোদির বাকযুদ্ধ হয়েছে। আর এদেরকে ঝামেলাও মনে করছে বিজেপি।

ওদিকে কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, এ দলটি আঞ্চলিক শক্তিশালী দলগুলোরমোদিবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগাতে চায়। কৌশল ঠিক করতে দলের সভাপতি সোনিয়াগান্ধীর সভাপতিত্বে সিনিয়র নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। দলীয় সূত্রগুলোবলছে, প্রয়োজনে কোনো তৃতীয় ফ্রন্ট সরকার গঠন করতে চাইলেও মোদিকে দমাতে সেইফ্রন্টকে সমর্থন দিতে পারে কংগ্রেস। আপাতত কংগ্রেস মনে করছে, তাদের ইউপিএজোট ১৫০টির মতো আসন পেতে পারে। তাই দলটি এখনও সেভাবে কোনো উদ্যোগ না নিলেওকথা বলছে অনেকের সাথে। তার মধ্যে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়াবতী, জয়ললিতা, কংগ্রেসের মিত্রখ্যাত উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির (এসপি)নেতা মুলায়ম সিং যাদবের সাথে। এদের সবার সাথেই কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়াগান্ধীর কিছু না কিছু সম্পর্ক রয়েছে। যেটা কাজে লাগাতে চায় দলটি।গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হচ্ছে, ইতোমধ্যেই মমতার সাথে কথা হয়েছে সোনিয়াগান্ধীর। তবে কংগ্রেসের সব হিসাব হবে কালকের পর।

আরএসএসের জরিপ:রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ গতকাল এক জরিপ প্রকাশ করেছে। জরিপে তারা বলেছে, বিজেপি এককভাবে পাবে ২২৬টি আসন। এ জরিপ সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাবলছেন, এমন সংস্থার জরিপ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের বুথফেরত জরিপে বিজেপিজোটের সরকার গঠনের সম্ভাবনা নিশ্চিত হওয়ার পরই বিজেপির শীর্ষ পর্যায়েআগামী মন্ত্রিসভা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। মতৈক্যের ভিত্তিতেমন্ত্রিসভা গঠন করাই দলের লক্ষ্য বলে জানা গেছে। এআইডিএমকে, বিজু জনতা দল ওএনসিপির মতো দলকে জোটে আনার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।  দিল্লিতে বিজেপিরশীর্ষ নেতারা বৈঠকে সরকার গঠনের ব্যাপারে নীতি-নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা শেষেগত বুধবারই আহমেদাবাদে ছুটে গেছেন নরেন্দ্র মোদির সাথে আলোচনার জন্য। সেখানে ফল ঘোষণা পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করার পাশাপাশি মন্ত্রিসভার প্রাথমিকতালিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিজেপির সূত্রের খবর, বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদভানিকে কিভাবে সম্মানজনক পদে রাখা হবে তানিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আদভানি নিজেই তার জুনিয়রের নেতৃত্বাধীন কোনো মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে রাজি নন। তিনি জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট এনডিএরচেয়ারম্যান হিসেবেই থাকতে চান বলে দলকে জানিয়েছেন। দলের আরেক প্রবীণ নেতামুরলী মনোহর যোশীকে কিভাবে সম্মানিত করা হবে তা নিয়ে শীর্ষ নেতারা কোনো দিশাখুঁজে পাচ্ছেন না। যোশীর সাথে মোদীর সম্পর্কও সামপ্রতিক সময়ে বেশ চিড়খেয়েছে। তবে তাকে স্পিকারের পদ দেয়া হতে পারে। আদভানি ঘনিষ্ঠ সুষমাস্বরাজকে নিয়েও দলের মধ্যে জোর আলোচনা হয়েছে। দলের বর্তমান সভাপতি রাজনাথসিং এবং সাবেক সভাপতি নীতিন গড়গড়ি গত মঙ্গলবারই সুষমা স্বরাজের বাড়ি গিয়েতাকে মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সুষমা দলকে জানিয়েছেন তাকেসম্মানজনক পদ দেয়া হলে তিনি মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে রাজি। তবে  লোকসভারস্পিকার তিনি হতে চান না বলে আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছেন। সুষমা স্বরাজদীর্ঘদিন লোকসভায় বিজেপির দলনেতা থাকায় তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাকেপররাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব দেয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা চলছে। অটল বিহারীবাজপেয়ী মন্ত্রিসভার এই কেবিনেট মন্ত্রীকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কেবিনেটকমিটিতে রাখা হতে পারে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে কোনো টেকনোক্র্যাটের কথা ভাবাহচ্ছে। তবে সেই ব্যবস্থা কার্যকর না হলে জেটলিকে অর্থমন্ত্রীর পদ দেয়া হতেপারে বলে একটি সূত্রে জানানো হয়েছে। মোদির ঘনিষ্ঠ অমিত শাহকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হতে পারে আলোচনার কথা শোনা গেলেও অমিত শাহ্‌জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ দখল করার লক্ষ্যনিয়ে তিনি সংগঠনে যুক্ত থাকতে চান। তবে দলের সভাপতি রাজনাথ সিংকেমন্ত্রিসভার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক প্রতিরক্ষা দেয়া হতে পারে। উমাভারতী, মানেকা গান্ধী ও শাহনওয়াজ হুসেনের মতো নেতাকে মন্ত্রিসভায় নেয়ারব্যাপারে আলোচনা চলছে। বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার অভিজ্ঞ মুখ অরুণ শৌরিকে পুনেথেকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে মন্ত্রিসভায় নেয়ার ভাবনা থেকে। মন্ত্রীকরা হতে পারে বিসি খাণ্ডুরি, রবিশঙ্কর প্রসাদ, সুমিত্রা মহাজন এবং সাবেকসেনাপ্রধান ভিকে সিংকে। তবে মোদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকেরপুনর্গঠনের ব্যাপারে জোর দেবেন বলে জানা গেছে। বিদেশ বাণিজ্য বিভাগটিতেপররাষ্ট্র মন্ত্রকের সাথে যুক্ত করা হতে পারে। তেমনি করপোরেট বিষয়কমন্ত্রককে যুক্ত করা হতে পারে অর্থমন্ত্রকের সাথে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের যোগাযোগ রাখার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে আলাদাবিভাগ দলের প্রবীণ নেতা যশবন্ত সিনহা এবার নির্বাচনে না দাঁড়ালেও তাকেযোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান করা হতে পারে। মন্ত্রিসভায় জোট সঙ্গীদেরমধ্য থেকে রাম বিলাস পাসোয়ান, চন্দ্রবাবু নাইডু এবং শিবসেনা ও আকালিশিরোমনি দলের প্রতিনিধিদের নেয়া হতে পারে। লোকসভার সাবেক স্পিকার পিএসাংমাকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দেয়া হতে পারে। ওদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হতেপারে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পাণিক্করকে।