ঝিনাইদহ অফিস:ঝিনাইদহেরহরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঞ্চল্যকর পুলিশ কনস্টেবল গাজী ওমর ফারুক হত্যামামলায় উপজেলা জামায়াতের আমিরসহ ৩৫৩ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেছেপুলিশ। গতকালমঙ্গলবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এ মামলায়১৭২ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে অধিকতর তদন্তেরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হরিণাকুণ্ডু থানার সাবেক ওসি মহিবুল ইসলামমঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে ঝিনাইদহের জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও বিশেষট্রাইবুনালে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্যের পৃথক ধারায় এ মামলার ৫৬৮ পৃষ্ঠারচার্জশিট দাখিল করেন।মামলায় উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির উপজেলাপরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহার হোসাইনকে প্রধান আসামি হিসেবে অভিযুক্তকরে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ ৩৫৩ জন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেএ চার্জশিট দাখিল করা হয়।তদন্তকারী কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম জানান, অভিযুক্তদের মধ্যে পুলিশ বিভিন্ন সময় ১৭২ জনকে গ্রেফতার করেছে।এছাড়াও অভিযুক্তদের মধ্যে ১৮১ জন আসামি পলাতক রয়েছেন।গ্রেফতারকৃতদেরমধ্যে জামায়াত নেতা মো. আব্দুর রহিম, শিবির নেতা তৌহিদুজ্জামান, দেলাওয়ারহোসেন ও জামায়াতকর্মী মাহাবুব হোসেন ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেস্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার সাথে জড়িত ৪২ জন আসামির নাম উল্লেখকরেছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান।বর্তমানে মামলারপ্রধান আসামি উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদেরসদ্য ক্ষমতাচ্যুত চেয়ারম্যান মোতাহার হোসাইনসহ চারজন আসামি জেলহাজতে আছেন।অভিযুক্ত প্রধান আসামি মোতাহার হোসেনকে পুলিশ গত বছরের ৭ নভেম্বরপার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলার ইবি থানার পিয়ারপুর গ্রামে তার মেয়ে জামাইবাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিমাসের শেষ দিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবেআমির মাও. দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কর্তৃকমৃত্যুণ্ডদেশের রায়ের পর সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের ওই বছরে মার্চের ২, ৩ ও৪ তারিখের ৬০ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন উপজেলায় প্রায় ৬/৭ হাজারজামায়াত-শিবিরকর্মী নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল গাজীওমর ফারুককে উপজেলা পরিষদের ভেতরে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করে।এ ঘটনায় পুলিশের আরো পাঁচ সদস্য আহত হয়। এছাড়া জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পরিষদের বিভিন্ন দফতরে বেপরোয়া ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।এঘটনায় ওইদিন হরিণাকুণ্ডু থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে ২২০ জন এজাহারনামীয়সহ প্রায় ৫/৬ হাজার জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর নামে একটি হত্যামামলাদায়ের করেন। এছাড়াও পরিষদেরবিভিন্ন দফতর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তৎকালীনহরিণাকুণ্ডু থানার এসআই ফারুক হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হয়।পরবর্তীতে বদলিজনিত কারণে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান এসআই নীরব হোসেন।এরপরতিনি বদলি হলে তৎকালীন হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি মহিবুল ইসলাম নিজেই মামলারতদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন অধিকতরতদন্তের পর মঙ্গলবার মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। যদিও ইতোমধ্যেই তিনিহরিণাকুণ্ডু থেকে অন্যত্র বদলি হয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাহরিণাকুণ্ডু থানার তৎকালীন ওসি মহিবুল ইসলাম বলেন, মামলায় জড়িতজামায়াত-শিবির কর্মীরা সর্বোচ্চ আইনি শাস্তি পাবে বলে দৃঢ়ভাবেপ্রত্যাশা করেন। এছাড়া ছিনতাইকৃত অস্ত্রটিও উদ্ধার করা হয়েছে বলেও তিনিজানান।ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানান, পুলিশ কনস্টেবলগাজী ওমর ফারুক হত্যামামলায় ৩৫৩ জন আসামির নাম রয়েছে। অধিকতর তদন্তের পর এচার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে যারাইসম্পৃক্ত ছিলো তারাই এ মামলার আসামি হয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেক আসামিকে পুলিশগ্রেফতার করেছে। বাকিদেরও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।