গ্রেফতার নেই :ক্ষোভ হতাশা স্বজনদের
স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণের ১৭ দিন আর তাদের লাশ উদ্ধারের পর ১৩ দিনপেরিয়ে গেলেও এ সংক্রান্ত মামলায় এজাহারভুক্ত আসামির কাউকেই গ্রেফতার করতেপারেনি পুলিশ। তাছাড়া এ ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে অবসরেপাঠানো র্যাবের তিন কর্মকর্তাও হাইকোর্টের আদেশের তিনদিন পরও গ্রেফতারহয়নি। অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতদের স্বজনরা।তারা দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন।
গতসোমবার পুলিশের পক্ষ থেকে র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারেরবিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে গতকাল মঙ্গলবারপর্যন্ত চিঠির উত্তর পাওয়া যায়নি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। পুলিশকর্মকর্তারা বলছেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। এদিকেস্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেন, ‘কালই (আজ বুধবার) সব দেখতে পাবেন। সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। এর বেশি এখনআর কিছু বলা সম্ভব নয়।
নিহত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামেরস্ত্রী সেলিনা ইসলাম বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরও পুলিশ আসামিদেরগ্রেফতার করতে পারেনি। এমনকি হাইকোর্ট র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকেগ্রেফতারের নির্দেশ দিলেও তাদের এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। নূর হোসেনেরব্যাপারে শুরু থেকে অভিযোগ করা হলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি। এখন পুলিশ বলছে, খুনিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে, শিগগিরই কিছু ফল পাওয়া যাবে। পুলিশের এমনকথায় আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। আমরা অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতারদেখতে চাই।
আর আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ে সেজুঁতি সরকার বলেছেন, আমরা বাবার খুনিদের গ্রেফতার দেখতে চাই। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তেরমাধ্যমে আসল খুনিরা ধরা পড়ুক এটাই আমরা দেখতে চেয়েছি। কিন্তু এখনো কেউগ্রেফতার না হওয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ, হতাশ।চন্দন সরকারের অপর মেয়ে ডা.সুস্মিতা সরকার বলেন, যেহেতু বাবার সাথে কারো সাথে কোনো শত্রুতা ছিলো না।তাই কাউকে সন্দেহ করার মতো কিছু নেই। এ নিয়ে আমরা নিজেরাই রহস্যের মধ্যেআছি। আমরা চাই দ্রুত এ রহস্যের উম্মোচন করে খুনিদের গ্রেফতার করা হোক।
নিহতনজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান বলেছেন, নূরহোসেনই নজরুলের খুনি। নূর হোসেনে বাড়ি থেকে রক্তমাখা শার্ট উদ্ধার হয়েছে।চন্দন সরকারের মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। আর র্যাব অফিসের সামনে থাকা ইট, লাশের সাথে উদ্ধার হওয়া ব্যাগ, রশিই প্রমাণ করে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে কারাজড়িত। র্যাবের চাকরিচ্যুত ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেআসল তথ্য বেড়িয়ে আসবে। হাইকোর্টের আদেশের পরও ওই তিন কর্মকর্তা গ্রেফতারনা হওয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ।
চাকরি যাওয়া তিন কর্মকর্তা হলেন- র্যাব-১১’র সাবেক সিও লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ, সাবেক মেজর আরিফ হোসেন ওসাবেক লে. কমান্ডার এম এম রানা।গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তিনজনকেগ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠিপাঠানোসহ আইনগত প্রক্রিয়া চলমান আছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষ হলেই প্রয়োজনীয়ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসপি আরো বলেন, তিনজনকে গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশপ্রশাসন পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে। তদন্তের অনেক কিছু দৃশ্যমান না হলেও পুলিশঅনেক কাজ করেছে। কারণ অদৃশ্যমান কাজগুলো প্রকাশ হলে তদন্ত প্রক্রিয়াক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।
প্রসঙ্গত,নিহত কাউন্সিলরনজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যানসহ তাদের পরিবারেরসদস্যরা অভিযোগ করেছেন, ৬ কোটি টাকার বিনিময়ে র্যাবকে দিয়ে ওই সাতজনকেহত্যা করিয়েছেন আরেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন। এরপরই ৫ মে র্যাব-১১’রঅধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এমএম রানাকে চাকরি থেকে অকালীন ও বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। গত রোববারদুপুরে নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় চাকরি যাওয়া তিন র্যাব কর্মকর্তাকেগ্রেফতারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আইজিপিকে আদেশ দেন হাইকোর্ট।দণ্ডবিধি বা বিশেষ ক্ষমতা আইনে কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলে তাদের ৫৪ধারায় গ্রেফতার করতে বলেন আদালত।