লাশ নিয়ে মিছিল সড়ক অবরোধ : ৪৮ঘণ্টার আল্টিমেটাম : কাল হরতাল
ঝিনাইদহ অফিস/কালীগঞ্জ প্রতিনিধি:ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ইসমাইল হোসেনকে (৫৮) প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার চাপালী গ্রামের কুটিপাড়া ব্রিজের নিকট তার ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত ইসমাইল চাপালী গ্রামের আব্দুর রহমান মাণ্ডুর ছেলে। এদিকে বিএনপি নেতা হত্যার ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। সামাজিক বিরোধের জের ধরে তাকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। এ ঘটনায় এখনও কেউ আটক হয়নি। ইসমাইল হোসেন হত্যার প্রতিবাদে উপজেলা বিএনপি পুলিশ প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামসহ আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসমাইল হোসেন প্রতিদিনের ন্যায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিজ গ্রামের বাড়ি যান। সেখান থেকে মোটরসাইকেলযোগে সকাল ৮টার দিকে শহরের বাড়িতে ফিরছিলেন। গ্রামের কুটিবাড়ি ব্রিজের কাছে ওত পেতে থাকাদুর্বৃত্তরা তার গতিরোধ করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। স্থানীয়রা মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ও পরে অবস্থার অবনতি হলে যশোর সদর হাসপাতলে নেয়া হয়। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
নিহত ইসমাইল হোসেন কালীগঞ্জ শহরের একজন বিশিষ্ট কীটনাশকব্যবসায়ী। কালীগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের পর পর দু’বার নির্বাচিত কাউন্সিলর। ২০০২-২০০৩ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের অনুপস্থিতিতে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তিনি কালীগঞ্জ পৌর বিএনপি ১ নং ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন। তিনি দু ছেলে ও এক মেয়ের জনক। কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।
অপরদিকে দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ কালীগঞ্জ শহরে পৌঁছুলে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা লাশ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল শেষে নেতাকর্মীরা কালীগঞ্জ শহরের মেন বাসস্ট্যান্ডে ঝিনাইদহ-যশোর সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশে সাবেক পৌর মেয়র মাহবুবার রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপি নেতা হামিদুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম ও তহুরা খাতুন বক্তব্য রাখেন। নেতৃবৃন্দ সমাবেশ থেকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা দেন।
এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামান বেল্টু এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে আওয়ামীলীগের ক্যাডারদের দায়ী করেছেন। নিহত ইসমাইল হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেন অভিযোগ করেন, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী চাপালী গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে আওয়ামীলীগ ক্যাডার শাহজাহানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তার পিতাকে হত্যা করেছে। শাহজাহান এক মাস আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করে। রাজনৈতিক কারণেই বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেনকে আওয়ামীলীগের ক্যাডাররা হত্যা করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ইসমাইল হোসেন হত্যার জের ধরে আওয়ামী লীগের তিন কর্মীর বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কালীগঞ্জ পৌরসভার চাপালী গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী শাহজাহান আলী,আজিজার রহমান ও আতিয়ার রহমানের বাড়ি পুড়িয়ে দেয় তারা।আগুনে তিনটি বাড়ির যাবতীয় মালামাল সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। খবর পেয়ে কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যেতে চাইলেও বিক্ষুব্ধদের বাধায় যেতে পারেননি তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,বিকেলে আওয়ামী লীগের তিন কর্মীর বাড়িতে আগুন দিলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এসআই নীরব হোসেনের নেতৃত্বে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
কালীগঞ্জ বাজার দোকান মালিক সমিতি হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামান বেল্টু অভিযোগ করে বলেন,চাপালী গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে শাজাহানের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে বিএনপি নেতা ইসমাইলকে খুন করা হয়েছে।