ত্রাণমন্ত্রী মায়ার পদত্যাগেরগুঞ্জন

 

স্টাফ রিপোর্টার:নারায়ণগঞ্জে৭ খুনের ঘটনায় মেয়ে জামাইয়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের মুখে ত্রাণও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার পদত্যাগেরগুজব উঠেছে। রাতে এ গুজবের ডালপালা আরো বাড়ে। এর আগে তিনি সচিবালয়ে বলেন, হাতি গর্তে পড়লে চামচিকায়ও লাথি মারে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভায় বৈঠকে অংশ না নিলেও বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সচিবালয়েনিজের দফতরে যান ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মায়া। সাদামাটাএকটি প্যান্টের সাথে স্যান্ডেল পায়ে হাফহাতা চেক শার্ট জড়ানো মায়ার চোখেচশমা ছিলো। এ সময় তাকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিলো।মন্ত্রীর দফতরে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক প্রবেশ করে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান। শুরুতেই মায়া সাংবাদিকদের
বলেন, ‘বসেন, চা খেয়ে চলে যান। ধন্যবাদ। চলে যান, আল্লাহ হাফেজ।শুনলাম আপনার নাকি শরীর খারাপ… প্রশ্ন শেষ না হতেই মন্ত্রী বলেন, শরীরেরঅবস্থা দেখছেন না?কাজ করছি, বুঝেন না?এরপর নিজের চেয়ার থেকে উঠে আরবিতেবিড়বিড় করে একটা লাইন বলে আবার বসেন নিজের চেয়ারে। বলেন, ‘নাকি, আলহামদুলিল্লাহ, নাকি?
অসুস্থতার জন্যই কী মন্ত্রিসভায় বৈঠকে যোগ দেননি?এমন প্রশ্নে মায়া বলেন, আপনারা অনেক পড়াশোনা জানা মানুষ। এটা কী ধরনের কথা বলেন? সাংবাদিকদের আবারো চলে যেতে বলে দফতরের একজনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, চলেনপার্টি অফিস যাই, কাজ করি।ভালো থাকেন সবাই। আমার জন্য দোয়া করবেন, সাংবাদিকদের উদ্দেশে আবারো বলেন তিনি।এরপর মোবাইলফোন রিসিভ করে মন্ত্রী কাকে যেন বলেন, ক্যাবিনেটে তো অনেকেই যায়নি, তাতে কি?তোমরা মরারে নিয়া টানাটানি কর কেন?
মোবাইলফোনে কথা বলা শেষ করেইউপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে মায়া বলেন, হাতি গর্তে পড়লে চামচিকায়ও লাথি মারে। এমন সময়ে হেল্প করতে হয়।এরপর চাআর বিস্কুট আসে মন্ত্রীর টেবিলে। নিজে একটা বিস্কুট মুখে দিয়ে সাংবাদিকদেরবিস্কুট নিতে অনুরোধ করেন।৮-১০ জন সাংবাদিকের মধ্যে মাত্র দু-একজনকে বিস্কুট খেতে দেখে মায়া বলেন, রাগ করছেন, না?বিস্কুট খাবেন না?এরপর চা-বিস্কুট খান সাংবাদিকরা।
আপনাকে নিয়ে বাইরে নানা ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে প্রশ্ন কেড়ে নিয়েই মন্ত্রীবলেন, এখানে বসলেই তো বোঝা যায়। ভাবছিলাম দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেই চলেযাবো।
১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস বর্ণাঢ্য করার চিন্তা আছে বলেও জানান ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মায়া।মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুপস্থিত
এর আগের খবরে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাব কর্মকর্তাজামাতার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে নানা মহল থেকে পদ ছাড়ার দাবির মধ্যেইমন্ত্রিসভার পরপর দুটি বৈঠকে দেখা যায়নি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ওত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে।
সাধারণত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনুপস্থিতির বিষয়টি আগাম জানানোর নিয়ম থাকলেও সে রকমও কিছু করেননি এ আওয়ামী লীগ নেতা।আগের সপ্তাহের পর সোমবার সকালে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও অনুপস্থিত পেয়ে যোগাযোগকরা হয় তার সাথে। জবাবে মায়া বলেন, আমার শরীর ভালো নেই এ কারণে আমিকেবিনেট মিটিংয়ে যোগ দিতে পারিনি।তবে তিনি ঢাকাতেই আছেন বলে জানিয়েছেন।গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলরনজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিনদিন পরশীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে।লাশ উদ্ধারের আগের দিন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেনচৌধুরী মায়ার মেয়ে জামাই তারেক সাঈদ মোহাম্মদকে র‌্যাব-১১-এর অধিনায়কেরদায়িত্ব থেকে সরিয়ে সেনাবাহিনীতে পাঠানো হয়।এরপর নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জের আরেককাউন্সিলর নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র‌্যাবসদস্যরা তার জামাতাসহ সাতজনকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। ওই অভিযোগ ওঠার পর গত ৭মে সাঈদসহ র‌্যাব-১১-এর ওই তিন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অকালীন অবসরেপাঠানো হয়।
অবশ্য ঘটনার তদন্ত চলার মধ্যেই মোফাজ্জল হোসেনে চৌধুরী মায়া এক বিবৃতিপাঠিয়ে দাবি করেন, ওই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত কারো সাথে তার পরিবারের কোনোসদস্যের সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। তদন্ত চলাকালে এ ধরনের বিবৃতি দেয়ায় বিভিন্নমহল থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, কেউ কেউ দাবি করেছেন মায়ারপদত্যাগ।সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রীর অনুপস্থিতথাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইনভুইয়া বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের নামে কেবিনেটের ফোল্ডার পাঠানো হয়েছে। তিনিতা গ্রহণও করেছেন।মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সভায় উপস্থিত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তা এড়িয়েগিয়ে তিনি বলেন, সভায় যারা কথা বলেন তাদের দিকেই বেশি নজর থাকে। আমি আজখেয়াল করিনি মন্ত্রী মহোদয় উপস্থিত ছিলেন কিনা।তবে কেউ উপস্থিত না থাকতে পারলে তা আগাম জানিয়ে দিতে হয় বলেও জানানমন্ত্রিপরিষদ সচিব।