মুন্সিগঞ্জের প্রায় ২শ বছরের বুড়ো বট ও তমালগাছ এলাকার ঐতিহ্য

সরকারের সহযোগিতা হতে পারে বিনদনপার্ক

 

অনিক সাইফুল: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জ মাদারহুদা ট্রেন লাইনের পাশে সরকারি জমির ওপর রয়েছে প্রায় ২শ বছরের পুরোনো বট ও তমালগাছ। গাছ ২টি নিয়ে এলাকায় রয়েছে বহু কল্প কাহিনী। শুনলে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। কেউ শুকনো কিংবা তাজা জ্বালানি একটুও ছুঁয়ে দেখে না। ছুঁলেই রয়েছে বিপদের হাতছানির আশঙ্কা। বহু সমস্যা ও অবহেলায় গাছ দুটি থাকলেও এলাকার মানুষ একটু সুযোগ পেলেই ছুটে যান মুন্সিগঞ্জের মাঠের তমালতলায়। বহুদিন ধরেই প্রতিদিন অনেক দূর থেকে পর্যটক আসে তমালগাছ তলায়। প্রতি বিকেলে ভিড় জমে দর্শনার্থীদের। এলাকার কৃষক ও পথচারীরা একটু জিরিয়ে নেন প্রচণ্ড গরম কিংবা শীতে। সাধু ভক্ত অনুরাগীরা আসেন দর্শন দিতে। অনেক সাধু গুরু রাত কাটান এ গাছটির নিচে। কেউ কেউ আসেন সিরনি দিতে। গাছটির নিচে একটি টিউবওয়েলের ব্যবস্থা থাকলেও চুরি হয়েছে সেই কবে। বহু বছর ধরে গাছ দুটি এলাকার ঐতিহ্য বহন করে চললেও নেই সরকারি কোনো বরাদ্দ। সরকারি সাহায্য পেলেই মুন্সিগঞ্জ তমালতলা হতে পারে এলাকার মানুষের বিনোদনপার্ক।

এলাকা সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গার জেহালা ইউনিয়নের মুন্সিগঞ্জ ফুটবল মাঠ ও পুলিশ ফাঁড়ির পাশে ট্রেন লাইনের কোল ঘেঁষে মাদারহুদা গ্রামের মাঠে রয়েছে প্রায় ২শ বছরের পুরোনো একটি বটগাছ ও একটি তমালগাছ। তমালগাছের নাম অনুসারে মাঠের নামকরণ হয়েছে তমালতলার মাঠ। এ গাছ নিয়ে অনেক গল্প কাহিনী রয়েছে। এ গাছ দুটির সম্পর্কে এলাকার অনেক প্রবীন ব্যক্তিদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, প্রায় ২শ বছর আগে মুন্সিগঞ্জ সোনাতনপুর গ্রামের গ্যনা বাউনি নামের এক সাধুভক্ত মহিলা এ গাছ দুটি এ মাঠের জঙ্গলের ৬ শতক জমির ওপর লাগিয়ে আস্তানা গড়ে তোলেন। তবে অনেকেই জানান, প্রথমে মাঠের জঙ্গলের ভেতরে রব্বানী ফকির নামের এক সাধু ও তার সেবাদানকারী সুন্দরী নামে এক সেবাদাসী বহুদিন বসবাস করে আস্তানাটি গড়ে তুলেছিলেন। কিছুদিন পরে তার মৃত্যু হলে গ্যনা বাউনির ভক্ত ফজলু নামের এক ব্যক্তি আস্তানায় থাকতেন। এভাবেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে তোফাজ্জেল, তৈয়ব, আতিউল্লাহ, বাহার, কিনুসহ কুরবান শাহ আস্তানার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ প্রায় ১শ বছর আগে বাবুর আলী ফকির ২শতক জমি দান করেন এবং একটি ইদারা স্থাপন করে আস্তানার রক্ষণাবেক্ষণ ও সাধুভক্তদের দেখাশুনার ভার নেন। তার মৃত্যুর পর অনেকেই এক এক সময় একাধিক সাধু ব্যক্তি আস্তানাটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও মানুষের অত্যাচারে কেউই টিকতে পারেননি। প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে আস্তানাটি অরক্ষিত হয়ে আছে। এখন কয়েকজন ভক্ত অনুরাগী আসেন দর্শন দিতে। অনেকেই রাত কাটান, আবার অনেকেই সন্ধ্যার আগেই ফিরে যান। অনেকেই আসেন মানত ও সিন্নি দিতে। শীত কিংবা প্রচণ্ড গরমে পথচারীরা একটু জিরিয়ে নেন। মুন্সিগঞ্জ বাজারের এক শিল্পপতির সহযোগিতায় একটি টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা হলেও তা চুরি হয়ে গেছে সেই কবে। নেই একটু বসার ব্যবস্থা। গাছের নিচে ঘাসের ওপরেই বসতে হয়। আবার অনেকেই পিকনিক করতে ছুটে আসে।

এলাকা সূত্রে আরো জানা যায়, মুন্সিগঞ্জের লুৎফর নামের এক ব্যক্তির জমির ওপর বেয়ে চলা গাছের অংশ তিনি বিক্রি করেন। গাছ কাটার সময় বিভিন্ন রকমের সমস্যা সৃষ্টি হতে থাকে। বিভিন্ন রকমের পশুর ডাক অনেকেই শুনতে পায় এবং গাছ কাটার সময় লুৎফর রহমানের বড় ছেলে মারা যায়। সেই দিন রাত থেকে তিনি বিভিন্ন রকমের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। কয়েক দিন পর তিনি গাছ তলায় মানত করে সিরনি করে ৪ কাঠা জমি দান করেন। সেই থেকে গাছের ডালপালা কেউ ছুঁয়েও দেখেনা। কেউ ভুল করে নিয়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা ও রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় বলে অনেকেই জানায়। বর্তমানে গাছ দুটির শুকনো ডাল মাদারহুদা মসজিদ সংরক্ষণ করে। গত ২০-২৫ বছর আগে পুটিমারী গ্রামের এক ব্যক্তি তমালতলার মাঠ হয়ে মাদারহুদা গ্রামে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে তমালগাছের তলায় প্রস্রাব করতে বসলে তার নিম্ন অঙ্গ উধাও হয়ে যায়। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে বিভিন্ন ওঝা কবিরাজ ডেকে কোন কাজে আসেনি। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে তার মৃত্যু হয়। এ ২শ বছরের গাছ দুটি নিয়ে এমনি বহু গল্প কাহিনী রয়েছে।

এলাকাবাসী আরো জানায়, প্রায় ২শ বছর ধরে মুন্সিগঞ্জ এলাকার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে গাছ দুটি। নেই কোনো সরকারি উদ্যোগ। সরকারি সাহায্য পেলেই তমালতলা হতে পারে চুয়াডাঙ্গা জেলার সবচেয়ে ভালো দর্শনীয় স্থান। এ ব্যাপারে জেহালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল হক রোকন জানান, সরকারি উদ্যোগ ও সাহায্য পেলে চুয়াডাঙ্গা জেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।