স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরনজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জন হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি নূরহোসেনের শতাধিক কিলার রয়েছে। তারা নূর হোসেনের বেতনভুক্ত। ৭ জনের লাশউদ্ধারের পর থেকে তারা এলাকাছাড়া। এর আগ পর্যন্ত এসকল কিলার এলাকায়ঘোরাফেরা করেছে বলে স্বজনহারাদের দাবি। এক পুলিশ কর্মকর্তাও এর সত্যতাস্বীকার করেছেন।
এদিকে, নজরুলসহ ৭ জনের লাশ দু কিলার সেলিম ওসালাহউদ্দিনের বন্দর উপজেলার বাড়ির অদূরে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা হয়েছে বলেপরিবারের লোকজন এ অভিযোগ করেন।নজরুলকে বহনকারী গাড়ির চালক জাহাঙ্গীর আলমেরমা মেহেরুনেচ্ছা ও যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপনের মা মমতাজ বেগম তাদেরছবি ধরে মুর্ছা যান। মা দিবসে তারা বাইরে থেকে এসে গলাধরে চুমু দিত। গতকালছিলো মা দিবস। কিন্তু নেই তাদের সন্তানরা। ছবি ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েনতারা। খুনি নূর হোসেনসহ জড়িতদের ফাঁসির আবেদন জানান দু মা।
৭হত্যা মামলার বাদী নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি এবং নজরুলেরশ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, নূর হোসেনের বাহিনীতে শতাধিক কিলাররয়েছে। তাদের কাজই ছিলো হত্যা করা। কিলাররা ৭ জনকে অপহরণ করে লাশ গুম করাপর্যন্ত এলাকায় ছিলো। যেদিন লাশ উদ্ধার হয়েছে সেইদিন থেকে তারা এলাকা ছাড়া।৭টি হত্যাকাণ্ডের দু সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। একজন কিলারকে পুলিশ গ্রেফতারকরতে পারেনি। কিলার সেলিম ও সালাহউদ্দিন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। তারা হাসতে হাসতেমানুষকে খুন করে। নজরুলসহ ৭ জনকে অপহরণ থেকে হত্যা এবং লাশ গুম করা পর্যন্তখুনিদের মধ্যে সেলিম ও সালাহউদ্দিন সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে। এ দু খুনিরতথ্যানুযায়ী ৭টি লাশ শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বর নদীর সংযোগ স্থলে ইট বেঁধে ফেলাহয়। লাশ ফেলার ডাম্পিং পয়েন্ট সম্পর্কে এ দু খুনি ভাল জানে। তারা একটিবিশেষ বাহিনীর সোর্স হিসেবে কাজ করে বলে তারা জানান।
অপরাহ্নে আদমজী এলাকায় ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি মনিরুজ্জামানস্বপনের পিতামুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী খান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানেমুক্তিযুদ্ধে গিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। নিজ সন্তানকে হত্যা করবে এজন্যতো আমি মুক্তিযুদ্ধ করিনি। স্বপন ইপিজেড এলাকায় ঝুট কাপড় কেনাবেচার ব্যবসাকরতো। এ এলাকায় নজরুলের ব্যবসা তার পুত্র দেখাশুনা করতো। নূর হোসেনেরশতাধিক পেশাদার কিলার আছে। কিলার সেলিম মানুষ হত্যা করে প্রকাশ্যে মস্তকদিয়ে বল খেলেছে। কিলার আবুল বাসার নূর হোসেনের ক্যাশিয়ার। চিটাগাং রোডেপরিবহনের চাঁদা তুলতো। সানাউল্লা সানু মাদক ব্যবসার ক্যাশিয়ার। আরিফুল হকহাসানও চাঁদা আদায়ের ক্যাশিয়ার।
স্বপনের ভাই মিজানুর রহমান জানান, আদমজী ইপিজেডের ব্যবসা পুরাটা দখল করার পাঁয়তারা করে আসছিলো নূর হোসেন।বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর পরই ইপিজেড এলাকা পুরাটানিয়ন্ত্রণ করতে শতাধিক কিলার প্রধান গেটে সারাক্ষণ অবস্থান করতো। ঝুট কাপড়নিয়ে ট্রাক বের হলে কিলাররা অস্ত্রের মুখে প্রকাশ্যে ছিনিয়ে নিয়ে যেতো।পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নূর হোসেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধেঅভিযোগ করলে নীরব থাকতো। ইপিজেড ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তার ভাই স্বপন নূরহোসেনের টার্গেট ছিলো।
স্বপনের মা মমতাজ বেগম পুত্রের শোকেবাকশক্তি হারিয়ে ফেলে। স্বপনের দুই কন্যা স্বর্ণালী (৯) ও ৯ মাসের মাহীকেকোলে নিয়ে পুত্রের ছবির দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকেন তিনি। আর অঝোরেচোখের পানি ছাড়ছেন। তিনি কারো সাথে কথা বলেন না। ঘুরে ঘুরে শুধু পুত্রস্বপনের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকেন।একই এলাকায় স্বপনের গাড়ির চালকজাহাঙ্গীর আলমের বাসা। তার বাসায় গিয়ে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সামসুননাহার নূপুরের (২৩) সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ২৭ এপ্রিল সকালে ঘটনার দিননাস্তা না খেয়ে তার স্বামী বাসা থেকে বের হন। এর আগে জাহাঙ্গীর মা মেহেরুননেছাকে বলে, মা আমাকে ১০ টাকা দাও। মায়ের ব্যাগ খুঁজে ৫ টাকা পেয়েছেজাহাঙ্গীর। নাস্তা না খেয়ে ওই ৫ টাকা পকেটে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।ঘটনার দু সপ্তাহ আগে জাহাঙ্গীর স্ত্রীকে জানায় যে, স্বপন ভাইয়ের গাড়িচালালে জীবন হারাতে হবে বলে হুমকি আসে। জাহাঙ্গীর ১ মে বেতন পাওয়ার পর আরস্বপনের গাড়ি চালাবে না বলে স্ত্রী নূপুরকে বলেছিলো। মাত্র ৩ দিন বাকিথাকতে ২৭ এপ্রিল সাতজনের সাথে জাহাঙ্গীরের লাশ উদ্ধার হয়। স্ত্রীর সাথেকথা বলার সময় জাহাঙ্গীর মা পুত্রের ছবি বুকে নিয়ে অঝোরে কাঁদতে ছিলেন।
নূপুর জানান, ১০ মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। স্বামীর আয়ের ওপর সংসার চলে। ঘটনারদু সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। দলীয়ভাবে কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনেরআর্থিক সহযোগিতা পাননি বলে তিনি জানান।