গাড়িতে অননুমোদিত গ্লাসের ব্যবহার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে

একের পর এক নির্দেশ জারি করাটাই যেন রেয়াজে পরিণত হয়েছে। সেই নির্দেশবাস্তবায়িত হলো কী হলো না তাদেখার কেউ নেই। অবস্থাদৃষ্টেরবীন্দ্রসঙ্গীতের জনপ্রিয় একটি পঙক্তি মনে পড়ে যেতে পারে- যেখানে কবিবলেছেন, ‘আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ’। তদ্রূপ নির্দেশ দান করাটাই যেনসরকারি প্রশাসনের আনন্দ বা আত্মতৃপ্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতিঅনুরূপ আর একটি নির্দেশ জারি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারিকৃতসেই নির্দেশে বলা হয়েছে,১০মে’র মধ্যে মাইক্রোবাসে লাগানো কালো,রঙিন,মার্কারি ও অস্বচ্ছ গ্লাস অপসারণ করতে হবে। এক সপ্তার ব্যবধানেসেই প্রজ্ঞাপন কিছুটা সংশোধন করা হলেও জিপ ও কারসহ অন্য সকল গাড়িরক্ষেত্রে কী নীতি অনুসৃত হবে, তাস্পষ্ট করা হয়নি। ফলে সৃষ্টি হয়েছেবিভ্রান্তির। এ অবস্থায় গতকাল রোববার থেকে শুরু হয়েছে নির্দেশিত গ্লাসঅপসারণ অভিযান।

সাধারণ মানুষ অবশ্য এ ধরনের নির্দেশ ও অভিযান নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান বলে মনে হয় না। কারণ তারা জানেন, যখনই সরকারবিব্রত হতে পারে এমন গুরুতর কোনো দুর্ঘটনা ঘটে- তখনই নির্দেশনা জারি করারহিড়িক পড়ে যায়। সেই সাথে ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু হয় অভিযান। আবার আতশবাজির মতো দপ করে জ্বলে উঠে নিভে যেতেও সময় লাগে না। এবারেরনির্দেশনাটিও যে নারায়ণগঞ্জের রোমহর্ষক সাতখুনের তাত্ক্ষণিকপ্রতিক্রিয়াজাত,তাআর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু ভাবখানা এমন, আগেএ ব্যাপারে কোনো নির্দেশ বা নিষেধাজ্ঞা ছিলো না। অর্থাৎ প্রশাসনেরনাকের ডগায় দীর্ঘদিন ধরে কালো,রঙিন ও অস্বচ্ছ গ্লাসধারী যেসব গাড়িচলাচল করেছে- তাবৈধ বা আইনসম্মত ছিলো। কিন্তু বাস্তবতা যে সম্পূর্ণবিপরীত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও তাস্বীকারকরেছেন। প্রকৃতপক্ষে ঢালাওভাবে এ ধরনের গ্লাস ব্যবহারের অনুমতি কখনোইছিলো না। তবে ক্ষেত্রবিশেষে তাঅনুমতি সাপেক্ষ ছিলো। কিন্তু বিভিন্ন সময়েনতুন করে তাঅপসারণের নির্দেশ জারি করে চমক সৃষ্টি অথবা নিজেদেরদায়িত্বহীনতা আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে মাত্র।

জননিরাপত্তার জন্যএ ধরনের গ্লাস এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। এটাও অনস্বীকার্য, নাইন-ইলেভেনপরবর্তী বিশ্ব বাস্তবতা এবং সমগ্র উপমহাদেশ জুড়ে ক্রমবর্ধমানসন্ত্রাসী তত্পরতা সেই ঝুঁকিকে বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের গত একদশকের অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতাও কম ভয়াবহ নয়। একের পর এক গুরুতর অপরাধ সংঘটিতহচ্ছে। বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। এমতাবস্থায়,এ ধরনের গ্লাস অপসারণেরপ্রশ্নে কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু এস্ববিরোধিতার মধ্যেই যে আমাদের বসবাস- হতাশাব্যঞ্জক হলেও তাঅস্বীকারকরার উপায় নেই। গাড়িতে অননুমোদিত গ্লাসের ব্যবহার অবশ্যই বন্ধ করতেহবে। তবে এজন্য নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারিই যথেষ্ট নয়,প্রয়োজনকার্যকর পদক্ষেপ। কালো ও অস্বচ্ছ গ্লাসযুক্ত যেসব গাড়ি বিল্ড-ইন অবস্থায়দেশে প্রবেশ করছে- সংশ্লিষ্ট বন্দরেই তাবন্ধ করতে হবে। আরঅভ্যন্তরীণভাবে গ্লাসে এ ধরনের কালো বা অস্বচ্ছ স্টিকার বা বিশেষ ধরনেরকাগজযুক্ত গাড়িগুলোকে ঘটনাস্থলে জব্দ বা আটক করে পুলিশ হেফাজতে আনতেহবে। আইন অমান্যকারী যাত্রী বা চালকদের বিরুদ্ধে গ্রহণ করতে হবে আইনানুগব্যবস্থা। একের পর এক প্রজ্ঞাপন জারি করে যাসম্ভব হয়নি,তানিশ্চিত করার জন্য এ ধরনের দু-একটি দৃষ্টান্তই যথেষ্ট বলে আমরা মনেকরি। নির্দেশ যদি বাস্তবায়নই করা না যায়- সেই নির্দেশ জারি করারআবশ্যকতাই-বা কী,তাআমাদের বোধগম্য নয়।