দল গোছানোয় গতি নেই বিএনপিতে : থেমে গেছে মাঠপর্যায়ে আলোচনা

দল গোছানো থেকে শুরু করে সরকার বিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নেস্থির

স্টাফ রিপোর্টার: দল গোছানো থেকে শুরু করে সরকার বিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নেস্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিএনপি। তোড়জোড় করে শুরু হলেও মাঝপথে গিয়েঅনেক নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া হোঁচট খাচ্ছে।

সারাদেশেদল পুনর্গঠন ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হলেও বর্তমানে তার গতি শ্লথ হয়ে গেছে।দলের ভেতরের একটি অংশ কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়ায় এই পরিস্থিতিরউদ্ভব। দলের হাইকমান্ডকে বোঝানো হয়েছে, দেশের সব জেলা কমিটিতে হাত দেয়ারদরকার নেই। যে সব জেলার নেতারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনেসফলতা দেখিয়েছেন সেসব জেলা কমিটি বহল রাখা হোক, পুনর্গঠন করার দরকার নেই।

ফলেখুলনা, ফেনী, মৌলভীবাজারসহ কয়েকটি জেলার কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার জন্য বৈঠকআহবান করেও পরে তা বাতিল করেন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। একনাগাড়েএক পক্ষকাল জেলা কমিটিগুলোর সাথে বৈঠক, তাদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণএবং কমিটি ভেঙে দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠন করে দিচ্ছিলেন খালেদা জিয়া। একার্যক্রমের ফলে গত মাসের শেষ দু সপ্তাহ দলের গুলশান এবং নয়াপল্টনেরকেন্দ্রীয় দফতর সরগরম হয়ে উঠেছিলো। সারাদেশ থেকে মাঠ নেতারা আসছিলেন।কিন্তু চলতি মে মাস থেকে মাঠ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় বন্ধ করে দেনচেয়ারপার্সন।

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সাথে আলাপকরে জানা যায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো যে, দলের সবগুলোজেলা, উপজেলা, পৌরসভা, থানা কমিটি ভেঙে দিয়ে তরুণ ও প্রবীণের সমন্বয়েনতুন কমিটি করা হবে। সেই অনুযায়ী বেগম জিয়া পঞ্চগড়, নীলফামারী, নওগাঁ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ (উত্তর), চুয়াডাঙ্গা, নড়াইলসহ ১৩টি জেলা কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করে দেন। তাদেরকে৪৫ দিন করে সময়ও বেধে দেন সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করার জন্য।ইতোমধ্যে দলের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠন শ্রমিক দলের কাউন্সিল হয়েছে। নতুনকেন্দ্রীয় কমিটি হয়েছে। এ দৃশ্যপটে দলের চেয়ারপারসনের আস্থাভাজন কয়েকজনসিনিয়র নেতা বেগম জিয়াকে পরামর্শ দিতে থাকেন সব জেলার সাথে বসতে গেলেআন্দোলনের পথে কালক্ষেপণ হবে। তাই ঢাকার দিকে মনোযোগ দেয়াটাগুরুত্বপূর্ণ। সারাদেশে মাঠ নেতারা আন্দোলনে সাফল্য দেখিয়েছে। এখন কর্তব্যহলো-যে সব জেলায় আন্দোলনের সাফল্য অক্ষোকৃত কম সেসব জেলার কমিটিপুনর্গঠন করা। সব জেলাকে ডাকার দরকার নেই।

এদিকে প্রায় তিন মাস আগেদল গুছিয়ে মাঠে নামার হাইকমান্ডের ঘোষণার পরেও বিষয়টি নিয়ে কোনোঅগ্রগতি নেই। নির্বাচনের পর কেন্দ্র থেকে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নাআসায় মাঠের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠসূত্র জানায়, কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুননির্বাচনের দাবি কিভাবে আদায় করা যায় সে জন্য তিনি একটি রোডম্যাপ তৈরিরনির্দেশ দিয়েছেন নীতিনির্ধারকদের। এই রোডম্যাপ প্রণয়নের দায়িত্বে রয়েছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন। তবে সাবেকআমলা ও পেশাজীবীর সংখ্যাই এতে বেশি। ফলে এর ফল নিয়েও সাধারণ নেতারাসন্দিহান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুররহমান বলেন, বিএনপি অনেক বড় দল। একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে তাবাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক চিন্তাভাবনার প্রয়োজন থাকে। আমাদের দলগোছানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দলকেগতিশীল করে তোলার প্রক্রিয়া কিছুটা ধীরে এগোচ্ছে। আমরা ঘুরে দাঁড়ানোরচেষ্টা করছি।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দলের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যাই স্থায়ী নয়। বড় আন্দোলনের জন্য দলকে প্রস্তুতকরতে যা যা কর্তব্য তা চিন্তা-ভাবনা করেই করছেন চেয়ারপারসন। দল পুনর্গঠনপ্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ করতে আরো কিছুটা সময় দরকার। আন্দোলনের জন্য দলপ্রস্তুত আছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসমহান্নান শাহ বলেন, যেকোনো কমিটিকেই ঢেলে সাজানোর আগে অনেকগুলো দিকবিবেচনা করতে হয়। বিএনপির মতো একটি বড় দলের পুনর্গঠন রাতারাতি সম্ভব নয়।