মেহেরপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে ক্লাস হচ্ছে না :যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত

 

মাজেদুল হক মানিক/মহসিন আলী: মেহেরপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রমে তেমন সাড়া নেই। হাতেগোনা কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত রয়েছে। এই পদ্ধতি শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগালেও নানা সঙ্কটে তা হুমকির মুখে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের অধীনে ২০১২-২০১৩ সালে জেলার ১৬৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কলেজের মধ্যে ১২৯টিতে প্রদান করা হয় মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, স্ক্রিন, ল্যাপটপ, মডেম ও লাউড স্পিকার। শিক্ষকদের অনীহা, চাহিদার তুলনায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব ও বিদ্যুত সংযোগ না থাকায় ওইসব প্রতিষ্ঠানে ডিজিটালে পাঠদান হচ্ছে না বলে শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেইবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শানঘাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শালদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাড়াভাঙ্গা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাজিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাজিপুর মাথাভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাজিপুর দারুল উলুম মাদরাসা, বিপিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এনপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, করমদি-কল্যাণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গাড়াবাড়িয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, চকশ্যামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাতিভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বলিয়ারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সাহেবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যুত সংযোগ না থাকলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানের উপকরণ দেয়া হয়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা আনারুল ইসলাম জানান, অবকাঠামো, এমপিও এবং বিদ্যুত ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে ১২৯টি প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল পাঠদান উকরণ দেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে যশোর টিচার্স ট্রেনিং সেন্টারে এ অঞ্চলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে পর্যায়ক্রমে তিনজন করে শিক্ষক ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ পাবেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এতে সকল শিক্ষক ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান করবেন।

বিদ্যুত সংযোগ ছাড়া কীভাবে ডিজিটাল উপকরণ দেয়া হলো জানতে চাইলে, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষাঅফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নিখিল রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, বিদুতের পার্শ্বসংযোগ ও শিগগিরই সংযোগ নেবেন এমন প্রতিশ্রুতিতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিজিটাল উকরণ প্রদান করা হয়। কিন্তু এখনো বিদ্যুত সংযোগ না পাওয়া এবং পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকা দুঃখজনক বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।

আমতৈল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সচিত্র পাঠদানের মধ্যদিয়ে ছাত্রছাত্রীরা সহজেই যেকোনো বিষয় রপ্ত করতে পারছে। এতে লেখাপাড়া মান দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। এ পদ্ধতি সব প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দিতে পারলে ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে।

বিভিন্ন সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান জানান, ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া অনেকগুলো শ্রেণিকক্ষের জন্য এক সেট উপকরণ নিয়ে টানাটানি হয়। তাই আরো কয়েক সেট উপকরণ দেয়ার দাবি করেন তিনি।

এদিকে অব্যবহৃত অনেক ল্যাপটপ, প্রজেক্টরসহ যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়েছে। আবার প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হচ্ছে। কম্পিউটার বিষয়ের বেশিরভাগ শিক্ষক কম্পিউটার চালাতে তেমন পারদর্শী নন। যার ফলে ডিজিটাল পদ্ধতি বাস্তবায়ন হচ্চে না। অন্যান্য শিক্ষকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। এতে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য ব্যাহত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নিখিল রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, প্রকল্পের ল্যাপটপ বেশিরবাগ টেসিস তৈরি দোয়েল। ল্যাপটপসহ অনেকেগুলো যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়েছে। এগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।