মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে আলমডাঙ্গার এক কিশোরকে হত্যা করে সাগরে নিক্ষেপের অভিযোগ

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে নৌকাযোগে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে আলমডাঙ্গার নগরবোয়ালিয়া গ্রামের রাশেদ খান নামের এক কিশোরকে হত্যা করে সাগরে নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। পানিপথে বেশ কয়েকদিন অভুক্ত কিশোর রাশেদ খাবার ও পানির জন্য চেঁচামেচি করায় আদম-দালালেরা তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে সাগরে ফেলে হত্যা করেছে বলে সহযাত্রীরা জানিয়েছেন। রাশেদের পরিবারসহ পাড়াজুড়ে চলছে শোকের মাতম।

জানাগেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার নগরবোয়ালিয়া গ্রামের ঠাণ্ডু খানের ছেলে রাশেদসহ (১৬) হাটবোয়ালিয়া ও গাংনী উপজেলার হেমায়েতপুরের ১০ জন কিশোরকে প্রায় ৩শ কিশোরের সাথে পানিপথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো।ওই কাফেলার একজন যাত্রী ছিলেন হেমায়েতপুরের মকছেদ আলীর ছেলে ইকতার আলী। মালয়েশিয়া থেকে তিনি মোবাইলফোনে জানিয়েছেন, হেমায়েতপুরের শুকুরের ছেলে জাহিদ দালাল তাদেরকে পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়ায় মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়।গত ২ এপ্রিল তাদেরকে টেকনাফ থেকে প্রায় ৩শ জনের সাথে বড় নৌকাযোগে সমুদ্রপথে মিয়ানমারে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে থাইল্যান্ডে নেয়া হয়। দীর্ঘপথ যেতে প্রায় ৬ দিন সময় লাগে। তিনতলা নৌকায় সকলকে চেয়ারে বসিয়ে কোনো প্রকার নড়াচড়া করতে না দিয়ে অমানবিকভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।একদিন পর পর শুধু যারা ওপরের তলায় ছিলো, তাদের নিচে আর নিচেরগুলো ওপরে থাকতে দেয়া হতো পালাক্রমে। সারাদিনে একমুঠো শুকনো চিড়ে ও এক মুটকি পানি দেয়া হতো।এমন পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে ৪ দিন অতিবাহিত হলে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে রাশেদ চেঁচামেচি ও গালিগালাজ করতো। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দালালেরা তাকে বেদম মারধর করে সাগরের পানিতে ফেলে দেয়। শুধু রাশেদকেই ফেলেনি সাগরে। অচেনা আরও ৬ কিশোরকেও সাগরে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের এ পরিণতি দেখে বাকি সকলেই ভয়ে আতঙ্কে টু শব্দ না করে কোনোভাবে প্রাণ নিয়ে থাইল্যান্ডে পৌঁছায়।থাইল্যান্ড থেকে সীমান্ত পথে তারা মাত্র ৪ জন মালয়েশিয়া ঢুকতে পেরেছে। বাকিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা তিনি জানেন না।

নিহত রাশেদের পরিবার জানিয়েছে, রাশেদের পরিবার তার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি মোটেও জানতো না।২ এপ্রিল ভোরবেলা হাটবোয়ালিয়ার উম্বাদ নাপিত রাশেদকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে গ্রামের অনেকেই জানায়, রাশেদকে মালেশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর দীর্ঘদিন ছেলের খবর না পেয়ে তারা দালাল জাহিদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রত্যেকবারই রাশেদ ভালো আছে বলে জানিয়েছেন। ছেলের সাথে কথা বলিয়ে দেয়ার দাবি করলে আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি করে কালক্ষেপণ করতো। এরই মাঝে হেমায়েতপুরের ইকতারের সাথে মোমাইলফোনে কথা বলে তারা প্রকৃত ঘটনা জানতে পারেন।গতপরশু রাশেদের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তার পরিবারসহ পাড়ায় চলছে শোকের মাতম।

উল্লেখ্য, গত বছরও জাহিদ দালাল স্থানীয় কয়েকজন দালালের সহযোগিতায় হাটবোয়ালিয়ার ইয়াকুবের ছেলে শাহজালাল, হেমায়েতপুরের কালুসহ ভাংবাড়িয়ার ৩ জন, চাঁদপুরের ৩ জন, মানিকদিয়ার ৫ ও এলাঙ্গীর ৩ জনসহ ২৫ জন কিশোরকে বিনা পাসপোর্ট ও ভিসায় সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। দীর্ঘ ১ বছরেও তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।ওই ঘটনার পর থেকে আর জাহিদ দালাল এলাকায় আসে না । হাঁটুভাঙ্গার আকিমুদ্দীন, ভাংবাড়িয়ার শহিদুলসহ হাটবোয়ালিয়ার বেশ কয়েকজন দালালকে দিয়ে সে কিশোর ধরার জাল ফেলে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আলমডাঙ্গা ও পার্শ্ববর্তী গাংনী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিশোরদের মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়ায় গত কয়েক বছর ধরে গোপনে বিদেশে লোক পাচার করে আসছে একটি সঙ্ঘবদ্ধচক্র। হাটবোয়ালিয়া, হাঁটুভাঙ্গা, ভাংবাড়িয়া, হারদী ও গাংনী উপজেলার হেমায়েতপুরসহ বেশ কিছু গ্রামে এদের স্থানীয় দালাল রয়েছে। মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে কোনো টাকা দেয়া লাগবে না। থাইল্যান্ডে পৌঁছে টাকা দিলেই যাওয়া হবে।এমনকি যেতে সরকারিভাবে অনেক সময় ও অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। কিন্তু অবৈধভাবে যেতে এ সব সমস্যা নেই। এমন চটকদার কথা বলে স্থানীয় দালালেরা গোপনে কিশোর শিকার করে থাকে। কয়েক মাস পূর্বে এ চক্রটি স্থানীয় দালালের সহযোগিতায় আলমডাঙ্গা উপজেলার ওসমানপুর-প্রাগপুরের বেশ কয়েকজন কিশোরকে পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে গেছে। এলাকাসূত্রে জানা গেছে, তাদের মধ্যেও বেশ কয়েকজনের আর কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।