আর কোনো এমপিও নয় : এমপিওরধারণাই চিরতরে মুছে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা

 

স্টাফ রিপোর্টার: নতুনকরে আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিও নয়। বাংলাদেশ থেকে এই এমপিওরধারণাই চিরতরে মুছে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবেপ্রবর্তন করা হবে এককালীন অর্থ সহায়তা ব্যবস্থা। গতকাল রোববার ঢাকায়অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ তথ্য জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মালআবদুল মুহিত। এতে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ সদস্য চলতি বছরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যাতে এমপিওভুক্তি করা হয় সে ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টিআকর্ষণ করেন। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয়স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আফছারুল আমিন জোরালো বক্তব্য রাখেন।জবাবে অর্থমন্ত্রী এমপিও নিয়ে নানা অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে বলেন, এপদ্ধতি শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। দেশে এমপিওভুক্ত যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার অধিকাংশই ভুঁইফোড়। উত্তরাঞ্চলে এমনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে যেখানে ১১ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক ১০ জন রয়েছেন। এজন্যচলতি অর্থবছরে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে না। এমনকিভবিষ্যতেও এ খাতে কোনো বরাদ্দ রাখা হবে না।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামীতেএমপিও ব্যবস্থার পরিবর্তন করে নতুন পদ্ধতির কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এজন্যএলাকার প্রাপ্যতার ভিত্তিতে সরকারি সহায়তা দেয়া হবে। তবে কবে দেয়া হবে তাবলা যাবে না। অনেকে হঠাৎ করে একটা স্কুল দিয়ে পরবর্তীতে এমপিও করে দেয়ারজন্য আন্দোলন শুরু করেন, যা মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে নষ্ট করে দিয়েছে।মন্ত্রী তখন আরও বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলাদেশের ভালো অগ্রগতি হয়েছে।আগে বেসরকারি স্কুলগুলো মাধ্যমিক শিক্ষায় ব্যাপক অবদান রাখতো। কিন্তু এমপিওব্যবস্থা চালু হওয়ার পর তা আর হচ্ছে না। আমি নিজেও এ পদ্ধতি নিয়ে আনহ্যাপি (অসুখি)।

এ মুহূর্তে সারাদেশে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৭ হাজার৯৬২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে এমপিওর (বেসরকারি স্কুল, কলেজ মাদরাসারশিক্ষক-কর্মচারীদের দেয়া বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) সুবিধাভোগী শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন সর্বমোট ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭১১ জন। এদের পেছনে বর্তমানে এমপিওবাবদ সরকারের বছরে ব্যয় হয় ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি, যা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অনুন্নয়ন বাজেটের ৬৪ ভাগেরও বেশি।

এর বাইরে এমপিওভুক্ত নয়, কিন্তু ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে যাচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮ সহস্রাধিক। এসবপ্রতিষ্ঠানে সরকারের জনবল কাঠামো অনুযায়ী গড়ে ১৫ জন করে ধরা হলে সর্বমোটকর্মরত রয়েছেন লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী। এমপিওর দাবিতে চলতি অর্থবছরেরবাজেটের আগে গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেনসংশ্লিষ্টরা।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আর কোনো এমপিও নয়- এমন খবরটিভি চ্যানেল ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষক ও শিক্ষকনেতাদের মধ্যে গতকালই সৃষ্টি হয় চাপা ক্ষোভের। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আন্দোলন করে থাকে এমপিও বঞ্চিত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানশিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট। ওই সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ এশারত আলী বলেন, যদি সরকারআমাদের এমপিও না দেয়, তাহলে যারা এমপিও পাচ্ছে তাদেরটাও বন্ধ করতে হবে। একদেশে দুই নীতি চলবে না। তিনি আসন্ন বাজেটের আগে এমপিও দাবি করে বলেন, যদিআগামী বাজেটে এ খাতে অর্থ বরাদ্দ দেয়া না হয়, আর সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্তনেয়, তাহলে সারাদেশে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

আর শিক্ষক-কর্মচারীঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া বলেন, এমপিওভুক্তি একেবারে বন্ধকরে দেয়া ঠিক হবে না। কেননা সারাদেশে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারীঅর্ধাহারে-অনাহারে থেকে হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রেখেছেন।তারা সরকারি নীতিমালা মেনেই স্বীকৃতি ও অধিভুক্তি নিয়েছেন। তিনি বলেন, এধরনের সিদ্ধান্ত অসন্তোষ উসকে দিতে পারে।প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৯-২০১০এবং ২০১০-২০১১ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতাকালেও অর্থমন্ত্রী এমপিও ব্যবস্থাসম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি তা ঢেলে সাজানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবেষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর পর্যন্ত এ খাতে ১০০ কোটিটাকা করে প্রতি বছরই বরাদ্দ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

১৯ এপ্রিলরাজধানীর এলজিইডি মিলনায়তনে গণসাক্ষরতা অভিযানের এক অনুষ্ঠানেশিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এমপিও খাতে বর্তমানে ৮ হাজার কোটিটাকার বেশি খরচ হচ্ছে। কিন্তু এ টাকা অধিকাংশই কোনো কাজে আসছে না। এমনওএকটি প্রতিষ্ঠান আমি পেয়েছি যেখানে বিজ্ঞানে ছাত্র রয়েছে ১ জন আর তাকেপড়ানোর জন্য রয়েছে ৪ জন শিক্ষক। আমি সেই সবেধন নীলমণিকে আগ্রহ নিয়ে দেখেছি।

সরকারিনীতিমালা অনুযায়ী স্কুল ম্যাপিং, দূরত্ব কিংবা ছাত্র-শিক্ষক সংখ্যাইত্যাদি বিচারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হওয়ার কথা। উল্লেখিতপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই সরকারি বিধি-বিধান মেনে প্রতিষ্ঠিত নয়। আর গত কয়েকবছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেয়ার আগে এমপিও চাওয়া যাবেনা- এমন অঙ্গীকারনামা নেয়া হচ্ছে নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে।