মেহেরপুরের মা-বোনদের পরিচিত কণ্ঠ পাটকাঠিওয়ালা আরশাদ ভাই

 

মহাসিন আলী:ও পাটকাঠি…..। মেহেরপুর শহরের অলি-গলির মা-বোনদের কাছে এটি একটি অতি পরিচিত কণ্ঠস্বর। পাটকাঠিওয়ালা আরশাদ ভাই এসেছেন। চূলা জ্বালাতে অন্যতম উপাদান পাটকাঠি নিতে হবে। একমুঠো পাটকাঠির প্রতি আঁটি ১০ টাকা। গ্রাম-গঞ্জ থেকে পাটকাঠি সংগ্রহ করে মেহেরপুর শহরে বিক্রি করে বেলা ১২টার মধ্যে বাড়ি ফিরে যাওয়ায় তার প্রতিদিনের কাজ। এতে একদিকে মা-বোনদের চূলা জ্বালাতে সহযোগিতা করছেন আর অন্যদিকে লাভ দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

মেহেরপুর জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ ইউনিয়নের টেংরামারী গ্রামের ছেলে আরশাদ আলী (৫২)। তিনি ওই গ্রামের মৃত গহর আলী জোয়াদ্দারের ছেলে। শারিরিকভাবে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ্য নন। বাবার অর্থ সম্পত্তি ছিলো না। মাঠে অন্যের জমিতে কামলা (জোন) খাটতেন। শরীর সেটা সমর্থন করেনা। তাইতো আয় রোজগারের নতুন পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন পাটকাঠি বিক্রি। এক যুগ হচ্ছে তার পাঠকাঠি বিক্রির কাজ। তিনি বললেন- মাঠে কামলা খাটা তার কাছে কঠিন কাজ। তাই তিনি পাটকাঠি বিক্রির কাজ বেছে নিয়েছেন। বর্ষায় পাট ধোঁয়ার সময় মুনিষ নিয়ে পাট ছাড়িয়ে কাঠি সংগ্রহ করেন। সারা বছর বিক্রি করেন। অনেক সময় গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে পাটকাঠি কেনেন তিনি। আঁটি বাধার কাজে তার স্ত্রী তাকে সাহায্য করেন। ওই পাটকাঠি সকাল ৭টার দিকে শ্যালোইঞ্জিনচালিত করিমনে করে মেহেরপুর শহরের আনেন। শহরের অলিতে-গলিতে ঢুকে হাক ছাড়েন। ও পাটকাঠি…। প্রতি আঁটি ১০ টাকা দামে সব পাটকাঠি বিক্রি করে বেলা ১২টার দিকে বাড়ি ফেরেন।

পাটকাঠি ব্যবসায়ী আরশাদ আলী বলেন, প্রতিদিন নিজের করিমনে করে প্রায় এক হাজার টাকার পাটকাটি মেহেরপুর শহরে নিয়ে যাই। প্রায় দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয় ওই পাটকাঠি। পাটকাঠি বিক্রিতে বাকি পড়েনা। খরচ বাদ দিয়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা লাভ হয়। এখন প্রায় একশ’ টাকার তেল খরচ হয়। আগে রিকসা-ভ্যানে করে গ্রাম থেকে শহরে পাটকাঠি নিতাম। পরিশ্রম হলেও লাভ একটু বেশি হতো। তার পরও পরিশ্রম যাতে কম হয় সেজন্যই পরিমন কিনেছি।

সংসারে কে কে আছেন জিজ্ঞেস করতে বললেন, প্রথম স্ত্রী জেলার মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ইউনিয়নের কোমপুর গ্রামের মেয়ে আন্তানুর সন্তান দিতে ব্যর্থ হওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করতে বাধ্য হয়। দ্বিতীয় স্ত্রী চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের মেয়ে শাহিদা। এ ঘরে এক মেয়ে সন্তান হয়েছে। মেয়ে হাসি খাতুন স্থানীয় টেংরামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী। মা-সহ তার সংসারে ৪ জন লোক। এছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করায় প্রথম স্ত্রী সম্পর্ক ছেদ না করলেও থাকে বাপের বাড়ি কোমরপুরে। সেখানে তাকে দিতে হয় ভাত-কাপড়সহ আনুসাঙ্গিক খরচা।

তিনি মনে করেন অন্যের জমিতে কামলা খাটতে অপারগ হলেও কাজের তো অভাব নেই। রয়েছে ছোট-খাট ব্যবসা করে খাওয়ার নানা পথ। এসব স্বাধীন ব্যবসায় লাভও অনেক বেশি। তিনি বেকার ভাইদের উদ্দেশ্যে বলেন, আর বেকারত্ব নয়। আসুন! যে যার মত ছোট-বড় স্বাধীন ব্যবসা-বাণিজ্য করি। দেশের উন্নয়নে শরিক হই।

Leave a comment