আল্ট্রাসনো করাতে এসে প্রসূতি সিজারের শিকার : অপূর্ণ নবজাতকের মৃত্যু

 

প্রথম সন্তান মারা যাওয়ায় দ্বিতীয় সন্তানের বেলায় বাড়তি সতর্কতাই কাল হয়েছে মুন্নী-ইমাম দম্পতির

 

একই চিকিৎসকের নিকট দু দফা আল্ট্রাসনো করিয়ে দু রকম রিপোর্টে বিভ্রান্তি : মা নাসিং হোম মালিক অনুতপ্ত

স্টাফ রিপোর্টার: প্রথম সন্তান মারা যাওয়ায় দ্বিতীয় সন্তানের বেলায় বাড়তি সতর্কতাই কাল হয়েছে মুন্নী-ইমাম দম্পতির। প্রসূতির তেমন সমস্যা না হলেও গর্ভের সন্তানের বর্তমান অবস্থা জানতে আল্টাসনো করতে এসে শেষ পর্যন্ত মা নার্সিং হোমে সিজারিয়ানের শিকার হতে হয়েছে তাকে। আর এতেই মারা গেছে নবজাতক।

গতকাল শনিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের মা নার্সিং হোমে প্রসূতি মুন্নী খাতুনের অস্ত্রোপচার করা হয়। পুত্র সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার খবরে আত্মীয় স্বজনের মধ্যে আনন্দ ফুটে উঠলেও মুর্হূতে ম্লান হতে শুরু করে। যখন জানতে পারে, সন্তান ভুমিষ্ট করার উপযোগী হওয়ার আগেই সিজার করে ভুমিষ্ট করা হয়েছে, এ সন্তান বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। তখনই ইমামসহ তাদের লোকজনের মধ্যে পুঞ্জিভুত হতে থাকে ক্ষোভ। শেষ পর্যন্ত নবজাতককে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হলেও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। গতরাত পৌনে ১২টার দিকে মারা গেছে নবজাতক। আর তার মাকে মা নার্সিং হোমেই চিকিৎসাধীন রাখা হয়।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ইসলামপাড়ার ইমাম হোসেনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুন্নী খাতুনকে গতকাল শনিবার বেলা ১২টার দিকে আল্ট্রসনো করানো জন্য হাসপাতাল সড়কের সততা ডায়গনোস্টিকে নেয়া হয়। সনোলজিস্ট ডা. খবির উদ্দীন আল্ট্রসনো করেন। তিনি রিপোটে সন্তান প্রসবের তারিখ হিসেবে ৩ মে উল্লেখ করেন। এ রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই মুন্নীর স্বামী প্রশ্ন তুলে বলেন, দু মাস আগে করা আল্ট্রাসনো রিপোর্টে বলা হয়েছিলো সন্তান হওয়ার তারিখ ২২ মে। তারিখে হেরফের হচ্ছে কেন? এ প্রশ্নে তেমন কেউ আমলে না নিলেও মা ক্লিনিক মালিকদের পরিচিত জন ইমামকে বলে, যেহেতু প্রথম বার সিজার করে সন্তান প্রসব করানো হয়েছিলো। এবার আগেই সিজার করতে হবে। তা না হলে সমস্যা হবে। একথা শুনে ইমাম তার স্ত্রী মুন্নীকে মা ক্লিনিকে রেখে পূর্বের আল্ট্রাসনো রিপোর্টটি আনার জন্য বাড়ি ফেরেন।

এদিকে মুন্নীর শরীরে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিতে থাকেন ক্লিনিক মালিকেরা। বেলা আড়াইটার দিকে তিনি মা ক্লিনিকে ফিরে দেখেন সিজার হয়ে গেছে। সন্তানের মৃত্যুর পর ইমাম হোসেন এ তথ্য দিয়ে বলেন, টাকার জন্য এরা কি না করছে? এ প্রশ্নের জবাব দেবে কে? অভিযোগকারীরা বলেছেন, ডা. লিফানারছিছ চৈতী প্রসূতি মুন্নীর সিজার করেন। ডা. লিফা নারছিছ গাইনি কনসালটেন্ট নন। সার্কিক্যাল কনসালটেন্টও নন। এসব দেখার দায়িত্ব কার? সে প্রশ্নের লা জবাব।

গতকাল প্রসূতি মুন্নীর সিজার করার পর নবজাতকের শারীরিক অবস্থা দেখানোর জন্য নেয়া হয় ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকনকে তলব করা হয়। তিনিও চমকে ওঠেন। অভিযোগকারীরা জানান, মুন্নী অন্তঃসত্ত্বা হলে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সততা ডায়াগনস্টিকে নেয়া হয়। ডা. খবির উদ্দীন আল্ট্রসনো করেন। সে দফা আল্ট্রাসনো রিপোর্টে সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয় ২২ মে। গতকাল একই চিকিৎসক আল্ট্রসনো করে সন্তান প্রসবের তারিখ ৩ মে বলে উল্লেখ করার কারণেই মূলত গতকাল ক্লিনিক মালিকেরা প্রসূতিকে সিজার করার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। অথচ প্রসূতির কোনো সমস্যাই ছিলো না। শুধুমাত্র বর্তমান অবস্থা দেখানোর জন্যই চিকিৎসকের নিকট নেয়া হয়। আর সে সুযোগেই সন্তান প্রসবের অন্তত্ব ২৬ দিন আগে অস্ত্রোপচার করে সন্তান প্রসব করানো হয়েছে। অপুষ্ট সন্তান প্রসবের কারণে নবজাতকের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যেতে থাকে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা চলতে থাকে। এ বিষয়টি জানাজানি হলে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। অবশেষে রাত পৌনে ১২টার দিকে নবজাতক মারা যায়। মৃতেদেহ নেয়া হয় ইসলামপাড়া। এ সময় সন্তানের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে বাকরুদ্ধ ইমাম এবার বলে ওঠেন- টাকার জন্য ওরা আমার সন্তানকে বাঁচতে দিলো না। ওদের এই ব্যবসা বন্ধ হওয়া দরকার।

পারিবারিক সদস্যরা বলেছেন, বছর খানেক আগে মুন্নী প্রথম সন্তান সিজার করে প্রসব করে উপসম নার্সিং হোমে। এবার দ্বিতীয় সন্তানকে বাঁচাতেই ওরই বাড়তি সতর্ক ছিলো। আর এতেই ঝরে গেলো দ্বিতীয় সন্তান। এখন ওরা সন্তনা খুঁজবে কোথায়? মা নার্সিং হোমের মালিকপক্ষের আজগার আলীর নিকট এ প্রশ্ন করা হলে তিনি নির্বাক থাকেন। মাথা নিচু করে বলেন, একটু ভুল হয়ে গেছে। আব্দুল মালেক অবশ্য বলেন, প্রথম সিজার হলে দ্বিতীয়বার সন্তান হওয়ার দিনের কয়েকদিন আগেই সিজার করতে হয়। সেটা ভেবেই এ সিজার করানো হয়েছিলো। এমনটি হবে আমরা তা বুঝতে পারিনি।

Leave a comment