দামুড়হুদার জয়রামপুরে শিশুকন্যাকে গলা টিপে হত্যারপর পুকুরে নিক্ষেপ
দামুড়হুদা অফিস:দামুড়হুদা জয়রামপুরের মালিতাপাড়ায় নানির কোল থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় তুলে নিয়ে ৬ বছরের শিশুকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দিয়েছে পাষণ্ড সৎ পিতা। গতপরশু রাতে শিশুকন্যা হেলেনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় তুলে দৌঁড়ে পালায়। লোকজন পিছু নিলেও হেলেনাকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। গতকাল বুধবার সকালে জয়রামপুরের একটি পুকুরে শিশু হেলেনার লাশ পাওয়া যায়। সকাল ১০টার দিকে পুলিশ উদ্ধার করে।
শিশু হেলেনার নানিসহ নিকটজনেরা বলেছেন, স্ত্রী হাজেরাকে নিজ বাড়ি নিতে ব্যর্থ হয়ে গুমন্ত অবস্থায় শিশু হেলেনাকে তুলে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে পুকুরে ফেলে সটকেছে সৎ পিতা জাহাঙ্গীর। সে কুষ্টিয়া খোকসারর মৃত হাসমত আলীর ছেলে। তাকে গতকাল সকালে শিশুর হেলেনার লাশ উদ্ধারের আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের দোস্তগ্রামে আটক করা হলেও সে কৌশলে সটকে পড়ে। তাকে ধরতে পুলিশ নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে। আত্মীয়স্বজনও খুঁজতে শুরু করেছে।
জানাগেছে,চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার হাউলী ইউনিয়নের জয়রামপুর মালিতাপাড়ার শাহাদত হোসেনের মেয়ে হাজেরার বিয়ে হয় যশোর মনিরামপুরের হেলাল উদ্দীনের সাথে। দু সন্তান রেখে হাজেরার সাথে হেলালের দাম্পত্য বিচ্ছেদ ঘটে। সন্তান নিয়ে হাজেরা তার পিতার বাড়িতেই অবস্থান নেয়। আনুমানিক এক বছর আগে কুষ্টিয়া জেলার খোকসা গ্রামের মৃত হাসমত আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে হাজেরার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের পর দুবার হাজেরা খাতুনকে তার বর্তমান স্বামী জাহাঙ্গীরের বাড়িতে যায়। প্রথম পক্ষের দুসন্তান নিয়ে দ্বিতীয় স্বামী জাহাঙ্গীরের সংসারে হাজেরা বোঝা হয়ে ওঠে। সন্তানের কারণেই হাজেরাকে নির্যাতন করতে থাকে তার স্বামী জাহাঙ্গীর। ফালে স্বামী গৃহ ছেড়ে হাজেরা তার পিতার বাড়ি জয়রামপুরে ফেরে। মেয়ে হেলেনাকে স্থানীয় দাখিল মাদরাসায় ১ম শ্রেণিতে ভর্তি করে। ছেলে যশোর মনিরামপুরে হেলাল উদ্দীনের কাছে থাকে। গতমঙ্গলবার সন্ধায় হাজেরার পিতার বাড়িতে হাজির হয় হাজেরার দ্বিতীয় স্বামী জাহাঙ্গীর।সে তার স্ত্রীকে কুষ্টিয়ার খোকসায় যাওয়ার জন্য বলে। হাজেরা যেতে অস্বীকৃতি জানায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বাধে। জাহাঙ্গীর হাজেরার পিতার বাড়ি থেকে বের হয়। গভীর রাতে নানির পাশে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায়শিশু হেলেনাকে একজন তুলে নিয়ে যাচ্ছে দেখে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। তখন আনুমানিক রাত ১১টা।
হেলেনার নানিসহ তার বাড়ির লোকজন অভিযোগ করে বলেছেন, জাহাঙ্গীরই শিশু হেলেনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় মুখ চেপে ধরে দৌঁড় দেয়। লোকজন তার পিছু নিলেও ধরতে পারেনি। হেলেনাকেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সারারাত লোকজন খোঁজাখুজি করতে তাকে। সকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরে দোস্ত গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হলেও কৌশলে সটকে পড়ে। জাহাঙ্গীরের আত্মীয়দের কয়েকজন কৌশলে তাকে ছাড়িয়ে নেয়। এদিকে গতকাল বুধবার সকালে হাজেরার পিতার বাড়ির অদূরে তালপুকুরে জেলেরা মাছ ধরার সময় হেলেনার লাশ দেখে চমকে ওঠে। খবর পেয়ে স্থানীয় নারী-পুরুষ শিশু-কিশোর ভিড় জমায়। দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ খবর পেয়ে সকল ১০টার দিকে লাশ উদ্ধার করে। দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে জয়ারামপুরেই দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। শিশু হেলেনার মা হাজেরা খাতুন বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেছেন।