মাথাভাঙ্গা মনিটর: সান্ডারল্যান্ডের কাছে হেরে ইপিএলের শিরোপা লড়াইয়ে পিছিয়ে যাওয়াটা মানতেই পারছেন না চেলসি কোচ জোসে মরিনিয়ো। সব দায় রেফারির ওপর চাপালেন তিনি। তবে এবার রেফারির প্রতি পর্তুগালের এ কোচের অভিযোগ প্রকাশের ধরণটা ছিল ভিন্ন রকম। গত শনিবার স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি মরিনিয়ো। নিজের মতো করে চারটি ভাগে কথা বলেছেন তিনি। এর মধ্যেই তিনি শনিবার চেলসি-সান্ডারল্যান্ড ম্যাচের রেফারি মাইক ডিনকে ধন্যবাদ জানান। মাইক ডিনের পারফরম্যান্স ছিলো অবিশ্বাস্য। রেফারি অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স করলে তাকে অভিনন্দন জানানোটাই ঠিক কাজ। ডিনকে দেয়া মরিনিয়োর এ ধন্যবাদ যে তীব্র অবজ্ঞার, সেটা বোঝা যায় এর পরে বলা কঠিন কথাগুলোয়। সে এখানে একটা লক্ষ্য নিয়ে এসেছে, লক্ষ্যটা ছিলো অসাধারণ পারফরম্যান্স করা এবং সে সেটা করেছে। রেফারির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা মাঠে বসেই করার উদাহরণ আছে মরিনিয়োর। তবে এ ম্যাচে মাঠে একটু যেন শান্তই ছিলেন তিনি। ৭৯ মিনিটে চেলসির বিপক্ষে রেফারি ডিন পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। সেই পেনাল্টি থেকেই জয়সূচক গোলটি পায় সান্ডারল্যান্ড। এটা মেনে নিতে পারছিলেন না মরিনিয়োর সহকারি রুই ফারিয়া। ডিনের সাথে বিবাদে জড়ানো ফারিয়াকে থামিয়েছেন মরিনিয়ো। তবে সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে আর সংবরণ করতে পারেননি তিনি। ডিনের সাথে রেফারিদের প্রধান মাইক রিলেকেও কথার তীরে বিদ্ধ করেছেন চেলসি কোচ।
মাইক রিলেকে অভিনন্দন। কারণ সে রেফারিদের প্রধান। পুরো মরসুম জুড়ে তারা যেটা করে আসছে, সেটা এক কথায় অসাধারণ। বিশেষ করে গত দু মাস ধরে এবং আরো বিশেষ করে বললে শিরোপা দৌড়ে থাকা দলগুলোর সাথে তারা যেটা করে আসছে সেটা নিঃসন্দেহে অসাধারণ। মাঠে রেফারির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা অথবা রেফারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলা মরিনিয়োর জন্য নতুন নয়। মাঠে রেফারির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এ মরসুমেই দুবার তাকে ম্যাচ চলাকালে ডাগ-আউট থেকে বহিষ্কার হয়ে গ্যালারিতে বসতে হয়েছে। এর মধ্যে একটি অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে হেরে যাওয়া ম্যাচে মিডফিল্ডার রামিরেসের লালকার্ড পাওয়ার বিরোধিতা করে একবার।
আরেকবার তিনি ডাগ-আউট থেকে বহিষ্কৃত হন কার্ডিফের বিপক্ষে জেতা ম্যাচে রেফারি অ্যান্থনি টেলরের সিদ্ধান্ত নিয়ে বারবার প্রশ্ন করে। ২০০৫ সালে ইউরোপের ফুটবলের দন্ডমুন্ডের কর্তা উয়েফ মরিনিয়োকে আখ্যা দিয়েছিল ফুটবলের শত্রু বলে। সেবার তিনি বার্সেলোনার সাথে চেলসির চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে রেফারি অ্যান্ডার ফ্রিস্কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিষয়টি মানতে না পেরে রেফারিং থেকে অবসর নিয়েছিলেন সুইডেনের এ রেফারি।
২০১১ সালে একবার মরিনিয়ো অভিযোগ করেন, বার্সেলোনর পক্ষপাত করে রেফারির ষড়যন্ত্রের কারণেই তার দল রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠতে পারেনি। ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড স্যামুয়েল এতোর গোলে ম্যাচের শুরুটা ভালোই করেছিল চেলসি। তবে কনর উইহ্যামের গোলে ম্যাচে ফেরে সান্ডারল্যান্ড। আর পেনাল্টি থেকে গোল করে মরিনিয়োকে চেলসির হয়ে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ৭৮ ম্যাচে এ প্রথম হারের স্বাদ দেন ফ্যাবিও বোরিনি। রেফারির ওপর ক্ষোভ ঝারলেও ম্যাচ শেষে সান্ডারল্যান্ডকে অভিনন্দন জানান মরিনিয়ো। তবে সেই অভিনন্দনেও মিশে ছিল শ্লেষ্মা, সান্ডারল্যান্ডকে অভিনন্দন। তারা কিভাবে বা কেন বা কোন পথে জিতলো এটা কোনো বিষয় নয়। তারা জিতল তো! এ ম্যাচ হেরে যাওয়ার পেছনে নিজের খেলোয়াড়দের কোনো ত্রুটি দেখছেন না মরিনিয়ো। খেলোয়াড়দের প্রচেষ্টার জন্য তাদের প্রাপ্য প্রশংসাই দিয়েছেন তিনি। আমার খেলোয়াড়রা তাদের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিয়েছে। তাদের অভিনন্দন। আমার মনে হয়, তারা এর প্রাপ্য। অনেক সময় আমরা জিতলে অভিনন্দন জানাই। কিন্তু আমার মনে হয়, পরাজয়ের পরও আমার খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানানোটা উচিত কাজই হবে।