গায়ের রং ফর্সা করার প্রলোভন এবং নকল প্রসাধনী

রাজশাহীর পুঠিয়ায় ভেজাল প্রসাধনীর কারখানা গড়ে ওঠার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রসাধনী তৈরির অবৈধ কারখানায় উৎপাদিত শ শ কাটুন ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য স্থানীয় কসমেটিকস ও বিপণীবিতানসহ রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের নামিদামি দোকান ও বিউটি পার্লারে সরবরাহ করা হচ্ছে।

অবৈধ কারখানার মালিকরা বাজার থেকে জনপ্রিয় ক্রিম ও স্নো সংগ্রহ করার পর তাতে স্টিলম্যান, টিয়ারিক অ্যাসিড, আইসোপ্রোপাইল, মাইরিস্টেড ও সাধারণ পানির মিশ্রণে বিভিন্ন রকম রং ফর্সাকারী ও হারবাল স্পট ক্রিম তৈরি করে বাজারজাত করছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। মানুষের মুখমণ্ডল ও চর্ম অতি সংবেদনশীল অঙ্গ। এসব উপকরণ মিশ্রণ দিয়ে তৈরি করা ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি ও জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অবৈধ কারখানার মালিকরা শতভাগ গায়ের রং ফর্সা করার প্রলোভন দেখিয়ে, এলাকায় রীতিমতো পোস্টার, দেয়াল লিখন ও মাইকিঙের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে মানুষকে এসব পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট করছে। শুধু তাই নয়, বিফলে চারগুণ টাকা ফেরত দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। প্রতি মাসে থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ভেজাল প্রসাধনীর কারখানাগুলোর কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এসব অবৈধ কারখানা অবিলম্বে বন্ধ করে দেয়া উচিত। তা না হলে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। বস্তুত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের ভেজাল প্রসাধনীর কারখানা গড়ে উঠেছে। কিছু নীতিভ্রষ্ট মানুষ লোভের বশবর্তী হয়ে ভেজাল প্রসাধন সামগ্রী উৎপাদন ও বিক্রি করছে। শুধু প্রসাধন সামগ্রী নয়, জীবনরক্ষাকারী ওষুধসহ প্রায় প্রতিটি খাদ্যসামগ্রী নিয়েই চলছে ভেজালের মহোৎসব। খাদ্যপণ্যে অবলীলায় রাসায়নিক দ্রব্য, গাড়ির পোড়া মবিল ও পোশাক-পরিচ্ছদ রঙ করার কাজে ব্যবহৃত নিম্নমানের ডাইং কালার ব্যবহার করা হচ্ছে। বস্তুত বাজারের মাছ-মাংস, দুধ-ডিম ও ফলমূল থেকে শুরু করে এমন কোনো জিনিস নেই, যার মধ্যে ক্ষতিকর কেমিকেল ও ভেজাল মেশানো হচ্ছে না। রাজশাহীর পুঠিয়ায় ভেজাল প্রসাধন সামগ্রী তৈরির কারখানা গড়ে ওঠা এরই ধারাবাহিকতা মাত্র।

আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ও সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্য ও ওষুধে ভেজাল ও রাসায়নিক প্রয়োগের বিস্তার রোধ করার পাশাপাশি সরকার ভেজাল প্রসাধন সামগ্রী তৈরি ও বিপণনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে- এটাই প্রত্যাশা।

Leave a comment