রাজশাহী মেডিকেল কলেজ বহুল প্রত্যাশিত বিশ্ববিদ্যালয় হলো

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মেডিকেল কলেজকে রাজশাহীবাসীর বহুল প্রত্যাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, রামেক এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়। এর নাম হবে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। রামেক হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে এক সভায় এ ঘোষণা দেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামী জুনের মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার আনুষ্ঠানিক সকল প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অথচ এখানে বার্ন ইউনিট থাকবে না, এমনটি হতে পারে না। তাই আগামী সাত দিনের মধ্যে এ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট চালু করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জাম সাত দিনের মধ্যেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে দেয়া হবে।

অপরদিকে হাসপাতালে নতুনভাবে চালু হওয়া ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) যেসব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির এখনও সঙ্কট রয়েছে একই সময়ের মধ্যে সেগুলোও পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অকেজো হয়ে পড়ে থাকা যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে নতুন সরঞ্জামাদি সংযোজন এবং সংস্কার কাজের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দেরও ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এর আগে বেলা ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মিলনায়তনে চিকিৎসক, কর্মচারী ও হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সাথে মতবিনিময় করেন মন্ত্রী। সেখানে তিনি চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, কথায় কথায় ধর্মঘট ডাকবেন না। ধর্মঘট ডাকলে একজন রোগী মারা গেলে দায়িত্ব নেবে কে?

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সত্যিকার অর্থে যদি আপনি একজন চিকিৎসক হন, তাহলে ধর্মঘট করবেন না। রোগীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকেরও ভুল হতে পারে। তাই বলে রোগীরা তাদের আঘাত করবে, এটা ঠিক না। মতবিনিময়সভায় হাসপাতালের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, হাসপাতালের উন্নয়ন অবশ্যই করবো, কিন্তু কোনো দুর্নীতি সহ্য করবো না। কেউ দুর্নীতি করলে অ্যাকশন নেব। কেউ তদবির করবেন না। তদবির করলে সব সুবিধা বন্ধ করে দেব।

হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, হাসপাতালের সামনে কোনো দোকান থাকবে না। হাসপাতালের অচল সরঞ্জাম ঠিক করতে যা লাগবে, তার সবই দেয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী আরও বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে যেসব শূন্যপদ আছে সেগুলোতে অবিলম্বে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। যেসব চিকিসকদের উপজেলাগুলোতে নিয়োগ দেয়া হবে তারা তিন বছরের আগে অন্য কোথাও বদলি হতে পারবেন না। গ্রাম বা মফস্বলে থাকা চিকিৎসকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
নগরীসহ উপজেলাগুলোতে যেসব অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে তাদের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বাস্থ্যসেবাকে এগিয়ে নিতে দলবল নির্বিশেষে মন্ত্রী সবার সহযোগিতা কামনা করেন। বক্তব্যের শুরুতে মন্ত্রী রামেকের ওয়াই ফাই জোনের উদ্বোধন করেন।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সংসদ সদস্য আকতার জাহান, আয়েন উদ্দিন, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন, উপপরিচালক আসম বরকত উল্লাহ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মীর আবু রায়হান। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিউ) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরিদর্শনকালে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকরা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে কোনোভাবেই তা বরদাস্ত করা হবে না। সমাজ থেকে রাজনৈতিক ক্যানসার দূর করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দলবাজি চলবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আপনারা সেবার ব্রত নিয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করুন, সরকার আপনাদের সম্ভাব্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেবে।