স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সংস্থার (বেলা) নির্বাহী পরিচালক পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিকের অপহরণকারীদের গতকাল শনিবার পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও সন্দেহ ভাজন কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
অপহরণের ৩৫ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার রাতে কারা আবু বকরকে মিরপুরের মধ্য পাইকপাড়া আনসার ক্যাম্পের কাছে ফেলে গিয়েছিল তা শনাক্তের জন্য আশপাশ এলাকার বিভিন্ন ভবনের সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এদিকে অপহরণকারীদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর (বৃহস্পতিবার রাতে) রাজধানীর কাজীপাড়া থেকে বহনকারী সিএনজিচালক হাফিজুর রহমান গতকাল নারায়ণগঞ্জ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনা তদন্তে গঠিত উচ্চতর অনুসন্ধান টিম গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল (ঢাকা-চট্টগ্রাম লিংক রোডের ভুঁইয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে) ও আবু বকর সিদ্দিকের কর্মস্থল ফতুল্লার হামিদ ফ্যাশন পরির্দশন করেছে।
অপরদিকে আবু বকর সিদ্দিক মুক্তি পাওয়ায় তার পরিবারে স্বস্তি ফিরলেও আতঙ্ক কাটেনি। গতকালও শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা তার ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল রোডের বাসায় ভিড় করেন। বাসায় বসানো হয়েছে পুলিশ প্রহরা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, আবু বকর সিদ্দিককে অপরহণের ঘটনাটি ছিলো সুপরিকল্পিত। এটি নৈপুণ্যের সাথে ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের ব্যাপারে তিনি বলেন, আপাতত চারটি বিষয় বিবেচনায় রেখে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এক. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পেশাগত কারণ। দুই. আবু বকর সিদ্দিকের ব্যক্তিগত বিরোধ রয়েছে কি-না, তিন. সরকারকে বিব্রত করার জন্য কোনো গোষ্ঠীর চক্রান্ত কি-না। চার. মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণ।
যুগ্ম-কমিশনার বলেন, আবু বকরকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার ছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রথম চ্যালেঞ্জ। এখন অপহরণের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি (মাইক্রোবাস), অস্ত্রের বিষয়ও তদন্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি অপহরণের সাথে জড়িত সন্দেহভাজনদের তালিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া এ ঘটনা সম্পর্কে যত তথ্য পাওয়া যাবে সেগুলোও তদন্ত করে দেখা হবে। যুগ্ম-কমিশনার বলেন, কী কারণে, কারা করেছে তা খুঁজে বের করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।
আবু বকর সিদ্দিককে অপহরণের পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটির সদস্য যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, আবু বকর সিদ্দিককে অপহরণের ঘটনায় পুলিশ তার সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে তাকে উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়েছে। তিনি উদ্ধারের পর যেসব আইনগত প্রক্রিয়া রয়েছে সেগুলো সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আবু বকর উদ্ধার হলেও মামলার কার্যক্রম থেমে থাকবে না। আদালতে আবু বকরের জবানবন্দি আমলে নিয়ে পুলিশ গুরুত্বের সাথে মামলাটি তদন্ত করছে।
আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আগের বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি আগেও বলেছি, আমার স্বামীর কোনো শত্রু নেই। গার্মেন্টস নিয়ে কারো সাথে তার কোনো ধরনের বিরোধ নেই। তবে আমার ধারণা, আমার কর্মকাণ্ডে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এ ঘটনার সাথে তারাই যুক্ত থাকতে পারে। আমি আশা করি, সরকার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধী ও তাদের হোতাদের শনাক্ত করবে।
এ দিকে ঘটনা তদন্তে সংশ্লিস্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আবু বকর সিদ্দিকের দেয়া বর্ণনা অনুয়ায়ী অপহরণকারীরা তাকে কোথায় রেখেছিলো (অপহরণের পর) তা শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আবু বকর সিদ্দিককে পাইকপাড়া আনসার ক্যাম্পের কাছে ফেলে যায়। ওই এলাকার আশপাশে বেশ কয়েকটি মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি রয়েছে। ওইসব সিসিটিভিতে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেলে অপরহণকারীদের ব্যাপারে কিছু তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে।
সিএনজিচালক হাফিজুর রহমান গতকাল শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বিকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনোয়ারা বেগমের আদালতে এ জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দিতে তিনি বৃহস্পতিবার রাতে কোথায় কোন অবস্থায় সিদ্দিককে বহন করেছিলেন তার বর্ণনা দেন। আজ রোববার আবু বকর সিদ্দিকের প্রাইভেটকারচালক রিপন জবানবন্দি দেবেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম।
এর আগে অপহরণের ৩৫ ঘণ্টা পর গত বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর কলাবাগানে তল্লাশির সময় আবু বকর সিদ্দিককে পায় পুলিশ। গত শুক্রবার তিনি নারায়ণগঞ্জের আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জবানবন্দি দেন।
পুলিশ সদর দফতরের গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল দুপুরে ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকার অপহরণের ঘটনাস্থল ও ফতুল্লার দাপায় আবু বকর সিদ্দিকের মালিকানাধীন হামিদ সুয়েটার কারখানা পরিদর্শন করেছেন। কমিটির প্রধান ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মুহম্মদ মারুফ হোসেনের নেতৃত্বে অপর ৪ জন ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম, ৱ্যাব-১১’র মেজর মো. সাদেকুর রহমান, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান ও পুলিশ সদর দফতরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন। গত বুধবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের দেলপাড়া এলাকার ভুঁইয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে অপহৃত হন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক।