নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে নানামুখি পদক্ষেপ দরকার

নারী আন্দোলনের দীর্ঘ সংগ্রামের ফল বেশির ভাগ উন্নত দেশের নারীরা ভোগ করলেও এখনও অনেক দেশের বিপুলসংখ্যক নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। স্বামীগৃহে নারী নির্যাতনের বিষয়টি বহুল আলোচিত হলেও নারীর বঞ্চনার শুরু পিতৃগৃহ থেকেই। শিক্ষিত ও সচ্ছল পরিবারের কোনো নারী স্বামীগৃহে নির্যাতনের শিকার হলে যতোটা জোরালো প্রতিবাদ করতে পারেন, অশিক্ষিত ও দরিদ্র পরিবারের নারীরা তা পারেন না। নারীর নির্যাতন সহ্য করাটাই হয়ে ওঠে তাদের নিয়তি।

বস্তুত, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবহন-সর্বত্র নারীরা সহিংসতার শিকার হওয়ায় কোথাও তারা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছে না। একটি বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক ৯১টি গ্রামে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ৪৯ শতাংশ বিবাহিত নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের বিপুলসংখ্যক নারী নিজেদের অধিকার ও আত্মমর্যাদা সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নন। এসব নারী নিজের সম্ভাবনা বিশেষত সৃজনশীল দক্ষতা সম্পর্কে সচেতন নন বলে তাদের পক্ষে দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা সম্ভব হয় না। এ অবস্থার অবসানে নারীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। দেশের সব নারীকে দ্রুততম সময়ে উচ্চশিক্ষিত করার কাজটি কঠিন। এ অবস্থায় তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেয়া যেতে পারে। একজন সচেতন নারী আত্মরক্ষার পাশাপাশি সমাজ ও দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

পশ্চাৎপদ এলাকার দরিদ্র পরিবারের নারীরাই যে তুলনামূলক বেশি নির্যাতনের শিকার, এটা সহজেই অনুমান করা যায়। এ অবস্থায় পশ্চাৎপদ এলাকার দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য যতো তাত্ত্বিক আলোচনাই হোক- বাস্তবতা হলো, সমাজে প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করার মানসিকতা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। প্রতিবন্ধী নারীদের অবস্থা আরও করুণ। মানবিক মূল্যবোধের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হলে যতো কঠোর পদক্ষেপই নেয়া হোক না কেন নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে না। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।